এক বছরেই বাজিমাত কালাইয়ে কালো ফিলিপিন্স আখ চাষে মহসিনের সাফল্য
কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি : মাত্র এক বছরেই ব্যতিক্রমী কালো জাতের ফিলিপিন্স আখ চাষ করে পুরো এলাকায় বাজিমাত করেছেন জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পাঁচগ্রামের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মহসিন আলী। গত বছর মাত্র ৫৫ শতক জমিতে উচ্চ ফলনশীল কালো ফিলিপিন্স আখ চাষ করে তার আয় হয়েছে ৬ লাখ টাকারও বেশি। আখ চাষের পাশাপাশি চারা উৎপাদনও শুরু করেছেন তিনি।
এরই মধ্যে ১০ হাজার চারা সরবরাহের অর্ডারও পেয়েছেন তিনি। গত বছর জেলার মধ্যে মহসিনই প্রথম এই আখ চাষের উদ্যোগ নেন। সফল হওয়ায় এরই মধ্যে অন্য কৃষকরাও ৫০ বিঘা জমিতে এ ধরণের আখ চাষ শুরু করেছেন বলে স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।
কালাই উপজেলার পুনট ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকা পাঁচগ্রাম। এ অঞ্চলের কৃষকরা সাধারণত ধানের পর আলু আর আলুর পর ধান চাষ করে আসছেন যুগ যুগ ধরে। কিন্তু ফসল নিয়ে তাদের সেই মান্ধাত্তা চিন্তার অবসান ঘটিয়েছেন মহসিন আলী। তাদের সেই পুরনো ধ্যান-ধারণা পাল্টে দিয়েছেন নতুন জাতের উচ্চ ফলনশীল ফিলিপিন্স কালো আখ চাষ করে। ইউটিউব দেখে মহসিন লাভজনক ফসল হিসেবে বেছে নেন উচ্চ ফলনশীল ফিলিপিন্স কালো জাতের আখ চাষের।
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মহাস্থান গড় থেকে চারা সংগ্রহ করে গত বছর ৫৫ শতক জমিতে তিনি এই জাতের আখের চাষ শুরু করেন। এতে তার মোট খরচ হয় এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর তিনি আখ বিক্রি করেছেন প্রায় আট লাখ টাকার। এ বছর একই জমিতে আখ রোপনে তার খরচ হয়েছে মাত্র ৬৫ হাজার টাকা। এরই মধ্যে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকার আখ বিক্রিও করেছেন। আরও তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকার আখ বিক্রি হবে বলে আশা করছেন।
আরও পড়ুননতুন জাতের এই আখের রঙ কালছে বেগুনি, যা দেখতে সুন্দর, খেতেও খুবই মিষ্টি। এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য আখগুলো খুবই নরম। এর ছাল হাতের নখ দিয়ে ছাড়ানো যায়, রসেও টুইটুম্বর। ১৮ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার এই আখ বেশ মোটা হয়। এলাকায় শুধু মহসিনই নয়, তার কাছ থেকে চারা নিয়ে একই মাঠে চাষ করেছে প্রতিবেশী আশরাফুল ও মারুফ নামের আরও দুই তরুণ। তারাও আখ বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন। বর্তমানে ওই এলাকায় প্রায় ৫০ বিঘার বেশি জমিতে কালো জাতের ফিলিপিন্স আখ চাষ হচ্ছে।
মহসিন বলেন, ‘যখন লেখাপড়া করতে পারিনি, তখন থেকেই চিন্তা ছিল সৎ ভাবে টাকা রোজগার করে বড় হতেই হবে। তাইতো ইউটিউব দেখে গত বছর উচ্চ ফলনশীল কালো জাতের ফিলিপিন্স আখ ৫৫ শতক জমিতে চাষ করে খরচ বাদ দিয়ে তার সাত লাখ ৭০ হাজার টাকা লাভ হয়।
বর্তমানে বিভিন্ন এলাকা থেকে আখের চারা কেনার জন্য কৃষকরা যোগাযোগ করছেন। ইতোমধ্যে ১০ হাজার চারার অর্ডারও পাওয়া গেছে। কালাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুণ চন্দ্র রায় বলেন, আখ লাভজনক ফসল, রোগবালাইও কম। এই ফসল চাষ করার জন্য আমরা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছি। এ বছর প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে কৃষকরা এই আখ রোপণ করেছেন।
মন্তব্য করুন