অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরেও আরেকটা সরকার আছে: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরেও আরেকটা সরকার আছে। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
জানা যায়, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: এক বছরের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এই গোলটেবিলের আয়োজন করেছে প্রথম আলো। গোলটেবিল বৈঠকের শুরুতে রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনায় শোক জানানো হয়। এ সময় সবাই এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করেন।
বৈঠকে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এখন সরকারের নিরপেক্ষতার প্রশ্নটা বিশেষ করে দলীয় নিরপেক্ষতার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে। কারণ এখন মোটামুটি পরিষ্কার হয়েছে যে আমরা সরকার বলতে যাদের দেখি আনুষ্ঠানিকভাবে, আসলে তার ভেতরেও আরেকটা সরকার আছে। এটা এখন আর কোনো গোপন বিষয় নয়। এটা সবার কাছেই প্রকাশ্য। এখন সরকারের নিরপেক্ষতা পুনর্প্রমাণ করা...কাদম্বরীকেই করিতে হইবে।
তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী চেতনায় আমরা নতুন সরকার আনলাম। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী চেতনাকে তারা অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় ও সংস্কার প্রক্রিয়ায় প্রতিফলন করতে পারলো না। সরকারের কোনো নৈতিক অবস্থান পরিষ্কার করা নেই। সর্বজনীন মানবাধিকারের ভিত্তিতে অর্থনৈতিক বিকাশকে চিন্তা করছে এবং দুর্বল জনগোষ্ঠীর পক্ষে দাঁড়াবে, সেই দুর্বল জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে তার পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য পদক্ষেপের ভেতরে গেল না এখন পর্যন্ত। সেহেতু সংস্কারের যেটুকু সম্ভাবনা ছিল, সেই সংস্কারের সেই সম্ভাবনাটুকু গরিব মানুষ তো পরের কথা, এমনকি উৎপাদনশীল উদ্যোক্তা শ্রেণিও তার ভেতর এলো না।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দুটি মৌলিক প্রশ্ন এখন সামনে এসেছে। একটি হলো অন্তর্বর্তী সরকার। অর্থাৎ তার শুরুও আছে এবং একটা সুনির্দিষ্ট সীমিত সময়ের পরে তার শেষ আছে। এই জিনিসটাকে সামনে নিয়ে আসার এখন সময় হয়েছে যে এটা একটা অনন্তকালীন সরকার নয়, এটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাহলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি হয়, তাহলে প্রথমে এখন যে দুটি প্রশ্ন সবাইকে বিচলিত করছে, অন্তত আমাকে করে- এক নম্বর প্রশ্ন হলো সরকারের নিরপেক্ষতা। অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা এখন একটি বড় বিষয় হিসেবে সামনে এসেছে। একটা সরকারের নিরপেক্ষতা বললে তার মৌল আদর্শগত নিরপেক্ষতার কথা বলা হয় না। কারণ সে পিছিয়ে পড়া মানুষের পক্ষে থাকবে এবং এটার একটা সংকট সৃষ্টি হয়েছে, যেহেতু দুর্বল জনগোষ্ঠীরা আরও বেশি দুর্বল বোধ করছে, অনেক বেশি বিপন্ন বোধ করছে। একটা স্বৈরাচারী সরকারের আমলে যে রকমভাবে তাদের প্রতি অত্যাচার বা তাদের প্রান্তিকীকরণ হয়েছে, ঠিক একই রকমভাবে নারী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, জাতিগত সংখ্যালঘু...। লিঙ্গ বৈচিত্র্যের কথা তো বলাই যাচ্ছে না। এটা আরেক সমস্যা হয়ে গেছে।
অন্তর্বর্তী সরকার চাইলেও এখন একটা ভালো নির্বাচন করতে পারবে কি না- এ প্রশ্ন রেখে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আপস, আঁতাত বা সিট ভাগাভাগির নির্বাচন নয়, একটা প্রকৃত নির্বাচন। যেখানে মানুষ ভোট দেওয়ার পর শান্তিতে থাকবে। শুধু ভোটের দিন নয়, ভোটের পরের দিনও সে থাকবে। সেহেতু দ্বিতীয় প্রশ্নটা দাঁড়িয়েছে এটা এবং এই প্রশ্নটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই নির্বাচন করতে হলে অবশ্যই শান্তিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা খুব ভালো বুঝছি যে প্রশাসনিক ক্ষমতা ও প্রচলিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে এটা করা সম্ভব নয়। সেনাবাহিনীর বৃহত্তর অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে এটা করা সম্ভব নয়। আমি সাধারণভাবে বুঝি যে তিন-চার মাসের জন্য তাদের মাঠে থাকতে হবে এবং তারা আসার পরেই প্রথমে অস্ত্র উদ্ধারের কাজটা করতে হবে। একই রকমভাবে হয়তো স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যুক্তভাবে তারা কী করবে...।
সে ক্ষেত্রে ইন এইড টু সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অথবা স্ট্রাইকিং ফোর্সের বাইরে গিয়ে কিছু একটা হতে হবে এবং সেনাবাহিনীর আরেকটু প্রত্যক্ষ এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ লাগবে বলে উল্লেখ করেন দেবপ্রিয়।
মন্তব্য করুন