ভিডিও

শেরপুরে বাণিজ্যিক ভবনে ভয়াবহ আগুন কোটি টাকার মালামাল ভস্মিভূত

বিস্ফোরিত হচ্ছিল একের পর এক গ্যাস সিলিন্ডার, অল্পের জন্য রক্ষা পেল দু’টি ব্যাংক

প্রকাশিত: জুন ০২, ২০২৪, ০২:০৩ রাত
আপডেট: জুন ০২, ২০২৪, ০৮:০৫ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়ার শেরপুরে একটি বাণিজ্যিক ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার দিনগত রাত এগারোটার দিকে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক সংলগ্ন পৌর শহরের হাসপাতাল রোডস্থ দুলাল কমপ্লেক্সে ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

অগ্নিকাণ্ডে ভবনটির নিচতলায় থাকা অনুমোদনহীন মিনি জ্বালানি তেলের ডিপো বলে পরিচিত লেমন এন্টারপ্রাইজ নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সেইসাথে একের পর এক গ্যাস সিলিন্ডারও বিস্ফোরিত হচ্ছিল। এতে অন্তত কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে, আগুন লাগার খবর পেয়েই স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা ঘটনাস্থলে আসেন এবং আগুন নেভানোর চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। পরে বগুড়াসহ আশপাশের উপজেলা থেকে ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট এসে প্রায় তিন ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। ফলে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে ওই ভবনটির দ্বিতীয়তলায় থাকা উত্তরা ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের শাখা ও তিনতলার একটি আবাসস্থল।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, কয়েকদিনের মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম আরো বাড়বে-এমন খবরে শনিবার রাতে তেলের লরি (ট্রাক) থেকে ডিজেল, পেট্রোল, মবিল ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মজুদ করা হচ্ছিল। এসময় আগুনের সূত্রপাত হয়। তাদের ধারণা, ট্রাক ও লরি থেকে তেল দোকানে নেওয়ার সময় শ্রমিকদের বিড়ি-সিগারেট থেকে আগুন লাগে এবং মুহূর্তের মধ্যে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

এক পর্যায়ে ভবনের একপাশ (উত্তরে) ওই তেলের দোকান ও গোডাউন থেকে আগুনের লেলিহান শিখা বের হতে থাকে। সেইসঙ্গে ওই দোকানে থাকা গ্যাস সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ শুরু হয়। বিকট শব্দে এসব গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের সময় আশপাশের লোকজনের মধ্যে চরম আতঙ্ক দেখা দেয়।

পরে তারা ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে অবস্থান নিলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসময় দূরপাল্লার অসংখ্য যানবাহন আটকে থাকায় মহাসড়কের উভয়পাশে তিন কিলোমিটার জুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে দুইঘন্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসে বলে জানান তারা।

লেমন এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জ্বালানি তেল ডিজেল-পেট্রোল, মবিল খুচরা ও পাইকারী দরে বিক্রি করেন। পাশাপাশি গ্যাস সিলিন্ডার ও গাড়ির যন্ত্রাংশ, টায়ারও বিক্রি করে আসছিলেন। সেখানে প্রায় কোটি টাকার মালামাল ছিল। অগ্নিকাণ্ডে সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে দাবি করেন তিনি।

শেরপুর ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশন লিডার হাবিবুর রহমান বলেন, রাত সোয়া ১১ টার দিকে ওই বাণিজ্যিক ভবনে আগুন লাগার খবর পান। এরপর তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে আসেন এবং আগুণ নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু জ্বালানি তেলের কারণে আগুনের পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠে। সেখানে থেমে থেমে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণও ঘটে। পরে তাদের পার্শ্ববতী ইউনিটগুলোকে খবর দেওয়া হয়। এরপর ৮টি ইউনিট একযোগে তিন ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুণ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

বগুড়া ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মঞ্জুরুল হক বলেন, খবর পেয়েই দ্রুত ঘটনাস্থলে যান তারা। তার বগুড়া ইউনিট ছাড়াও শেরপুর, পার্শ্ববর্তী শাজাহানপুর, ধুনট ও রায়গঞ্জ ফায়ার স্টেশনের কর্মীদের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

ততক্ষণে আগুনে জ্বালানি তেলের পুরো দোকান পুড়ে গেছে। তবে ব্যাংকের কিছু অংশ (বাইরের জানালার গ্লাস) ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তেমন আর কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এসময় তার চার কর্মী আহত হন। আগুন লাগার সঠিক কারণ ও ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সেই প্রতিবেদন হাতে পাওয়া গেলেই কেবল আগুণ লাগার কারণ ও ক্ষয়-ক্ষতির বিষয়টি বলা সম্ভব হবে বলে জানান।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমন জিহাদী এ প্রসঙ্গে বলেন, অনুমোদন না থাকায় তিন মাস আগে ওই প্রতিষ্ঠানকে ২৫হাজার টাকা জরিমানা করে মহাসড়কের পাশ থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানের মালিক সরে যাওয়ার জন্য এক মাসের সময় প্রার্থনা করেন।

এরইমধ্যে এই দুর্ঘটনা ঘটল। আগামি এক সপ্তাহের মধ্যে অনুমোদনহীন জ্বালানি তেল বিক্রির এসব প্রতিষ্ঠানেরগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS