ভিডিও শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে বৈষম্য

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে বৈষম্য, ছবি : দৈনিক করতোয়া

বাংলাদেশ একটি গণপ্রজাতন্ত্রী দেশ। যার জাতি গঠনের সুতিকাগার বলা হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়কে।  আর শিক্ষকদের বলা হয় জাতির বিবেক। আবার কেউ কেউ তো বলেই বসেন শিক্ষকরা জাতির মেরুদন্ড। কিন্তু সেই মেরুদন্ড সোজা হয়ে দাঁড়ানোর মত শক্তি বহন করছে কিনা তা নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যথা নেই। আর থাকবেই বা কেন! আমরা তো জাতিগতভাবে সংকর।

আমাদের মাঝে ভালো-মন্দ, দোষ-গুণ সবই আছে। তবে বোধহয় ভালো বা গুণের চেয়ে মন্দ বা দোষের পাল্লাই বেশি ভারী। যার কারণে আমরা সব সময়ই চেষ্টা করি নিজের মেরুদন্ড শক্ত করতে। এতে করে অন্যেরটা ভেঙ্গে গেল নাকি কুজো হয়ে পড়ে থাকলো তা তার দেখার বিষয় নয়। ঠিক তারই একটা ফর্মুলায় পড়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ। যে ফর্মুলার উর্ধ্বে থেকে যেকোন সরকার চাইলেই এই চাকরিটিকে করতে পারতো আকর্ষণীয়। কিন্তু সংকর জাতি হিসেবে আমাদের ডিএনএ সেটি বহন করে না।

যেখানে সারাদেশের উচ্চ বিদ্যালয়,  কলেজগুলোর প্রধানদের ওই পদে নিয়োগ যোগ্যতা দেখা হয় তার সহকারী পদে তিনি কত বছর চাকরি করেছেন। সেক্ষেত্রে সেখানে একটি নির্দিষ্ট সময়ও উল্লেখ করা থাকে। আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সেই যোগ্যতা দেখা হবে মাত্র ৬৫% মানুষের। বাকি যে ৩৫% প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে তারা হলেন নতুন ঝকঝকে তাগড়া যুবক। কিন্তু তারাও এখানে এসে মন বসাতে পারছেন না। তারা মনে করছেন আরও ভালো কোন চাকরি তার দরকার।

কারণ প্রাথমিক বিদ্যালয় বর্তমান অবস্থায় আমাদের সমাজ খুব একটা ভালো মানের চাকরি হিসেবে মনে করেন না। আবার আরো একটি কারণ হতে পারে যে এখানে ৬৫% এবং ৩৫%  দুটি শ্রেণী তৈরি হয়েছে। যেখানে কেউ কাউকে মন থেকে মানতে পারছেন না। ৬৫% মনে করছেন আমরা এখানে এতোদিন চাকরি করে প্রমোশন পেয়েছি সুতরাং এখানে আমাদের যোগ্যতা বেশি।

আবার ৩৫% ভাবছে আমরা সরাসরি প্রধান হয়েছি সুতরাং আমাদেরও যোগ্যতা কম কিসে। আর এই ৬৫% এবং ৩৫% এর কথা চিন্তা করে করে সহকারী শিক্ষকদের মনবল ভেঙে যাচ্ছে। কারণ এই ৩৫% যতবারই নিয়োগ হচ্ছে ততবারই সহকারী পদটি ব্লক পোস্টে পরিণত হচ্ছে। যেহেতু একজন মানুষের চাকরি জীবনে পদোন্নতির আশা দিন দিন বিলিন হয়ে যাচ্ছে তাই সেখানে তার কাজের গতিও কমে যাচ্ছে। সুতরাং আপনি উঁচু জায়গায় বসে যতই ভাবেন প্রাথমিক শিক্ষার উন্নতি করবেন সেটি তেমন কোন কাজে আসবে বলে আমি মনে করছি না।

প্রতিটি চাকরিতে নিয়োগের পর প্রমোশন থাকলেও প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য তা দিন দিন চলে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাহিরে। এই ব্লক পোস্টে চাকরি করে মনকে ভালো রেখে কাজ করাটা কঠিন। এই চাকরির জন্য আলাদা নিয়োগবিধি তৈরি করলেও আলাদা বেতন কাঠামো তারা তৈরি করতে পারছেন না। যা প্রাথমিক শিক্ষাকে ত্বরান্বিত করার জন্য বিশেষভাবে জরুরী। গত ১ সেপ্টেম্বর প্রথম আলো পত্রিকায় দেখলাম ৪০তম বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে ২০৮ জনকে প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। যা সহকারী শিক্ষকদের মনবল ভেঙে দেয়ার অন্যতম মাধ্যম।

আরও পড়ুন

এখানে এটি না করে আলাদা বেতন কাঠামো করে শতভাগ প্রমোশন রেখে প্রধান শিক্ষক, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসার হওয়ার সুযোগ করে দিতে পারতেন। এতে করে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারতেন। কারণ তখন এই চাকরির প্রতি ভালো মানের শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়তো। সেখান থেকে প্রতিযোগিতাপূর্ণ একটি মানসম্মত পরীক্ষা নিয়ে ভালো মানের শিক্ষক নিয়োগ দেয়া সহজ হতো।

তার ফলশ্রুতিতে মানসম্মত শিক্ষা বলতে আমরা যা বুঝি তা আমাদের সমাজ পেত। আমাদের কাদামাটির মত শিক্ষার্থীরা পেত ভালো মানের শিক্ষক আর আমরা পেতাম ভালো মানের জাতি। সুতরাং প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বিধি-২০১৯ পুনঃবিবেচনার জোর দাবি জানাচ্ছি।


লেখক : প্রাবন্ধিক ও শিক্ষক

01723-056356

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বেক্সিমকোর কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

পাকিস্তান থেকে সেই জাহাজে এবার এল ৬৯৯টি কনটেইনার

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ছাড়াল ১ লাখ

গাজীপুরে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেলের দুই আরোহী নিহত

আসামিকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশের ওপর হামলা, অতঃপর গ্রেপ্তার ১৩

বগুড়ার কলোনীতে ছুরিকাঘাত করে ১০ লাখ টাকা ছিনতাই