নদী বাঁচুক দেশ বাঁচুক
সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প যাতে জলাধারের অবাধ প্রবাহে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, সে ব্যাপারে বারবার নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনেও জলাশয় ভরাট নিষিদ্ধ। কিন্তু আইন কানুন, সরকার প্রধানের নির্দেশনা, কেউই কানে তুলছে না।
ত্রাতা হয়ে এগিয়ে আমার কথা যাদের উল্টো তারাই নির্মূল করছে জলাভূমি। পত্র-পত্রিকার খবরে বলা হয়, জলাশয় দখলের দৌড়ে আছে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান। আইনের তেমন কার্যকারিতা না থাকায় দখলকান্ডে পিছিয়ে নেই বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও প্রভাবশালী ব্যক্তিও।
দখলদার চেনা গেলেও জলাভূমি থেকে তাদের তাড়ানোর তাড়া নেই কোনো সরকারি সংস্থার। কোনো কোনো সময় জলাশয় উদ্ধারের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ আদালতে গেলে দখলদার পাল্টা মামলা ঠুকে থামিয়ে দেয় উচ্ছেদ প্রক্রিয়া। ফলে রাজধানীসহ সারা দেশে ধুকছে জলাধার, ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে জলাশয়।
এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা রকম প্রভাব খাটিয়ে নদী ও খালের তীরবর্তী স্থান দখলে নিয়ে অনেকে বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন রকম স্থাপনা নির্মাণ করেছে। এমনকি নদীর তীরবর্তী স্থানে অবৈধভাবে হাটবাজারও বসানো হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, নদী-খালের জমি দখলদারদের স্থানীয় ভূমি অফিসের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারিদের যোগসাজশ রয়েছে।
এসব কর্মকর্তা-কর্মচারির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। নদী দখলের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের কেউ যুক্ত আছেন কি-না তাও খতিয়ে দেখতে হবে। মনে রাখতে হবে, সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে নদ-নদী, খাল-বিল, অবৈধভাবে দখল হয়ে যাওয়ার কারণে স্বাভাবিক পানি প্রবাহের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে, নদ-নদী সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে।
এতে বর্ষাকালে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি অনেক স্থানে বৃষ্টির পানি জমে ফসল ও বাড়িঘর তলিয়ে যায়। কোনো কোনো স্থানীয় প্রভাবশালী দখলদার ভুয়া দলিল ও কাগজপত্র তৈরি করে মালিকানা স্বত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টাও চালিয়ে যায়। তবে যেভাবেই দলিল করা হোক না কেন, কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নিলে নদী রক্ষা আইন অনুযায়ী তীরের দখলকৃত জায়গা যে কোনো সময় উদ্ধার করা সম্ভব। দেশের সব নদী-জলাধারের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য ফিরিয়ে আনতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
আরও পড়ুনজলাধার যেমন হারিয়ে যাচ্ছে, তেমনি নদীর আপন গতিতে চলা বাধাগ্রস্ত করছে মানুষ। সভ্যতার নামে যে নদীর চলাকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে সে নদীকে কেন্দ্র করেই কিন্তু মানবসভ্যতা বিকশিত হয়েছে। নদীকে থামানো মানে প্রকৃতিকে থামানো। প্রকৃতিকে থমকে দিয়ে মানব সভ্যতা গতি পাবে এ ধারণা যে মানুষ এখন উপলব্ধি করতে পারছে, সে জন্য সারা পৃথিবীতে চলছে নদী বাঁচাও আন্দোলন, জলাধার রক্ষা আন্দোলন প্রভৃতি। অনেকাংশে নদীর পানি আর বহমান নয়।
বর্জ্যরে ভারে পানি স্থবির হয়ে আছে। পানিতে অক্সিজেন নেই। নদীর প্রাণীগুলো মরে যাচ্ছে। এ কাহিনী পুরনো। তবুও আন্দোলনকারী এবং মিডিয়া এ বিষয়টি নিয়ে বলে যাচ্ছে যদি কারো ঘুম ভাঙে। পরিসংখ্যানও দিচ্ছে জলাশয় শূন্য হওয়ার প্রমাণ। ২৮ বছরের মধ্যে রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় জলাধারের পরিমাণ কমে তা এখন দাঁড়িয়েছে ৭ ভাগের ১ ভাগে।
১৯৯৫ সালে ঢাকার সাড়ে ২০ শতাংশ জায়গাজুড়ে ছিল জলাশয়ের পরিধি। ২০২৩ সালে এসে তা ৩ শতাংশেরও নিচে এসে ঠেকেছে। হাওড় এলাকায় গত তিন দশকে ৮৭ শতাংশ জলাভূমি কমে ৪০০ বর্গ কিলোমিটারে নেমেছে। এতে বন্যার ব্যাপকতা বাড়ছে বলে মত দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
নদী-জলাশয় রক্ষায় দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় ও নির্দেশনা বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। নদী উদ্ধারে জাতীয় নদী রক্ষা সুপারিশও কাজে আসছে না। দেশের নদ-নদী, খাল-বিল, জলাধার অব্যাহতভাবে দখল হয়েছে, হচ্ছে।
মনে রাখতে হবে, নদ-নদী জলাধার না বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে না। শুধু বলেই খালাস হলে চলবে না। নদী রক্ষার্থে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক হতে হবে। আমরা আশা করি, নদী-খাল জলাশয় রক্ষায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো সমন্বিত ব্যবস্থা নেবে।
মন্তব্য করুন