ভিডিও

ছাত্র জীবনে বিনাটিকিটে ট্রেন ভ্রমণের ভাড়া পরিশোধ করলেন প্রকৌশলী ও কলেজ শিক্ষিকা

প্রকাশিত: মে ২১, ২০২৪, ১০:২০ রাত
আপডেট: মে ২১, ২০২৪, ১১:২৭ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

স্টাফ রিপোর্টার: ছাত্র জীবনে বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণের ভাড়া পরিশোধ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন  প্রকৌশলী বেলাল উদ্দিন ও লিপি নামে এক কলেজ শিক্ষিকা। তারা বগুড়া রেল স্টেশন মাস্টারের কাছে এই পরিশোধ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

এদের মধ্যে বেলাল উদ্দিন বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলায় এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি করেছেন। সর্বশেষ তিনি কাহালু উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। সেখান থেকেই তিনি ২০২০ সালে অবসরে যান। চাকরি জীবনের আগে প্রায় ১২ বছর সোনাতলা উপজেলা থেকে বগুড়া শহরে ট্রেনে ভ্রমণ করেছেন বেলাল উদ্দিন (৬৪) । ছাত্র জীবনে  এক যুগের অধিকাংশ সময় টিকিট ছাড়াই চলাচল করেছেন তিনি। এখন জীবনের অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে এসে তিনি অনুশোচনায় ভুগছিলেন। যে কারণে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে বগুড়া রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার মো: সাজেদুর রহমান সাজুর কাছে গিয়ে ৭ হাজার টাকা টিকিটের দাম পরিশোধ করেন ।  

প্রকৌশলী বেলাল উদ্দিন বলেন, তিনি বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার বাসিন্দা। ১৯৭০ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত তিনি সোনাতলা থেকে বগুড়ায় ট্রেনে নিয়মিত যাতায়াত করেছেন। তিনি বগুড়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে পড়াশোনা করতেন। সপ্তাহে বা মাসে দুই-একবার ট্রেনে যাতায়াত করতে হয়েছে তাকে। সেইসাথে আত্মীয় স্বজনের বাড়ি বগুড়ায় ছিল তার। এ জন্য নিয়মিত যাতায়াত ছিল তার বগুড়ায়। ওই সময়গুলোতে বিনা টিকিটে ট্রেনে যাতায়াত করেছেন তিনি।

বেলাল উদ্দিন আরও বলেন, এখন বৃদ্ধ বয়সে এসে ওই বিষয়টি তাকে পীড়া দিচ্ছিল। একজন মুমিন বান্দার উচিত হবে- নিজের হক, বিবি-বাচ্চার হক, প্রতিবেশীর হক, আত্মীয় স্বজনের হক এবং দেশের আপামর জনগণের হক আদায় করা। এই হক আদায় করতে গিয়ে তিনি বিবেকের কাছে কষ্ট পান। এরপর স্বামী-স্ত্রী মিলে সিদ্ধান্ত নেই, আমার জীবনের সেই হক আদায় করা দরকার। পরে আমি আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেবের কাছে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি। তিনি আমাকে পরামর্শ দেন, আপনি ওই টাকা টিকিটের মাধ্যমে পরিশোধ করতে পারেন। যাতে সরকারের কোষাগারে যায়। আজকে এসে হিসেব করে ৭ হাজার টাকা জমা দিলাম। মূলত আখিরাতের ভয় থেকেই আমি এই টাকা পরিশোধ করেছি। টাকা জমা দিতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে।’

এ বিষয়ে বগুড়া রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার মো: সাজেদুর রহমান সাজু বলেন, বিষয়টি অনেক ভালো লাগার। তার জমা দেওয়া টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হবে। ট্রেন আমাদের জাতীয় সম্পদ। অনেকেই বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করে থাকেন। এটা কোনোভাবেই উচিত না। মাঝেমধ্যে অনেকে বিবেকের তাড়নায় এরকম টাকা পরিশোধ করে যান। এর আগেও এক কলেজ শিক্ষিকাসহ আরও দুই জন ১৬ হাজার টাকা ট্রেনের টিকিটের বকেয়া জমা করেছেন।

স্টেশন মাস্টার সাজু আরও বলেন, প্রকৌশলী বেলাল উদ্দিনের আগে গত ১০ এপ্রিল লিপি নামে এক কলেজ শিক্ষিকা ট্রেনের বকেয়া ভাড়া জমা দেন। তিনিও ছাত্র জীবনে বিনা টিকিটে গাবতলী ও সোনতলায় ট্রেনে ভ্রমণ করেছেন। কিন্তু তিনি আজ প্রতিষ্ঠিত। একটি কলেজের শিক্ষকতা করেন তিনি। তাই বিবেকের তাড়নায় তিনি এই ভাড়া পরিশোধ করেন।

শিক্ষিকা লিপি বলেন, ইচ্ছা, অনিচ্ছা কারণবশত: অনেক সময় ট্রেনের টিকিট কাটা হয়নি। তাই এখন বুঝতে পেরে সরকারি খাতে টাকা জমা দিতে ইচ্ছুক হই। এ ছাড়া মাস দুয়েক আগেও এক ব্যক্তি বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণের বকেয়া ৬ হাজার টাকা পরিশোধ করে গেছেন। স্টেশন মাস্টার বলেন, টিকিটের টাকা জমা দেয়ার রশিদ ওই যাত্রীদের কাছে দেয়া হয়েছে। এটা একটি ভালো দৃষ্টান্ত।

 



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS