ভিডিও মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট ২০২৫

ডাকসু নির্বাচনে বাড়ছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, আচরণবিধি মানা নিয়ে প্রশ্ন

ডাকসু নির্বাচনে বাড়ছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, আচরণবিধি মানা নিয়ে প্রশ্ন

সাকিব হাসান সজীব: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে ডাকসু নির্বাচন সবসময়ই শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক চর্চার একটি বড় ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। দীর্ঘ অপেক্ষার  পর ২০১৯ সালে এই নির্বাচন হওয়ার পর ২০২৫ সালের নির্বাচন নিয়েও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় এখন উৎসবমুখর। টিএসসি থেকে শুরু করে কলাভবন, মল চত্বর, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, কার্জন হলসহ ক্যাম্পাসের প্রতিটি প্রান্তে বইছে নির্বাচনী হাওয়া।

প্রার্থীরা এক হল থেকে আরেক হলে ছুটছেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে করছেন সরাসরি যোগাযোগ, দিচ্ছেন প্রতিশ্রুতি। ক্যাম্পাসে ব্যানার-পোস্টার না থাকলেও প্রার্থীদের পদচারণায় মুখর বিশ্ববিদ্যালয়। তবে এ আনন্দঘন পরিবেশের পাশাপাশি আচরণবিধি লঙ্ঘন, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আর সমান সুযোগ না পাওয়ার অভিযোগে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে নির্বাচনপূর্ব সময়।

আচরণবিধি মানা নিয়ে প্রশ্ন:

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী, ২৫ আগস্টের আগে কোনো প্রার্থী বা প্যানেল প্রচারণা চালাতে পারবে না। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে ২৫ আগস্ট থেকে, যা চলবে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, বেশিরভাগ প্রার্থীই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আগেই প্রচারণায় নেমেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—*নির্বাচন কমিশন কি তার নির্দেশনা কার্যকর করতে পারছে?* প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠলেও প্রশাসনের দৃশ্যমান পদক্ষেপের অভাব নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে।

পাল্টাপাল্টি অভিযোগের ঝড়:

ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রায় সব বড় প্যানেলই একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছে। আচরণবিধি ভঙ্গ, রাতের বেলায় হলে প্রবেশ, নিষিদ্ধ সময়ে প্রচারণা চালানো থেকে শুরু করে সাংবাদিকদের নিয়ে হল পরিদর্শন—সবকিছু নিয়েই তৈরি হয়েছে বিতর্ক।

ছাত্রশিবিরের প্রার্থীকে ঘিরে অভিযোগ:

সংগঠনটির ঢাবি শাখার সাবেক সভাপতি ও ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। কয়েকটি প্যানেলের দাবি, তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে নিয়ে আবাসিক হলে প্রচারণা চালিয়েছেন। এটি আচরণবিধির স্পষ্ট লঙ্ঘন বলেও তারা অভিযোগ করছে। যদিও এ বিষয়ে কায়েমের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।


সবচেয়ে বেশি সমালোচনায় ছাত্রদল:

ছাত্রদল মনোনীত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খানও জিএস প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিমের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে দেখা যায় তারা সিনেট ভবনে স্লোগান দিচ্ছেন এবং রিডিংরুমে গিয়ে ভোট চাইছেন।
এ প্রসঙ্গে আবিদুল ইসলাম খান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,

> “আমার এক ছাত্র ওই হলে থাকায় আমি সেখানে গিয়েছিলাম। খাওয়া-দাওয়া শেষে সে আমাকে লাইব্রেরি দেখাতে চেয়েছিল, তাই ভেতরে গিয়েছিলাম। তখন শিক্ষার্থীরা আমাকে দেখে কুশল বিনিময় করেছে। একটি কুশল বিনিময় কি আচরণবিধি লঙ্ঘন? তাহলে তো নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের বাড়ি থেকে বের হতে না বললেই হয়।”

তার দাবি, প্রতিদ্বন্দ্বীরা রাজনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে, তাই অপপ্রচারের আশ্রয় নিয়েছে।

আরও পড়ুন

ছাত্র অধিকার পরিষদের অভিযোগ:

সংগঠনটির সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা  সংবাদ সম্মেলনে বলেন,

> “ছাত্রদল শুরু থেকেই ডাকসু নির্বাচনের পক্ষে ছিল না। আমরা ডাকসু পুনর্গঠনের দাবিতে আন্দোলন করেছি, অনশন করেছি। তারা তখন প্রশাসনের কাছে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছিল। অথচ আজ তারাই নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করছে।”

তার অভিযোগ, ছাত্রদলের প্রার্থীরা আচরণবিধি ভঙ্গ করে রিডিং রুমে গিয়ে ভোট চেয়েছে।

স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের বিতর্ক:
উমামা ফাতেমারনেতৃত্বাধীন প্যানেলের বিরুদ্ধেও সমালোচনা রয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তারা টিএসসিতে অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে এবং রাত ১টার দিকে রোকেয়া হলে প্রবেশ করেছে।
সমালোচনার মুখে ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা বিষয়টি স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন।

সমন্বিত শিক্ষার্থী ঐক্যের অভিযোগ:

ভিপি প্রার্থী জামালুদ্দিন মুহাম্মদ খালিদ অভিযোগ করে বলেন

> “একটির পর একটি আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে। অথচ প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হবে না।”

শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ: সমান সুযোগ থাকবে তো?

বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীই মনে করছেন, নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আচরণবিধি মানা না হলে নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।

তাদের মতে, “যদি বড় বড় প্যানেল নিয়ম ভেঙে চলে, ছোট সংগঠনগুলো কীভাবে সমান সুযোগ পাবে?”

ডাকসু নির্বাচন যত এগোচ্ছে, তত বাড়ছে অভিযোগের ঝড়। আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে—এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এখন সবার দৃষ্টি নির্বাচন কমিশনের দিকে। তারা কি কঠোর ব্যবস্থা নেবে, নাকি অভিযোগ-প্রতিউত্তরের মধ্যেই ক্যাম্পাসের এই ভোটযুদ্ধ চলবে?

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডাকসু নির্বাচনে বাড়ছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, আচরণবিধি মানা নিয়ে প্রশ্ন

২৩০ বিচারক বদলি

হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারক হলেন সারজিস আলমের শ্বশুর

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে ৬ লাখ টাকাসহ বিকাশ কর্মী নিখোঁজ

ডাকসু নির্বাচনে পোস্টার-ব্যানার নিয়ে কঠোর নির্দেশনা

কুড়িগ্রামের উলিপুর পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি গ্রেফতার