কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, তলিয়ে গেছে বিভিন্ন কাঁচা সড়ক ও সবজি ক্ষেতসহ বিভিন্ন ফসল
কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামে তিস্তা, দুধকুমার, ব্র্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীসহ ১৬ নদীর পানি প্রতিদিনই বেড়েই চলছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক অবনতি হয়েছে। আজ শুক্রবার (২১ জুন) তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার এবং ধরলা নদীর পানি ফুলবাড়ির শিমুলবাড়ি পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
আজ শুক্রবার (২১ জুন) কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রাফসান জানি জানান, বিকেল ৩টায় দুধকুমার নদের পাটেশ্বরী পয়েন্টে পানি সামান্য কমে এখন বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে পানি ২৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৫৫সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং ধরলা নদীর পানি ফুলবাড়ি উপজেলার শিমুলবাড়ি পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে সবগুলো নদ-নদীর পানিও বিপৎসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে নদীর পানি বাড়ার কারণে তিস্তা ও ধরলা নদীসহ অন্যান্য নদনদীর অববাহিকার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা। তলিয়ে গেছে বিভিন্ন কাঁচা সড়ক। ডুবে গেছে বাদাম, পাটক্ষেত, ভুট্টা, মরিচ ও শাক সবজি ক্ষেতসহ বিভিন্ন উঠতি ফসল। এসব এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির কারণে সাধারণ মানুষেরা পড়েছেন বিপাকে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, দুর্যোগ কবলিত মানুষের সংখ্যা ৪ হাজার। একই সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে ১৪৪ মে. টন জিআর চাল এবং নগদ ১০ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ত্রাণ হিসাবে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তা বিতরণের প্রস্তুতি চলছে। নতুন করে ঢাকা থেকে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ১০ লাখ টাকা, ৯ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার এবং ৫০০ মে. টন চাল।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (ওয়েস্ট রিজিওন) এ কে এম তাহমিদুল ইসলাম উলিপুরের বেগমগঞ্জসহ বিভিন্ন ভঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, একদিকে বন্যা আবার আর একদিকে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। এ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ছোট বড় ১৬টি নদ নদীর সব গুলোই ভাঙন প্রবন। এর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার সবচেয়ে বেশি বিধ্বংসী ভাঙন প্রবন। নদী ভাঙন প্রতিরোধে চলমান কার্যক্রম পরিদর্শনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট নিরসনে কি কি উদ্যোগ নেয়া যায় তা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিবেচনা করবে।
আরও পড়ুনগাইবান্ধা : গাইবান্ধায় সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে জেলার ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২১ ঘন্টায় তিস্তা নদীর পানি ৪৩ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে আজ শুক্রবার (২১ জুন) বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিপৎসীমার ৫৩ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কন্টোল রুম সূত্রে জানা যায়।
অপরদিকে পানি বৃদ্ধিতে গাইবান্ধা সদর উপজেলার মোল্লারচর, গিদারি, ঘাগোয়া, কামারজানি, নদীতে পানি বাড়ার সাথে সাথে সদরের মোল্লার চর ও ফুলছড়ির ফজলুপুর ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নদী বেষ্টিত যে যেসব ইউনিয়ন রয়েছে। সেসব এলাকায় শুকনা খাবার বিতরণের জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রাথমিক সব প্রস্তুতি রয়েছে।
মন্তব্য করুন