রংপুর অঞ্চলে জ্বালানি তেলের তীব্র সংকটের আশঙ্কা

রংপুর প্রতিনিধি : রংপুরে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার ডিপোগুলোতে জ্বালানি তেলের মজুদ শূন্যে নেমে এসেছে। ফলে ফিলিং স্টেশন মালিকরা পড়েছেন বিপাকে। বাধ্য হয়ে কেউ কেউ পার্বতীপুর ও বাঘাবাড়ী ডিপো থেকে তেল এনে স্টেশন চালু রাখছেন। তবে এতে পরিবহন ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ হচ্ছে।
রংপুরে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনায় কর্মরত কর্মকর্তারা জানান, গত ছয় মাস ধরে চট্টগ্রাম থেকে রেলপথে নিয়মিত তেল সরবরাহ না হওয়াতেই এ সংকট তৈরি হয়েছে। আগে মাসে ৮-৯টি র্যাক আসত, প্রতিটি র্যাকে থাকত ২৭টি ওয়াগন। এখন মাত্র এক থেকে দু’টি র্যাক আসছে। গত ছয়মাস ধরে এই অবস্থার পরও রেল কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্ট অ্যান্ড পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, রংপুর রেলহেড ডিপোতে সরবরাহ বন্ধ থাকায় রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও নীলফামারীতে তেল সংকট দেখা দিয়েছে। ডিলার ও এজেন্টদের চাহিদা অনুযায়ী তেল দেওয়া যাচ্ছে না।
এ নিয়ে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর এবং গত ১৪ আগস্ট বিভাগীয় কমিশনারের কাছে লিখিত আবেদন করেছিল অ্যাসোসিয়েশনের রংপুর শাখা। কিন্তু কোনো ফল মেলেনি।
পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা ডিপো সূত্রে জানা গেছে, রংপুর অঞ্চলের ডিপোগুলোতে মাসিক চাহিদা আড়াই কোটি লিটার হলেও আগস্টে সরবরাহ হয়েছে মাত্র ২১ লাখ লিটার যা দিয়ে দুইদিনের বেশি চাহিদা পূরণ সম্ভব নয়। রেলওয়ের ইঞ্জিন সংকটের কারণে তেল পরিবহন করা যাচ্ছে না। কবে নাগাদ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ফলে শ্রমিকরাও পড়েছেন সংকটে।
আরও পড়ুনরংপুর বিভাগীয় দাহ্য পদার্থ বহনকারী ট্যাঙ্কলরি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আলাউল মিয়া লাল্লু জানান, তেল না থাকায় প্রায় ৬শ’ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, রংপুরে নিয়মিত তেল সরবরাহ করা না হলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্ট অ্যান্ড পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন রংপুর জেলা সভাপতি মো. আজিজুর ইসলাম মিন্টু বলেন, চট্টগ্রাম থেকে রেলে তেল আসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এতে পাঁচ জেলায় সংকট তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহ কঠিন হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি উত্তরণে খুব শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন করে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
ফিলিং স্টেশন মালিক মোবারক হোসেন জানান, সরবরাহ না থাকায় যানবাহন চালকদের চাহিদা মোতাবেক তেল সরবরাহ করতে পারছি না। আমরা পার্বতীপুর-বাঘাবাড়ী থেকে তেল আনছি। এতে খরচ যেমন বেশি হচ্ছে, সময়ও লাগছে দুই দিনের বেশি। সংকট নিরসন না হলে রংপুর অঞ্চলে জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ডিপো মালিকেরা।
মন্তব্য করুন