ভুয়া জাতীয় পরিচয়পএে পাসপোর্ট করতে এসে রোহিঙ্গা নারীসহ আটক ২

নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আবারও ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে পাসপোর্ট করতে এসে ধরা পড়লেন এক রোহিঙ্গা নারী। এনআইডি ও অন্যান্য কাগজপত্র জমা দিলেও শেষ পর্যন্ত বায়োমেট্রিক যাচাইয়ের সময় তার আসল পরিচয় প্রকাশ পায়। এসময় আটক নারীর স্বামী পরিচয় দেওয়া বাংলাদেশি যুবক মেজবাহকেও আটক করা হয়।
আজ বুধবার (২৭ আগস্ট) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে তাদের আটক করা হয়।
জাতীয় পরিচয়পত্রে আটক নারীর নাম হাসিনা (২৯)। পরিচয়পত্রে বাবার নাম উল্লেখ করা হয়েছে জালাল আহমদ এবং মায়ের নাম আমিনা খাতুন। ঠিকানা দেওয়া হয়েছে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের দক্ষিণ হ্নীলা মৌজার মোচনী গ্রামে ১০৪৮ নম্বর বাড়ি।
পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা জানান, হাসিনা পাসপোর্ট করতে গেলে প্রথমে তার কাগজপত্র গ্রহণ করা হয়। সব কাগজপত্র দেখে মনে হচ্ছিল ঠিক আছে। তবে দূরের জেলা হওয়ায় এবং কথা বার্তায় সন্দেহ হওয়ায় বায়োমেট্রিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট মেশিনে আঙুল রাখার পরই দেখা যায়, তার ফিঙ্গার রোহিঙ্গা ডাটাবেসে আগে থেকেই সংরক্ষিত।
রোহিঙ্গা ডাটাবেজে তার আসল নাম মিনারা (৩৫)। তার বাবার বাম বদুরুস মিয়া। তিনি ২০১৭ সালের ১০ আগস্ট বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। তার রোহিঙ্গা রেফারেন্স নম্বর 14020171228153656।
নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, গত তিন মাসে আমরা আরও ৩ জনকে আটক করেছি। যারা ভুয়া এনআইডি দিয়ে পাসপোর্ট করতে আসে তারা ধরা পড়ে। কারণ ফিঙ্গারপ্রিন্টে ফাঁকফোকর নেই। যারা রোহিঙ্গা নিবন্ধিত, তারা ধরা পড়েই যাবে।
আরও পড়ুনপাসপোর্ট অফিসে একজন কর্মকর্তার ভাষ্য, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জে কয়েকটি বড় দালাল চক্র সক্রিয়। এরা বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগসাজশ করে রোহিঙ্গাদের জন্মনিবন্ধন বানায়। এরপর সেই কাগজ দিয়ে এনআইডি করে, আবার পাসপোর্ট অফিসে নিয়ে আসে।
তবে প্রশ্ন উঠছে—ধরা পড়া রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা কতটা নেওয়া হচ্ছে? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কেবল আটক দেখিয়ে পরে বিষয়টি আর খোঁজ নেওয়া হয় না। ফলে দালাল চক্র আগের মতো সক্রিয় থেকে যাচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক শামীম আহমদ বলেন, ঘটনার পরপরই হাসিনাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আমাদের দপ্তর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের আটকের ক্ষেত্রে আমরা কোনো প্রকার ছাড় দিচ্ছি না। বিষয়টি সরকারের কঠোর নজরদারিতে রয়েছে। আমরা নিয়মিতই অভ্যন্তরীণ তদারকি বাড়াচ্ছি, যাতে কোনোভাবেই অবৈধভাবে রোহিঙ্গারা পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে না পারে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে খুব আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ পাসপোর্ট করতে আসেন। সেই ভিড়ের ভেতরে কারও ভুয়া বা জাল কাগজপত্র ব্যবহার করে পাসপোর্ট করতে চাওয়ার প্রবণতা আমরা থামাতে বদ্ধপরিকর। যতই কৌশল ব্যবহার করা হোক না কেন, জাতীয় পরিচয়পত্র ও অন্যান্য তথ্য যাচাইয়ের ক্ষেত্রে আমরা কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখাই না।
শামীম আহমদ জোর দিয়ে বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আমাদের সমন্বয় জোরদার করা হয়েছে। যেকোনো সন্দেহজনক আবেদনপত্র সঙ্গে সঙ্গে যাচাই করা হচ্ছে। ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে কেউ পাসপোর্ট করতে চাইলে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে এবং আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করা হবে।
মন্তব্য করুন