অস্থির নিত্য পণ্যের বাজার
নিত্য পণ্যের বাজারে অস্বস্তি বাড়ছেই। দফায় দফায় দাম বেড়ে তা অনেক দিন ধরেই চড়া দাম বজায় থেকে সাধারণ মানুষের প্রকৃত ক্রয় ক্ষমতাকে কমিয়ে দিচ্ছে। এর মধ্যে টানা কয়েকদিনের বৃষ্টি যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে এসেছে।
বিগত সরকারের রেখে যাওয়া সিন্ডিকেট, আর কিছুটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সঙ্গে পূর্বাঞ্চলের চলমান বন্যা পরিস্থিতির কারণে পণ্য পরিবহণ ব্যাহত হচ্ছে। এবার মৌসুমের শুরু থেকে আলু ও পেঁয়াজের দাম বাড়তি। ভোক্তা অধিদপ্তর বারবার বাজার তদারকি করার পরও কমছে না দাম। বাধ্য হয়ে অন্তর্বর্তী সরকার নিত্য প্রয়োজনীয় আলু ও পেঁয়াজের দাম কমাতে আমদানি শুল্ক হ্রাস করেছে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সপ্তাহ খানেক পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের নেতৃত্বে চাঁদাবাজি, সিন্ডিকেট বন্ধ, পণ্য ক্রয় বিক্রয়ের পাকা রশিদ সংরক্ষণ করাসহ ১২টি প্রস্তাব দেওয়া হয় জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরে। কিন্তু তিন মাস গেলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না বাজারে। চাল, ডাল, আটা, ডিম, মাংস, পেঁয়াজ, আলু সহ অধিকাংশ নিত্য পণ্য আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।
বছরের শেষের দিকে কৃষকের ঘরে পেঁয়াজ না থাকায় দুই থেকে তিন সপ্তাহ ধরে দাম বাড়া শুরু হয়েছে, যা এখনো বাড়ছে। রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য স্থানে দেশি পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০টাকা কেজি টাকা দরে। আর আমদানি করা পেঁয়াজ ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে ১২০ টাকা বা তার আশপাশে। দাম বাড়ছে আলুরও ৭০-৬০ টাকা কেজি দরে।
আর পাড়া-মহল্লার দোকানে খুচরায় দাম উঠেছে ৬৫ টাকা পর্যন্ত। রাজধানীর বাজারে সপ্তাহ খানেক আগে লম্বা ও সাদা গোল বেগুন বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা কেজি দরে। আর লাল গোল বেগুন বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা। এখন লম্বা বেগুনের দাম কমে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর সাদা ও লাল গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে। টমেটোর দর ১৮০ টাকা কেজি।
এ ছাড়া প্রতি কেজি চিচিঙ্গা, ধুন্দল, বাঁধাকপি, ঢেঁড়শ, প্রতিটি লাউ ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, আর পটল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। বরবটির কেজি ১০০, বাঁধা কপি প্রতি পিস ৫০ টাকা, ফুলকপি পিস ৬৫ টাকা, বরবটি কেজি ১০০ টাকা। পটল ৫০-৬০ টাকায়, পেঁপে ও মূলা আগের দরেই বিক্রি হচ্ছে, প্রতি কেজি ৪০ টাকায়।
কাঁচা মরিচের দাম অনেক কমেছে। রাজধানীতে মরিচ ১৮০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে। কারওয়ান বাজারের এক মরিচ বিক্রেতা জানান, দেশীয় মরিচ বাজারে আসতে শুরু করছে। এবার দাম আস্তে আস্তে কমে আসবে।
আরও পড়ুনঅর্থনীতিবিদ দ্বীন ইসলাম বলেছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির জন্য তিন মাসের অন্তর্বর্তী সরকারকে দায় দেয়া যাবে না। এই অস্থিরতার পেছনে মূলত পতিত আওয়ামী সরকারের সৃষ্ট বাজার সিন্ডিকেটই দায়ী। যে সিন্ডিকেটকে এখনও ভাঙ্গা যায়নি। তবে সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে এই সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, বাজারের এমন লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ার মূল কারণ হচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট। চাল, শাক সবজি, ডিম, ব্রয়লার মুরগিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ সৃষ্টি করায় তাদের ক্রয়ক্ষমতা নাগালের বাইরে চলে গেছে-এটা আজকের সমস্যা নয়, বিগত ১৫-১৬ বছর যাবতই এ দুরবস্থায় পড়েছে ক্রেতা সাধারণ।
বাজার বিশ্লেষকরা পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় সময়মতো পদক্ষেপ নিতে না পারায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দীর্ঘদিন যাবত। এ বিষয়ে কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের এক কর্মকর্তা বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার পণ্য বাজারে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু আগের সরকারের আমলারাই রয়ে গেছে এবং ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটের সঙ্গে তাদের যোগ সাজশ আছে। তাই নিত্য পণ্যের দাম কমছে না।
এটা সত্য, ৫ আগষ্টের পর পণ্যের দাম কমেছিল। কয়েকদিন পর সিন্ডিকেট দেখল তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এই ফাঁকে তারা আবার দাম বাড়িয়ে দিল। আবার অনেক পণ্য আমদানি করা হচ্ছে তারপরও দাম কমছে না সিন্ডিকেটের কারণে।
অবৈধ বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পাশাপাশি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো এ ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে- এটিই প্রত্যাশা।
মন্তব্য করুন