ভিডিও সোমবার, ২৫ আগস্ট ২০২৫

দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সরকারি বরাদ্দের অর্থ প্রধান শিক্ষকের পকেটে

দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সরকারি বরাদ্দের অর্থ প্রধান শিক্ষকের পকেটে

কালাই ও ক্ষেতলাল (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি : জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার নওটিকা কেশুরতা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০ জন হতদরিদ্র শিক্ষার্থীর নামে বরাদ্দ আসা সরকারি অনুদানের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক মোজাফফর হোসেনসহ ওই বিদ্যালয়ের তিনজনের বিরুদ্ধে। সেই সাথে বিদ্যালয় সংস্কারের অর্থও নয়ছয় করা হয়েছে।

এসব ঘটনায় অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও অন্য শিক্ষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। জেলা শিক্ষা অফিসার বলছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষার মান উন্নয়ন ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহায়তার উদ্দেশ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পারফরমেন্স বেজড গ্র্যান্টস ফর সেকেন্ডারি ইন্সটিটিউশন প্রকল্পের অধীনে নওটিকা কেশুরতা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে ৫ লাখ টাকা অনুদান পায়।

৪ লাখ টাকা বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজ আর ১ লাখ টাকা হতদরিদ্র ২০ জন শিক্ষার্থীর মাঝে সমভাবে বন্টন করতে হবে। দিতে হবে বিদ্যালয়ের ২০জন হতদরিদ্র শিক্ষার্থীকে ৫ হাজার টাকা করে। কিন্তু তা না করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোজাফফর হোসেন, সহকারী শিক্ষক ফরহাদ হোসেন ও অফিস সহকারী উত্তম মিলে ২০ জন শিক্ষার্থীর নিকট থেকে চেক বইয়ের পাতায় স্বাক্ষর নিয়ে নিজেরাই ব্যাংক থেকে শিক্ষার্থীদের ১ লাখ টাকা উত্তোলন করেন এবং প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ৫ হাজারের পরিবর্তে কাউকে ১ হাজার আবার কাউকে দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা করে দিয়ে বাকি অর্থ ভাগবাটোয়ারা করে নেন।

টাকা কম পাওয়া একধিক শিক্ষার্থী জানায়, প্রত্যেকের নামে ৫ হাজার টাকা করে চেকের পাতায় স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের দেওয়া হয়েছে এক থেকে দেড় হাজার টাকা। বিষয়টি জানার পর অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষককে টাকা কম দেওয়ার বিষয় জানাতে গেলে প্রধান শিক্ষক উল্টো অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের হুমকি দেন।

পরবর্তীতে ওই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ফরহাদ হোসেন ও অফিস সহকারি উত্তম বাবু এসব অভিভাবকদের বাড়ি গিয়ে ভয়ভীতিও দেখিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, টাকা দেওয়ার সময় প্রধান শিক্ষক, ফরহাদ স্যার ও অফিস সহকারি উত্তম বাবু বলেছে, কেউ যদি জিজ্ঞেস করে কত টাকা পাইছো, তখন বলবা ৫ হাজার টাকা পাইছি। নবম শ্রেণীর আরেক শিক্ষার্থী বলে, যারা ফরহাদ স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়ে তারাই মুলত ওই তালিকায় স্থান পেয়েছে, আর তাদের নামেই বরাদ্দ আসছে।

আরও পড়ুন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিদ্যালয়ের একজন সহকারি শিক্ষক বলেন,‘শুধু শিক্ষার্থীদের অনুদানের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় শেষ নয়। বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য যে ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে, সেখানেও তারা ঘাপলা করেছে। সহকারী শিক্ষক ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আমি ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে নিয়ে আসছি এটা সত্য, তবে সবাইকে ৫ হাজার টাকা করে দিয়েছি। তাদের মধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আমি প্রাইভেট পড়াই, তারা আমাকে প্রাইভেট পড়ার টাকা দিয়েছে। ওই শিক্ষার্থীরা বাড়িতে গিয়ে সেটা না বলায় আমার বিরুদ্ধে টাকা কম দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে।’

প্রধান শিক্ষক মোজাফফর হোসেন বলেন,‘প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে আলাদা করে চেক দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক থেকে শিক্ষার্থীদের পরিবর্তে সহকারি শিক্ষক ফরহাদ হোসেনের টাকা উত্তোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয় আমার জানা নেই। টাকা কম দেওয়া হয়েছে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২/৩ জন অভিভাবক এসেছিল, শিক্ষক ফরহাদ হোসেন কয়েকজনকে প্রাইভেট পড়ান। তাদের নিকট থেকে প্রাইভেট পড়ার টাকা নিয়েছে বলে শুনেছি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (অতি.দা) কাজী মনোয়ারুল হাসান বলন,‘শিক্ষার্থীদের টাকা শিক্ষকরা ব্যাংক থেকে ওঠাতে পারেনা। এক্ষেত্রে কমের প্রশ্নই আসেনা। বিষয়টি মৌখিকভাবে শুনেছি। তবে কেউ এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারপরও একাডেমিক সুপারভাইজারকে বিষয়টি দেখার জন্য বলেছি।’

জেলা শিক্ষা অফিসার রুহুল আমিন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের টাকা কম দেওয়ার বিষয়ে শুনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রমাণ সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডাকসু নির্বাচন : লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতের দাবিতে সরব প্রার্থীরা

ডুয়েট  প্রাক্তন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এসোসিয়েসন (ডেজা)-র মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি পুনর্গঠন প্রত্যাখান

ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্রদলের ‘নির্বাচন পরিচালনা কমিটি’ গঠন

বেড়েছে জনসংখ্যা, প্রভাব পড়ছে কৃষি জমির ওপর

ঠাকুরগাঁওয়ে সাত মাসে ২২০ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু

বগুড়ার শেরপুরে আবারো কৃষকের গরু চুরি