আজ বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

সংস্কার দিয়েই যাত্রা শুরু হয়েছিল বিএনপি’র। দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ঘোষিত ১৯ দফা কর্মসূচিই ছিল, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংস্কার ভাবনা— এমনটিই মনে করেন বিএনপি মহাসচিব ও রাজনীতি বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে, আকাঙ্ক্ষা বুঝে কর্মসূচী নির্ধারনই বিএনপির চ্যালেঞ্জ। নানামুখী প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে, সংসদকে রাজনীতির কেন্দ্রে পরিণত করাকেই মূল লক্ষ্য মনে করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মূলত, দেশের ঘটনাবহুল এক সময়ে, ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত ধরেই দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল— বিএনপি’র।
দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের চর্চা শুরু প্রেসিডেন্ট জিয়ার হাত ধরে। দলের বর্তমান চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকাকালীন ছিল যুগান্তকারী নানা পদক্ষেপ। ৯০ পূর্ব স্বৈরাচার বিরোধী আপোষহীন সংগ্রামে খালেদা জিয়া কিংবা ২৪ এর অভ্যুত্থানপূর্ব আন্দোলন সংগ্রামে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির বিরোধী দলের রাজনীতি ও কর্মসূচি— দেশের ইতিহাসে গণতান্ত্রিক চর্চায় সবচেয়ে বড় উদাহরণ। এমনটাই মনে করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুল বলেন, রাজনীতিতে সহনশীলতা, ভিন্নমতকে সম্মান করা- এসব রাজনৈতিক শিষ্টাচার শুরু হয় বিএনপির হাত ধরেই। বর্তমান চ্যালেঞ্জ কিন্তু বিএনপিকে ক্ষমতায় নিয়ে যেতে হবে, বিষয়টা এমন নয়। এখন মূল চ্যালেঞ্জ হলো বাংলাদেশকে একটা পুর্ণাঙ্গ গণতন্ত্রে রূপান্তরিত দেশ হিসেবে পুনর্গঠন করা।
প্রসঙ্গত। দল হিসেবে বিএনপি প্রতিষ্ঠার আগেই ১৯৭৭ সালের ৩০ এপ্রিল ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন জিয়াউর রহমান। মহাসচিবের মতে, সেই ‘১৯ দফা’ ছিল দেশের প্রথম সংস্কার প্রস্তাব। যার হাত ধরেই পরবর্তীতে খালেদা জিয়া ঘোষিত ‘ভিশন ২০৩০’ কিংবা তারেক রহমানের ‘৩১ দফা রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা’র আবির্ভাব।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমানের মতে, প্রেসিডেন্ট জিয়া বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন সার্কের স্বপ্নদ্রষ্টা। দেশের অর্থনীতির উন্নতির ধারার পাশাপাশি বেসরকারী খাতের দিকেও নজর ছিল তার।
আরও পড়ুনতিনি বলেন, একটি টেকসই গণতান্ত্রিক উত্তরণের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ। এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে রাজনৈতিক দল। এক্ষেত্রে বড় দল হিসেবে বিএনপির বাড়তি দায়িত্বও রয়েছে। মানুষের উপলব্ধি ও চাওয়া-পাওয়ার রেশ অনুধাবন করতে পারলেই তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক কর্মকৌশল আরও সুন্দর ও বেগবান হবে।
বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. ছিদ্দুকুর রহমান খান বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তীতে দেশে সংস্কারের একটি বড় ভিত্তি রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়া। তার ১৯ দফায় রাজনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতির সংস্কার উপস্থিত ছিল, যেগুলোর কথা এতদিন পরেও আজ আমরা দেশের জন্য নতুন করে ভাবছি ও বলছি।
৪৮ এ পা দেয়া, প্রায় ৫০ ছুঁইছুঁই বয়সী এই রাজনৈতিক দলকে বরাবরই নানান চড়াই-উৎরাই এর মুখোমুখি হতে হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, জনআকাঙ্ক্ষা অনুধাবন আর প্রোপাগান্ডার জবাব দেয়াই বিএনপি’র অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
বিশ্লেষক এবং দলের শীর্ষ নেতৃত্ব- প্রত্যেকেই মনে করেন, বিএনপিকে উদার-গণতান্ত্রিক হিসেবে প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ দেড় যুগ পর তুলনামূলক অনুকূল রাজনৈতিক পরিবেশে এবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে দলটি। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। তার মধ্যেই আটচল্লিশে পা দিল বিএনপি।
মন্তব্য করুন