নওগাঁ প্রতিনিধি : গত কয়েকদিন দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে এক সপ্তাহে দেশের উত্তরের বৃহৎ খাদ্যভান্ডার নওগাঁয় ১৫০-২শ’ কোটি টাকার কেনাবেচা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এতে করে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা। মিল মালিকরা বলছেন, দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির পাশাপাশি পরিবহন সমস্যা ও ব্যাংকিং সেবা বন্ধ থাকায় দেশের বড় বড় বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা পায়নি। এতে করে বিপাকে ব্যবসায়ীরা।
এদিকে গত বুধবার সকাল থেকে দেশের বিবাদমান পরিস্থিতি মোটামুটি ভালো হওয়ায় কিছু চাল ঢাকায় গেছে বলছেন তারা। জানা যায়, দেশের উত্তরের ধান-চালের সবচেয়ে বড় মোকাম নওগাঁ। সপ্তাহের প্রতিদিনই কর্মচাঞ্চল্যমুখর থাকে শহরের আলুপট্টি চালের মোকাম। কিন্তু এখনকার চিত্র পুরোটাই উল্টো।
চাল মোকামের অধিকাংশ চালের আড়ত গত মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত বন্ধ ছিল। গত বুধবার সকালে চালের আড়তগুলো খোলা থাকলেও ক্রেতা না থাকায় অলস সময় পার করছেন তারা। একই অবস্থা পৌর ক্ষুদ্র চাল বাজারেও।
বাংলাদেশ অটো-রাইসমিল সমন্বয় পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুর রহমান বলেন, কারফিউ থাকলেও বাজারে ধান কেনাবেচা হয়েছে। কিন্তু দেশের এই উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে ব্যাংকিং সেবা বন্ধ থাকায় অনেক দুর্ভোগ হয়েছে। চালের অনেক অর্ডার থাকলেও ব্যাংক বন্ধ থাকার কারণে তারা টাকা দিতে না পারায় দেশের বিভিন্ন স্থানে চাল পাঠানো যায়নি।
তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন ২০-২৫ কোটি টাকা ধান-চাল কেনাবেচা হয় এ জেলায়। গত এক সপ্তাহে ১৫০-২শ’ কোটি টাকার লেনদেন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বুধবার ব্যাংক লেনদেন কিছুটা করা গেলেও বিড়ম্বনার শেষ নেই। ইন্টারনেটের কারণে টাকা তোলা যায়নি।
শহরের আলুপট্টি আড়তে কর্মরত শ্রমিক আজমত আলী বলেন, আমরা গরীব মানুষ। দিনমজুরের কাজ করি। বেশ কয়েকদিন কাজ নাই; দোকান বন্ধ। খুব কষ্ট হয়েছে। ক্ষুদ্র চাল ব্যবসায়ী বাবলু সরদার বলেন, শ্রমিকের বেতন ও ঘরভাড়া দিতে এই কয়েকদিনে অনেক টাকা শেষ হয়েছে। ব্যাংক বন্ধ থাকায় পাওনাদারদের টাকা দিতে পারিনি।
নওগাঁ শহরের আলুপট্টিস্থ মেসার্স ওমর রাইসমিলের স্বত্বাধিকারী মেহেদী হাসান বলেন, রাস্তায় যানবাহন চলেনি। ধান-চালের বেচাকেনা হয়নি। আগে যেটুকু বিক্রি করেছিলাম তার পাওনা টাকা ও পাইনি। ঢাকা ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা টাকা দিতে পারেনি ব্যাংক বন্ধ থাকায়। সেই সাথে ছোট-বড় সকল ব্যবসায়ীদের ঋণের বোঝা বেড়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে পথে বসা ছাড়া উপায় থাকবে না।
নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক উত্তম সরকার বলেন, কারফিউ এর কারণে চাল বাজারে ক্রেতাশূন্য ছিল কিন্তু গত বুধবার সকালে খোলা হলেও একই অবস্থা। নওগাঁ জেলায় ১০২টি অটোমেটিক ও ১১শ’টি হাসকিং চালকল মিল রয়েছে। এ জেলা থেকে গড়ে প্রতিদিন ১শ’-২শ’ ট্রাক চাল সরবরাহ হয়ে থাকে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।