ভিডিও বুধবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বগুড়ার শাজাহানপুরের

নার্সারি পল্লী শাহনগরে হাইব্রিড মরিচের ২৪ কোটি চারা উৎপাদন, ছড়িয়ে পড়ছে ৩০ জেলায়

বগুড়ার শাজাহানপুরের নার্সারি পল্লী শাহনগরে হাইব্রিড মরিচের ২৪ কোটি চারা উৎপাদন : ছড়িয়ে পড়ছে ৩০ জেলায়। ছবি : দৈনিক করতোয়া

শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি: হাইব্রিড মরিচসহ নানা রকম সবজির চারা উৎপাদনে মহাকর্মযজ্ঞ চলছে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার নার্সারিপল্লী খ্যাত শাহনগর, কামারপাড়া, খোট্টাপাড়া, দুরুলিয়া, বড়পাথার, দরিকুল্যাসহ আশপাশের এলাকায়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন নার্সারি মালিক ও শ্রমিকরা। চলতি মৌসুমে ২ শতাধিক নার্সারিতে ৩ দফায় ২৪ কোটি হাইব্রিড মরিচের চারা উৎপাদন ও বিপণনের প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

শাজাহানপুরে উৎপাদিত এসব মরিচ ও সবজি চারা ছড়িয়ে পড়ছে বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, জামালপুর, টাঙ্গাইল, নাটোর, গাইবান্ধা, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, মঠবাড়িয়া, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ অন্তত: ৩০ জেলায়। মরিচ ও সবজি উৎপাদনে ভূমিকা রাখছে দেশজুড়ে।

শাহনগর গ্রামের নাহিদ নার্সারির মালিক আপেল মাহমুদ জানান, কাক ডাকা ভোর থেকেই নার্সারি পল্লীতে শুরু হয় ভ্যান, রিকশা, টেম্পুর আনাগোনা। দূর-দুরান্ত থেকে চারা নিতে আসা চাষীদের পদরাচনায় মুখরিত ওঠে নার্সারিপল্লী। বাইরের জেলা থেকে চারা কিনতে আসা চাষীরা আগের দিন এসে রাত্রী যাপন করেন। পরদিন সকালে চারা নিয়ে বাড়ি ফিরেন।

আবার কুরিয়ার-পার্সেলের মাধ্যমে অনেকে নিজ জেলাতে বসেই কিনছেন শাজাহানপুরের উন্নত মানের হাইব্রিড মরিচ ও সবজি চারা। তিনি আরও জানান, শাহনগরের অভিজ্ঞ নার্সারি মালিক-শ্রমিকরা মরিচের চারার পাশাপাশি ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুনসহ সব ধরণের সবজির চারাও উৎপাদন করছেন। দরিকুল্ল্যা গ্রামের সততা নার্সারির মালিক মোমিনুল ইসলাম জানান, বেড প্রস্তুত করে চলতি বছরের মে মাসের মাঝামাঝি প্রথম দফায় নার্সারিগুলোতে মরিচের বীজ বপন করা হয়েছিল।

জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে চারা উত্তোলন শুরু হয়। কিন্তু প্রচন্ড তাপদাহ এবং পরে অতিবৃষ্টির কারণে কৃষকেরা মরিচ চাষ করতে প্রতিকুলতায় পড়ে যান। ফলে প্রথম দফায় উৎপাদিত অধিকাংশ চারা নার্সারিতেই নষ্ট হয়ে যায়। আর যে সামান্য পরিমাণ চারা বিক্রি হয়েছে তাতে তেমন দাম পায়নি নার্সারি মালিকরা। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় আগস্ট মাসের মাঝামাঝি দ্বিতীয় দফায় উৎপাদিত চারা দেদারছে বিক্রি হচ্ছে। জাত ভেদে প্রতি হাজার চারা বিক্রি হচ্ছে ৯শ’ থেকে ১ হাজার টাকায়।

আরও পড়ুন

চারা উৎপাদন ও বিপণন কর্মযজ্ঞ চলবে নভেম্বর পর্যন্ত। নজরুল, ইসরাফিল, খোরশেদ আলমসহ বেশ কয়েকজন নার্সারি মালিক জানান, শাজাহানপুরের শাহ্নগর, কামারপাড়া, দুরুলিয়াসহ আশপাশের নার্সারিগুলোতে হাইব্রিড মরিচের মধ্যে কারিশমা, টাইগার, কিসমত, সুলতান, লাইলা, ১৭৫৩, লাইট মাস্টার, ময়নামতি, গ্রীন সুপার মরিচের চারা উৎপাদন করা হয়েছে। রোগবালাই কম এবং ফলন বেশি হওয়ায় চাষিদের কাছে এসব জাতের চাহিদাও বেশি।

প্রায় ৪০ বছর আগে শাহনগর গ্রামে বাণিজ্যিক ভাবে সবজি চারা উৎপাদনের সূচনা করেন আঁখি বীজ ভান্ডার ও নার্সারির স্বত্ত্বাধিকারি আমজাদ হোসেন। তার হাত ধরেই ‘চারার নগর’ হিসেবে দেশব্যাপী পরিচিতি পায় শাহনগর গ্রাম। এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে আশপাশের গ্রামগুলোতেও গড়ে ওঠে চারা উৎপাদনের নার্সারি।

আমজাদ হোসেন জানান, মাঠ ফসলের চেয়ে চারা উৎপাদন লাভজনক হওয়ায় দীর্ঘ কয়েক বছরে শাহ্নগর ও এর আশপাশের এলাকায় ছোট বড় ২ শতাধিক নার্সারি গড়ে উঠেছে। এসব নার্সারিতে কৃষি শ্রমিকের কাজ করছেন ৩ সহস্রাধিক নারী-পুরুষ। নার্সারি পল্লীকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বীজ, কীট নাশক, সারের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

চারা উৎপাদন ও সবজি চাষে জড়িতরা লাভবান হচ্ছেন উল্লেখ করে শাজাহানপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমিনা খাতুন জানান, রোগমুক্ত সুস্থ সবল চারা উৎপাদনের জন্য দরকার উপযুক্ত মাটি ও দক্ষ কারিগর। যা শাজাহানপুরে রয়েছে। তাপদাহ, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টিসহ সব ধরণের প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে আধুনিক কলাকৌশল কাজে লাগিয়ে বছর জুড়ে চলছে চারা উৎপাদনের কর্মযজ্ঞ। এ কাজে উপজেলা কৃষি বিভাগ উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দিনাজপুরের পাঁচ প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতে জনদুর্ভোগ, মাত্র ২০০ মিটার রাস্তা

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বাস উল্টে সুপারভাইজার নিহত

নাটোরে চিকিৎসককে গলা কেটে হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন, প্রেমের সম্পর্ক ও চাকরিচ্যুত করার ক্ষোভ

বগুড়ায় শাজাহানপুরে ২ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

ঠাকুরগাঁওয়ে প্রতারক চক্রের ৫ সদস্য গ্রেফতার

সিরাজগঞ্জে আট মাসে ৯১ অভিযান জরিমানা ১৬ লাখ টাকা