অন্তবর্তী সরকার কখনই ভুলে যায় না একটি অভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে তারা দায়িত্ব নিয়েছে- উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ বলে মন্তব্য করেছেন সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। তিনি বলেন, আমি যখন এ কথাটা বলি তখন অনেকে কষ্ট পান। কারণ আমি সরকারেরই অংশ। তবে সত্যটা যদি স্বীকার না করি তাহলে আমরা শুধরাবো কি করে? আজ সোমবার (২৫ আগস্ট) বগুড়ায় নাগরিক অধিকার ও জলবায়ু ন্যায্যতা শীর্ষক বেসরকারি সংস্থা লাইট হাউজের নেওয়া একটি প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা।
উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, বাংলাদেশ বড্ড বেশি রাজনীতি দ্বারা পরিচালিত এবং জর্জরিত। যারা ক্ষমতায় আসেন তারা দেশের মঙ্গল চাইলেও যাদের সাথে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা তাদের নির্মুল করার চেষ্টা করেন। দেশের মানুষ অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে অনেক কিছু প্রত্যাশা করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক ধরনের রাজনীতিতে দেশটা আমাদের খন্ড-বিখন্ড হয়ে গেছে। তাই মানুষ আমাদের কাছে মিনতি করে বলেন আপনারা থাকতে থাকতে আমাদের দাবিগুলো পূরণ করে দিয়ে যান। এরপরে তো হবে না।
ক্ষমতা কখনও দীর্ঘস্থায়ী নয়, খুবই ক্ষনিকের উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা দায়িত্ব পেয়েছি ক্ষমতা নয়। দায়িত্ব পাওয়া মানে কাজ করার অধিকার পাওয়া যার মাধ্যমে মানুষের সেবা করা হয়। আমরা খুবই অল্প সময়ের জন্য কাজ করার এই দায়িত্ব পেয়েছি। দীর্ঘ সময়ের অপশাসন দ্বারা সৃষ্ট সমস্যা দেড় বা দুই বছরে সমাধান করা সম্ভব নয়।
শারমীন এস মুরশিদ বর্তমান প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদেরকে যত্নসহকারে পরিচর্যা করার আহবান জানিয়ে বলেন, আগের প্রজন্মগুলোর সাথে এদের কোনো মিল নেই। এদের দুঃসাহস-তারা মরণকেও ভয় পায় না, জীবনকেও ভয় পায় না। এ রকম একটি প্রজন্মকে নিয়ে অসাধ্য সাধন করা যায় এবং সেই স্বপ্নটাই আমাদের তাদেরকে দেখানো এবং তাদেরকে সেই জায়গায় এগিয়ে নেওয়া উচিত।
তিনি আরও বলেন, অন্তবর্তী সরকার কখনই ভুলে যায় না যে একটি বড় অভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে তারা দায়িত্ব নিয়েছে। যে অভ্যূত্থানে শতাধিক শিশু শহিদ হয়েছে। সন্তান হারার শূন্যতা ১০ লাখ বা ৩০ লাখ টাকা টাকা দিয়ে পূরণ হবে না। পূরণ হওয়ার জন্য দেওয়াও হয়নি। তাদের এই অর্থ দেওয়া হয়েছে যেন তাদের কিছুটা কষ্ট লাঘব হয়।
আরও পড়ুনউপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ একাত্তর এবং চব্বিশ প্রসঙ্গে বলেন, আমি দুটোকেই দেখি আমার ন্যায্যতার আকাঙ্খা, আমার গণতন্ত্রের তৃষ্ণা এবং সমতার স্বপ্ন এবং বৈষম্যের নিষ্ঠুর হাত থেকে বাঁচার একটি চেষ্টার জন্য এবং আমরা সেই লড়াইটাই লড়ছি। কিন্ত গণতন্ত্র এখনও আমাদের আকাঙ্খার বাইরেই রয়ে গেছে। তিনি জুলাই যোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে বলেন, একটি অপশাসনকে শেষ করে যখন দেশ গঠনের কাজ চলছে তখন শিক্ষা, দীক্ষা, সহনশীলতা সব থাকতে হবে।
বেসরকারি সংস্থা লাইট হাউস আয়োজিত নাগরিক অধিকার ও জলবায়ু ন্যায্যতা প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা, সিভিল সার্জন ডা. একেএম মোফাখখারুল ইসলাম, সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. রকনুল হক, জেলা শিক্ষা অফিসার মো. রমজান আলী আকন্দ, জেলা কৃষি কর্মকর্তা সোহেল মো. শামসুদ্দীন ফিরোজ, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর বগুড়ার উপ-পরিচালক (অ. দা) তাঞ্জিমা আখতার, বগুড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি রেজাউল হাসান রানু, সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার সাধারণ সম্পাদক এসএম আবু সাঈদ, লাইট হাউসের নির্বাহী প্রধান হারুণ অর রশীদ, সভাপতি হাবিবা বেগম, তহুরুননেছা মহিলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা হাকিম, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য এবং সরকারি কৌঁশুলী এড. শফিকুল ইসলাম টুকু, বেসরকারি সংস্থা স্বপ্ন’র নির্বাহী পরিচালক জিয়াউর রহমান, যশোরের অগ্রণী মহিলা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক অনুপমা মিত্র, সিডিএস’র নির্বাহী পরিচালক আব্দুল খালেক, প্রতিবন্ধী সেবা কেন্দ্রের প্রতিবন্ধী কর্মকর্তা মর্জিনা আখতার, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বগুড়ার সমন্বয় কমিটির সদস্য এড. ইজাজ আল ওয়াসী জ¦ীম, রাকিবুল ইসলাম, ফান্ড ম্যানেজমেন্ট এক্সপার্ট আজিজা আসফিন পিউ, নাগরিক অধিকার ও জলবায়ুর ন্যায্যতা প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. মুশফিকুর রহিমসহ বিভিন্ন বেসরকারি ও সরকারি সংস্থার কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।
পরে লাইট হাউজ কার্যালয়ে বিভিন্ন জেলার বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে মত বিনিময় করেন উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
মন্তব্য করুন