ভিডিও শনিবার, ১৬ আগস্ট ২০২৫

আইনি জটিলতায় বন্ধ টেকা সেতুর নির্মাণকাজ, দুর্ভোগে লাখো মানুষ

আইনি জটিলতায় বন্ধ টেকা সেতুর নির্মাণকাজ, দুর্ভোগে লাখো মানুষ

যশোরে আইনি জটিলতায় দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে টেকা সেতুর নির্মাণকাজ। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে রয়েছে মণিরামপুর ও অভয়নগর উপজেলার লাখ লাখ মানুষ।

যশোরের মণিরামপুর ও অভয়নগর উপজেলার সীমান্তবর্তী টেকারঘাটে অবস্থিত এই সেতুটি দিয়ে দুই উপজেলার যোগাযোগব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে ১৯৮০ দশকে টেকা নদীর ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। দীর্ঘদিনের সেই পুরাতন সেতু ভেঙে ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর একই স্থানে নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।

সেতু নির্মাণকাজ চলমান থাকা অবস্থায় সেতুর উচ্চতা কম থাকায় এবং নদীবন্দর কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র না থাকার কারণে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ ২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন। যথাযথ নিয়ম মেনে কাজ করতে হাইকোর্ট নির্দেশনা জারি করেন। যে কারণে ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে দেয়।

দেখা যায়, টেকা সেতুর নির্মাণকাজ প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডসহ কোনো মালামাল সেখানে নেই। অসমাপ্ত সেতুর পাশে একটি কাঠের তৈরি বিকল্প সেতু দিয়ে ছোট যানবাহন ও মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। যেকোনো মুহূর্তে সেতুটি ভেঙে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর খুলনা বিভাগীয় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৮ কোটি ৫৫ লাখ ৭৩ হাজার টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে দরপত্র আহ্বান করা হয়।

কাজটি সাড়ে ১১ ভাগ নিম্নদরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ (প্রা.) লি. এবং শামীম এন্টারপ্রাইজ (জেভি) কাজটি পায়। কাজটি ৭ কোটি ৫৭ লাখ ২৮ হাজার ৫০৭ টাকায় চুক্তি করেন। 

কার্যাদেশ অনুযায়ী, ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর কাজটি শুরু হয়ে ২০২৩ সালের ৭ মার্চ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজ যথা সময়ে শেষ না হওয়ায় ২০২৪ সালে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বর্ধিত করা হয়। 

সূত্র জানায়, সেতুর কাজটি প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।

ঠিকাদারকে এ পর্যন্ত ৬ কোটি ৩৪ লাখ ২২ হাজার ৩১৭ টাকা বিল দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

সেতু সংলগ্ন টেকেরেঘাট বাজারের ওষুধ বিক্রেতা দেবু চন্দ্র দাস জানান, আইনি জটিলতায় সেতুর কাজ বন্ধ রয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে দুই উপজেলার মানুষ। সেতু চালু থাকার সময়ে আমার দোকানে ভালো বিক্রি হতো। এখন একেবারে কম হচ্ছে। এভাবে চললে বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়বে।

পাচাকড়ি গ্রামের ইজি বাইকচালক কেরামত আলী গাজী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ব্রিজ নির্মাণের কাজ বন্ধ রয়েছে। আমরা যাত্রী নিয়ে বিকল্প পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করি। ওই পথে আসার পর যাত্রী নামিয়ে পার হতে হয়। যেকোনো মুহূর্তে কাঠের তৈরি বিকল্প ব্রিজটি ভেঙে পড়তে পারে।

অভয়নগর উপজেলার পায়রা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. ফিরোজ আলম বলেন, সেতু নির্মাণের সময় যাতায়াতের সুবিধার্থে একটি বিকল্প সড়ক নির্মাণ করা হয়। যা অত্যন্ত নিম্নমানের হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। বর্তমানে বিকল্প সেতুটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

মনিরামপুর উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আক্তার ফারুক মিন্টু জানান, সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় দুই উপজেলার বাসিন্দাদের সীমাহীন কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে। দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি। 

রিটকারী ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, ছয় মাসের মধ্যে উচ্চতা ও প্রশস্ততা বৃদ্ধি করে কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। আদালতের দেওয়া সময় শেষ হয়ে গেছে। অথচ এলজিইডি কিছুই করেনি। এখন এলজিইডি হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে ব্যবস্থা নিলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ (প্রা.) লি. এবং শামীম এন্টার প্রাইজের (জেভি) প্রতিনিধি মো. মতিয়ার রহমান জানান, আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় কাজ বন্ধ রয়েছে। নির্দেশ পেলে কাজ শুরু করবো।

মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না জানান, শুনেছি মামলার কারণে কাজ বন্ধ আছে। মামলা শেষ না হলে কিছু বলা যাচ্ছে না।

যশোর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ মাহবুবুর রহমান বলেন, মামলাজনিত কারণে সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছ। সমস্যার সমাধান হলে পুনরায় সেতু নির্মাণকাজ শুরু হবে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সাংবাদিক তুহিন হত্যায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে বগুড়ায় মানববন্ধন

রংপুরে দুই শিশুকে হত্যার পর বালি চাপার ঘটনায় গ্রেফতার ১

বগুড়ার সোনাতলায় নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি নিম্নাঞ্চলের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

বগুড়ায় কাঁচির আঘাতে অন্ত;সত্বা গৃহবধূ গুরুতর আহত স্বামী গ্রেফতার

“বিএনপি একমাত্র দল এদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে সব সময় আছে”

রংপুরে বাড়িতে ডাকাতি