ভিডিও মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট ২০২৫

নাটোর জেলা সমাজসেবা এডি’র বিরুদ্ধে নারী সহকর্মীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ 

নাটোর জেলা সমাজসেবা এডি’র বিরুদ্ধে নারী সহকর্মীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ। প্রতীকী ছবি

নাটোর প্রতিনিধি : নাটোরে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (এডি) শাহাদৎ হোসেনের বিরুদ্ধে সরকারি শিশু পরিবারে (বালক) কর্মরত কারিগরি প্রশিক্ষক মাকসুদা খাতুনকে যৌন হয়রানী, অশালীন কথাবার্তা বলা ও উত্যেক্তের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনা তদন্তে পাবনা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (ডিডি) রাশেদুল কবীরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার সরজমিনে বিষয়টি তদন্ত করবেন ওই কর্মকর্তা।

গতকাল রোববার সকালে নাটোর সরকারী শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক আরিফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শিশু পরিবারে কর্মরত কারিগরি প্রশিক্ষক মাকসুদা খাতুন গত ৩ জুলাই জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শাহাদৎ হোসেনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এনে লিখিত আবেদন করেন। বিষয়টি লিখিতভাবে গত ৭ জুলাই জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে জানানো হয়। পরে সেখান থেকে রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ে জানানো হলে বিষয়টি তদন্তের জন্য পাবনা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এদিকে লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শিশু পরিবারে কর্মরত কারিগরি প্রশিক্ষক মাকসুদা খাতুনকে মাঝে মধ্যেই মোবাইল ফোনে অশালিন কথা বার্তাসহ ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা বলেন ওই কর্মকর্তা। এমনকি তার কর্মস্থলে গিয়ে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তাকে ঘরে একা ডেকে কথা বলার চেষ্টা করেন। কথা বলার সময় ওই কর্মকর্তা নানাভাবে যৌন হয়রানীমূলক এবং অনেক আপত্তিকর কথাবার্তাসহ বাজে ইঙ্গিত দেন। বিষয়টি নিয়ে তাকে বার বার সর্তক করাসহ নিষেধ করা হলেও তিনি তা কর্নপাত করেননি।

এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে সরকারি শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন তিনি। এ বিষয়ে মাকসুদা খাতুন বলেন, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের এডি শাহাদৎ হোসেন তার সাথে যে আচরণ করেছেন তার যথাযথ বিচার চান। যাতে আর কোন নারীকে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়।

অভিযুক্ত এডি শাহাদৎ হোসেন এ অভিযাগ অস্বীকার করে বলেন, হেয় প্রতিপন্ন করাসহ তাকে ফাঁসাতে পরিকল্পিতভাবে এমন অভিযোগ করা হয়েছে। ওই নারীকে তিনি কখনও উত্যেক্ত বা যৌনহয়রানী করেননি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, অফিসের অভ্যন্তরীণ নানা অনিয়মের বিষয়ে প্রতিবাদের কারণেই পরিকল্পিতভাবে তার ক্ষতি বা সম্মানহানি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। পাশপাশি এ অফিস থেকে তাকে বদলি করতে এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে।

নাটোর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত হবে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবে। তদন্ত কর্মকর্তা ও পাবনা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের ডিডি রাশেদুল কবীর বলেন, বিভাগীয় কার্যালয় থেকে তিনি এ সংক্রান্ত অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সমাজসেবা কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের এডি শাহাদৎ হোসেনের বিরুদ্ধে শুধু নারী কেলেঙ্ককারীর ঘটনা নয়, তার বিরুদ্ধে অফিসের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বদলি, তদন্ত প্রতিবেদনসহ নানা অজুহাতে ঘুষ গ্রহণেরও অভিযোগ রয়েছে। জেলা কার্যালয়ে কর্মরত থাকাকালীন অনেকের কাছে ঘুষ বাবদ বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

আরও পড়ুন

টাকা না দিলে দাপ্তরিক নানা ঝামেলা করতেন তিনি। আবার বিষয়টি জানাজানি হলে আদায়কৃত ঘুষের টাকা ফেরত দিয়েছেন এমনও নজির রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার কর্মকান্ডে অফিসের অনেকেই বিরক্ত। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে শাহাদৎ হোসেন আবারও বলেন, তাকে হয়রানি করতেই বিভিন্নভাবে এসব মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ বা ফেরতের অভিযোগ সঠিক নয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, শাহাদৎ হোসেন জেলার গুরুদাসপুর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার থাকাকালীন ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল নাটোর শহরের ভবানীগঞ্জ এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে এক নারী সহকর্মীকে নিয়ে পুলিশের হাতে আটক হন। আটক ওই নারী সহকর্মী সেসময় জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের টেকনিক্যাল ইন্সট্রাক্টর পদে কর্মরত ছিলেন।

বিষয়টি নিয়ে সেসময় একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এছাড়া ওই কর্মকর্তা দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় কর্মরত অবস্থায়ও নারী কেলেঙ্ককারীর ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন। পরে সেখান থেকে তাকে নাটোরের গুরুদাপুর উপজেলায় বদলি করা হয়।

সূত্র জানায়, মাকসুদা খাতুন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার পর তিনি ঢাকায় বদলির জন্য আবেদন করেছেন। তিনি নিজেকে থাইরয়েড ও প্রোস্টাটাইটিস রোগী দাবি করে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসা সেবা গ্রহণের সুবিধার কথা উল্লেখ করে বদলির জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর গত ১১ আগস্ট লিখিত আবেদন করেন।

নাটোর সরকারী শিশু পরিবারের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন বলেন, অভিযোগের বিষয়টি তার জানা ছিল না। তবে যেহেতু অভিযোগ হয়েছে, সেটার তদন্ত হবে। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডাকসু নির্বাচনে বাড়ছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, আচরণবিধি মানা নিয়ে প্রশ্ন

২৩০ বিচারক বদলি

হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারক হলেন সারজিস আলমের শ্বশুর

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে ৬ লাখ টাকাসহ বিকাশ কর্মী নিখোঁজ

ডাকসু নির্বাচনে পোস্টার-ব্যানার নিয়ে কঠোর নির্দেশনা

কুড়িগ্রামের উলিপুর পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি গ্রেফতার