থেমে নেই সড়কে মৃত্যু
ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে এ দেশে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে। সরকারের উদ্যোগে দেশে সংস্কার চলছে। কিন্তু রাস্তায় সড়ক দুঘর্টনা কিছুৃতেই থামানো যাচ্ছে না। সড়ক দুর্ঘটনা আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোথাও সড়ক চলাচলে কোনো শৃঙ্খলা আছে বলে মনে হয় না। বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেই। চলছে অবৈধ যানবাহন। মূল্যবান প্রাণ যাচ্ছে সড়ক-মহাসড়কে সড়কে শৃঙ্খলা না থাকায় এবং দেখভালের সংকটে সড়ক হয়ে উঠেছে মৃত্যুপুরী।
প্রায় প্রতিদিনই পথে পথে মৃত্যুর মিছিল। গাড়িচাপা, মুখোমুখি সংঘর্ষ, এক গাড়িকে আরেক গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ ঝরছে হরহামেশা। সারা দেশের সড়কে কোন গাড়ি সর্বোচ্চ কত গতিতে চলতে পারবে, তা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু একই সড়কে বিভিন্ন ধরনের গাড়িকে ভিন্ন গতিতে চলতে বলা হয়েছে। লেনভিত্তিক গতি আলাদা করা হয়নি। ফলে সড়কে এখনও ফেরেনি শৃঙ্খলা।
খেয়াল-খুশিমতো চলছে গাড়ি, বেপরোয়া ব্যাটারিচালিত রিকশা। রাজধানী ঢাকার ফ্লাইওভারগুলোতে এখন দিন দুপুরেই ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যানগাড়ি প্রধান সড়কগুলোতে পুরনো ভাঙা বাস চলছে- যার বেশির ভাগই কালো ধোঁয়া ছাড়ছে। আগে অলিগলিতে ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা চললেও এখন কোনো কিছু তোয়াক্কা না করেই মূল সড়কে যাত্রী বহন করছে তারা।
মোড়ে মোড়ে মোটর সাইকেল চালকরা যাত্রী তুলতে জটলা করছেন। বাসচালকরা আগের মতোই বাসস্ট্যান্ডগুলোতে যাত্রী তোলা ও নামিয়ে দেয়ার পরিবর্তে যখন তখন রাস্তার মাঝেই যাত্রী নামাচ্ছে ও ওঠাচ্ছে। যানবাহনগুলোর গতিও বিপজ্জনক। শহরজুড়ে বিশৃঙ্খলায় বিরক্ত যাত্রীরা।
সম্প্রতি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, গত একদিনে সাত জেলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে জানা যায়, মাদারীপুরের শিবচরে দুই মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৪ জন, দিনাজপুরে পৃথক দুটি দুর্ঘটনায় ৩ জন, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে বাসের ধাক্কায় মামা-ভাগ্নে, ঝালকাঠির রাজাপুরে মাহিন্দ্রা ও ট্রলির মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত হয়েছেন। অন্য জেলাগুলোর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা, সিলেট ও ঝিনাইদহে একজন করে নিহত হয়েছেন। তথ্য মতে, রোববার রাত ১০টার পর থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দুর্ঘটনাগুলো ঘটে।
আরও পড়ুনএদিকে গত শুক্রবার সড়কে ঝরলো চারপ্রাণ। রাজধানীর যাত্রা বাড়ীর মাতুয়াইলে দ্রুতগামী একটি গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় (৪৫) এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। মানিকগঞ্জে পিকআপ মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। ভোলায় দুই মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় এক আরোহী নিহত হয়েছেন।
দেশে প্রতি বছর দুর্ঘটনায় ১৮হাজারেরও বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। আহত হচ্ছে প্রায় সমান সংখ্যক মানুষ। অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। অনেক পরিবার সর্বস্বান্ত হচ্ছে। কিন্তু সড়কে শৃঙ্খলা ফিরছে না। বিভিন্ন গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, অধিকাংশ দুর্ঘটনার জন্য বাস- ট্রাক দায়ী হলেও এসব মৃত্যুদানবের গতি নিয়ন্ত্রণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সড়ক-মহাসড়কে সিসি ক্যামেরা বসানো সম্ভব হয়নি। গতিসীমা অতিক্রমকারী যানবাহনের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো সুযোগও নেই। ফলে রাস্তায় উঠেই চালকরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
দেশে সড়কে আইন মানার প্রবণতা নেই বললেই চলে। সড়ক জুড়ে বিরাজ করছে চরম বিশৃঙ্খলা। পরিবহণ খাতে বিশৃঙ্খলার মূল কারণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অদক্ষতা ও পেশাদারি মনোভাবের অভাব। এসব দিকে দৃষ্টি দিলে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ কোনো অসম্ভব কাজ নয়। এ জন্য দরকার সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর ও জনগণের ইতিবাচক চিন্তা এবং সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথোপযুক্ত বাস্তবায়ন।
আমরা বলতে চাই, দক্ষ চালক নিশ্চিত করার পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা যেসব কারণে ঘটছে সেগুলোকে সামনে রেখে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। দক্ষ ও শিক্ষিত চালকের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি ট্রাফিক আইন মেনে চলার জন্য জনগণকেও উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকেই আন্তরিক, সচেতন, দৃঢ় ও দায়িত্বশীল ভূমিকা আশা করি।
মন্তব্য করুন