থামানো যাচ্ছে না মানবপাচার
নানা তৎপরতা সচেতনতা পদক্ষেপের পরও কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না মানবপাচার। এটা এখন বড় ধরনের জাতীয় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। উন্নত জীবনের আশায় অবৈধ পথে বিদেশ গমনের বিষয়টি বিভিন্ন সময়েই সামনে এসেছে।
আর অবৈধ পথে বিদেশ গমনে নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটে। পত্র-পত্রিকার খবরে প্রকাশ, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি সহ ৪৯০ জন অবৈধ অভিবাসীকে আটক করেছে দেশটির অভিবাসন বিভাগ।
আটকদের মধ্যে বাংলাদেশি ছাড়াও নেপাল, আফগানিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক রয়েছেন। বৃহস্পতিবার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৩১ জানুয়ারি বুধবার স্থানীয় সময় মধ্যরাতে বুকিত আমান আন্ডারকভার এলাকায় অপরাধ বিভাগ এর নেতৃত্বে জেনারেল অপারেশন টিম (পিজিএ) এবং সেলাঙ্গরের মালয়েশিয়ান ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টের (জিম) সহায়তায় অভিযান চালানো হয়।
এ সময় অবৈধ অভিবাসীকে আটক করা হয়। অভিবাসন বিভাগ বলছে, অভিযানের আগে অভিবাসীদের অনুপ্রবেশের স্থানীয় জনগণের কাছ থেকে অভিযোগ ও তথ্য নেওয়া হয়। পরে পুলিশ এলাকায় প্রায় একমাস ধরে গোয়েন্দা ও নজরদারি চালায়।
মানবপাচারকারী চক্র সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে অবৈধ পথে বিদেশ গমনে উৎসাহিত করা সহ নানা রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়-যা সামগ্রিকভাবে আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। প্রসঙ্গত বলা দরকার, সম্প্রতি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে একাধিক সংঘবদ্ধ মানব পাচার চক্র।
আর এদের টার্গেট মূলত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। তথ্য মতে, টেকনাফের উপকূলের ২০টি পয়েন্ট দিয়ে চলছে মানবপাচার। ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার ও বাংলাদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গা দালালরা এই পাচার চক্রের সদস্য বলেও খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে।
এ ছাড়া পত্র-পত্রিকার খবরেই জানা গেছে ভূ-মধ্যসাগরের লিবিয়া উপকূল থেকে এক অপ্রাপ্ত বয়স্ক সহ ৩০ বাংলাদেশিকে উদ্ধার করেছে ফরাসি দাতব্য সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডার সের (এমএসএফ) উদ্ধারকারী জাহাজ জিও ব্যারেস্টস। তথ্য মতে, গত ৩ নভেম্বর এসব অভিবাসন প্রত্যাশীকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ইউরোপে অভিবাসন সংক্রান্ত সংবাদ মাধ্যমে ইনফোমাইগ্রেন্টস।
আরও পড়ুনএমনটি জানা গেছে যে, লিবিয়া উপকূলের আন্তর্জাতিক জলসীমায় উদ্ধার অভিযানটি পরিচালনা করা হয়। ওই সময় একটি মোটর চালিত নৌকায় ঝুঁকিতে থাকা ৩০ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করে জিও ব্যারেন্টস জাহাজে তোলা হয়। আমরা বলতে চাই, অবৈধ পথে বিদেশ গমন কতটা ভীতিপ্রদ বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এর আগেও নানা সময়ে অবৈধ পথে বিদেশ গমনের ভয়াবহতা সামনে এসেছে। যেখানে দালালদের খপ্পড়ে পড়ে নিশ্চিত বিপদ জেনেও ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় ইউরোপের পথে পা বাড়ায় অনেকে। এ ছাড়া সব হারিয়ে নি:স্ব হওয়ার ঘটনা ঘটেছে অনেকেরই। মৃত্যুর চ্যালেঞ্জ নিয়ে অনেকে সাগরে ডুবেও মারা যাচ্ছেন, আর যারা ভাগ্যগুণে বেঁচে যান, তাদের ঠাঁই হয় জেলের অন্ধকার খুপড়িতে।
এটা সত্য যে, মূলত জীবন ও জীবিকার কারণে দেশে কর্মসংস্থানের অভাবে, দারিদ্র্যের পীড়নে মানুষ পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে। এসব মানুষের বেশির ভাগই প্রতারিত হচ্ছে, হচ্ছে সর্বস্বান্ত। যুদ্ধ, জলবায়ু সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগের কারণেও মানব পাচার আগের তুলনায় বেড়েছে।
আমরা বলতে চাই, সরকার যেখানে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কথা, সব মানুষের সুবিধা নিশ্চিতের কথা বলছে, সেখানে নাগরিকের নিশ্চিত মৃত্যু অথবা বিদেশের কারাগারে বন্দি জীবনের দিকে ধাবিত করার এই চিত্র অত্যন্ত পরিতাপের। যা কারও কাছেই কাম্য হতে পারে না। সংশ্লিষ্টরা এ দায় অস্বীকার করতে পারে না।
তবে অবৈধভাবে বিদেশ গমন রোধ করা না গেলে এ খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশংকা রয়ে যাবে। অবৈধভাবে বিদেশ গমন বন্ধে বৈধ পন্থায় বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে হবে। সে ক্ষেত্রে শুধু প্রতারণা বন্ধের উদ্যোগ নিলেই হবে না, এর পাশাপাশি সরকারকে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার ব্যাপারেও মনোযোগ দিতে হবে।
মন্তব্য করুন