তানিয়া নাজনীন একজন টেকসই ফ্যাশন উদ্যোক্তা

নিজের আলোয় ডেস্ক: একজন টেকসই ফ্যাশন উদ্যোক্তা তানিয়া নাজনীন। যিনি এজো ফ্রি কেমিক্যাল এবং ন্যাচারাল ডাই দিয়ে নিজস্ব ডিজাইনে পোশাক তৈরি করেন। গড়ে তুলেছেন ‘তানিস বাংলাদেশের’ নামে ফ্যাশন হাউস।
তানিয়া নাজনীন পড়াশোনা করেছেন ইকোনমিক্স বিষয়ে কারণ তার বাবার ইচ্ছা ছিল তিনি ইকোনমিক্স নিয়ে পড়বেন। বাবার আশা পূরণ করতে ইকোনমিক্স নিয়ে পড়া হলেও তার ইচ্ছে ছিল ফ্যাশন ডিজাইনার হবেন। তাই গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করার পর তিনি ফ্যাশন ডিজাইনিং কোর্সের ওপর ডিপ্লোমা করেন।
তানিস বাংলাদেশ তৈরির পেছনের গল্প সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সালটা ২০০৭ যখন তিনি টাঙ্গাইলে ঘুরতে যান তখন তিনি প্রথম ব্রোথেল সম্পর্কে জানতে পারেন। ব্রোথেল কী এ বিষয়ে তার কোনো ধারণা ছিল না, পরে এ বিষয়ে জানার পর তিনি মর্মাহত হন। নারীরা এ পথে এসে টাকা উপার্জন করেন বিষয়টা তিনি সহজভাবে নিতে পারেননি। ঠিক তখনই তিনি চিন্তা করেন তাদের এ জায়গা থেকে সরিয়ে আনার জন্য কিছু করবেন কিন্তু কী করবেন সেটা তখন তিনি জানতেন না। ঠিক এ জায়গা থেকেই ‘তানিস বাংলাদেশ’ তৈরির যাত্রা শুরু হয়।
তানিয়া নাজনীন কিছু মায়েদের তার কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন, যারা সমাজে নিজেদের জন্য কিছু করবে এবং আর যাই হোক তারা নিজেরা উপার্জন করে সম্মানের সঙ্গে বাঁচবে। তিনি সব সময় পিছিয়ে পড়া নারীদের তার কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে চেয়েছেন। তাই তিনি ঋষি পল্লির নারীদের তার কাজে সম্পৃক্ত করেছেন। এ ছাড়া তিনি গ্রামের পিছিয়ে পড়া নারীদের নিয়ে কাজ করেন। যাতে তারা তাদের কাজের মাধ্যমে আয় করতে পারেন।
নাজনীন মূলত এজো ফ্রি কেমিকেল ও ন্যাচারাল ডাই দিয়ে তার পণ্য তৈরি করেন। শাড়ি, কামিজ, কুর্তি, কাতুয়া, শ্রাগ, জ্যাকেট ব্যাগ, বেডশিট ইত্যাদি তৈরি করেন। তার তৈরি করা পণ্যগুলো অস্ট্রেলিয়া, লন্ডন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন জায়গায় তিনি পাঠিয়ে থাকেন।
শুরুতে তিনি ১২ হাজার টাকা দিয়ে তার বিজনেসের যাত্রা শুরু করেছিলেন, বর্তমানে তিনি মাসে লক্ষাধিক টাকার কাজ করেন। নাজনীনের উদ্যোক্তা হওয়ার শুরুর যাত্রা তেমন মসৃণ ছিল না। তবুও তিনি হাল ছাড়েননি, প্রতিকূলতার মাঝে লড়াই করেও তিনি উদ্যোক্তা হওয়ার মতো কঠিন কাজকে বেছে নিয়েছেন। ২০২৩ সালে তিনি সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছিলেন। তার ফেসবুক পেজ হ্যাক হয়ে যাওয়ার ফলে তার ব্যবসায় অনেক ক্ষতি হয় কিন্তু এ উদ্যমী নারী হাল ছাড়েননি।
আরও পড়ুনহোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়ার পর আবারও তিনি ঘুরিয়ে দাঁড়িয়েছেন। এরপর তিনি গাজীপুরে তার প্রোডাকশন হাউস তৈরি করেছেন। যেখানে তিনি পরিবেশবান্ধব কেমিক্যাল দিয়ে তার তৈরি করা পোশাক ডিজাইন করে থাকেন। নাজনীনের ডিজাইন করা পোশাকের মধ্যে অন্যতম হলো খাদি কাপড়ের তৈরি শ্রাগ, যা তিনি টাই ডাই দিয়ে নিজস্ব ডিজাইনে তৈরি করেছেন। প্রতিটি প্রোডাক্ট তার নিজস্ব ডিজাইনে করা।
পোশাকের ওপর স্বপ্ন বোনা এ নারীর ১২০ জন সদস্যের টিম রয়েছে যারা গ্রামীণ পিছিয়ে পড়া নারীদের প্রশিক্ষণ দেন। হাতের কাজের প্রোডাক্টগুলো বানানোর জন্য তিনি গ্রামীণ নারীদের বাসায় বসে কাজ করার জন্য সময় বেঁধে দেন। সেভাবেই তারা কাজ শেষ করে সেগুলো জমা দেন। নাজনীন মূলত জিরো ওয়েস্ট নিয়ে কাজ করেন। কাজ করার সময় বেঁচে যাওয়া টুকরা কাপড়গুলো দিয়ে তিনি জ্যাকেট ও কাঁথা তৈরি করেন। এতে করে লোকসান হওয়ার যে বিষয়টা থাকে সেটা নতুন প্রোডাক্ট তৈরির মাধ্যমে পুষিয়ে ফেলেন।
তার এ ব্যতিক্রমী কাজের জন্য তিনি এ বছর ম্যানচেস্টার ট্রেড মিশনে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশ থেকে তিনি একমাত্র ক্লোদিং ব্র্যান্ড হিসেবে প্রেজেন্ট করেছিলেন। পুরো বিশ্ব থেকে সেখানে ৫০ জন ডেলিগেটস ছিলেন যার মধ্যে তিনি সবচেয়ে ইয়াঙ্গেস্ট উদ্যোক্তা ছিলেন।
তানিয়া নাজনীন স্বপ্ন দেখেন একদিন তার ‘তানিস বাংলাদেশ’কে এমন জায়গায় নিয়ে যাবেন যেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই একসঙ্গে কাজ করবে যেখানে সবাই আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচবে।
তিনি নতুন নারী উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘যারাই এ কাজে যুক্ত হতে চান তাদের অবশ্যই একটা প্ল্যান নিয়ে এগোতে হবে। প্রথমে গোল সেট করতে হবে তারা কী নিয়ে কাজ করতে চান, কাদের নিয়ে কাজ করতে চান। জীবনে অনেক চড়াই-উতরাই আসবে তবে সেসবকে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার দঢ় প্রত্যয় নিয়ে চলতে হবে।
মন্তব্য করুন