যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে গরুর মাংসের দাম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রে গরুর মাংসের দামে রেকর্ড ছুঁয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দামে এমন ঊর্ধ্বগতি থেকে খুব শিগগির রেহাই পাচ্ছেন না ক্রেতারা। যদিও কয়েক বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্রে গরুর মাংসের দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। কারণ গরুর সরবরাহ কম।
সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দামে রেকর্ড ঊর্ধ্বগতি হয়েছিল। তবে মারাত্মক বার্ড ফ্লু নিয়ন্ত্রণে আসার পর ডিমের সরবরাহ বাড়ায় দাম কমেছে। কিন্তু এবার রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে গরুর মাংসের দাম। এবার মাংসের দাম কমানো ডিমের তুলনায় অনেক কঠিন হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত গরুর মাংসের দাম প্রায় ৯ শতাংশ বেড়ে প্রতি পাউন্ডে পৌঁছেছে ৯.২৬ ডলার। জুন মাসের ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) অনুযায়ী, গত এক বছরে স্টেকের দাম বেড়েছে ১২.৪ শতাংশ এবং গরুর কিমার দাম বেড়েছে ১০.৩ শতাংশ।
ওয়েলস ফারগোর প্রধান কৃষি অর্থনীতিবিদ মাইকেল সোয়ানসন বলেন, গরুর মাংস ডিমের তুলনায় অনেক বেশি জটিল। ডিমের বাজার ‘করপোরেট আমেরিকার’ মতো নিয়ন্ত্রিত হলেও গরুর বাজার এখনো ‘ওয়াইল্ড ওয়েস্ট’-এর মতো।
গরুর মাংসের দাম বাড়ছে এক দশকের দীর্ঘ সংকটের ধারাবাহিকতায়—যার মধ্যে রয়েছে পশুর সংখ্যা কমে যাওয়া, দীর্ঘমেয়াদি খরা এবং আমদানিকৃত মাংসের ওপর নির্ভরতা, যদিও দেশজ চাহিদা স্থির থেকেছে।
টাইসন ফুডসের সিইও ডনি কিং বলেন, আমাদের অভিজ্ঞতায় এখনকার বাজার পরিস্থিতি গরুর মাংসের জন্য সবচেয়ে কঠিন।’ আমেরিকান ফার্ম ব্যুরো ফেডারেশন (এএফবিএফ) জানায়, বর্তমানে মার্কিন গবাদি পশুর সংখ্যা গত ৭৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। অনেক খামারি লাভের অভাবে গরু পালনের পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন।
আরও পড়ুনএএফবিএফর অর্থনীতিবিদ বের্ন্ট নেলসন বলেন, এই রেকর্ড মূল্যের মধ্যেও গরু পালনকারীদের মুনাফা খুবই কম। কারণ খাদ্যসহ অন্যান্য উৎপাদন খরচ অনেক বেশি।’ খরার কারণে ফুরিয়ে গেছে প্রাকৃতিক চারণভূমি, ফলে খামারিরা এখন গরুকে ঘাসের পরিবর্তে দামি খাদ্য খাওয়াতে বাধ্য হচ্ছেন।
অর্থনীতিবিদ সোয়ানসন জানান, বর্তমানে আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া ও ব্রাজিল থেকে আমদানিকৃত গরুর মাংস যুক্তরাষ্ট্রের মোট ভোগের প্রায় ৮ শতাংশ পূরণ করছে। অন্যদিকে ২০২৫ সালের মে মাসে গরুর মাংস রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় ২২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। সোয়ানসন বলেন, এটা এক বিশাল পরিবর্তন। কয়েক বছর আগেও আমরা আমদানি-রপ্তানিতে ভারসাম্য বজায় রেখেছিলাম। কিন্তু এখন আমেরিকার ভোক্তারা বিশ্বের সবচেয়ে দামী গরুর মাংস খাচ্ছে আর বাকি বিশ্ব আমাদের চাহিদা পূরণ করতে আগ্রহী।
মূল্য নিয়ন্ত্রণে কিছু খুচরা বিক্রেতা অভিনব পদক্ষেপ নিচ্ছে। গত মাসে ওয়ালমার্ট কানসাসের ওলাথে তাদের নিজস্ব গরুর মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা চালু করেছে। এতে তারা সরাসরি সরবরাহকারীদের সঙ্গে কাজ করতে পারবে, ফলে মধ্যস্বত্বভোগী বাদ পড়বে এবং খরচ কমবে।
ওয়ালমার্টের ফুড বিভাগের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট জন ল্যানি বলেন, এই কারখানা ওয়ালমার্টের মালিকানাধীন প্রথম পূর্ণাঙ্গ ‘রেডি-টু-কুক’ গরুর মাংস প্রক্রিয়াকরণ সুবিধা। এটি আমাদের গ্রাহকদের জন্য স্বচ্ছতা, মান এবং মূল্য নিশ্চিতে সাহায্য করবে।
টেক্সাস এঅ্যান্ডএম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ ডেভিড অ্যান্ডারসন বলেছেন, প্রযুক্তির মাধ্যমে বড় আকৃতির গরু উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়লেও ২০২০ সালে শুরু হওয়া দীর্ঘ খরার কারণে দাম বেড়েছে পশু খাবারের। এর পর থেকে খরা অব্যাহত রয়েছে পশ্চিমাঞ্চলজুড়ে। খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধিতে এমনিতেই স্বল্প লাভে পরিচালিত খামারগুলো চাপে পড়ে যায়। ফলে অনেক খামারি তাঁদের প্রজননক্ষম গরু জবাই করে দেন। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে বাজারে গরুর মাংসের জোগান বাড়লেও কমে যায় গরুর সংখ্যা।
সূত্র : সিএনএন, এপি।
মন্তব্য করুন