সিএএর নামে বাঙালি দলন
দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্র সমূহ ঐতিহাসিকভাবে জাতি ধর্ম ভাষা সংস্কৃতির সাধারণ উত্তরাধিকারের এক ঐতিহাসিক মেলনবন্ধনে আবদ্ধ। কিন্তু এটা সব সময় এক গতিতে চলেনি। ভারত উপমহাদেশে দেখা গেছে বারংবার রক্তাক্ত সাম্প্রদায়িক হানাহানি।
স্রেফ রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে সাম্প্রদায়িক শক্তি এ উপমহাদেশে রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছে। এ হানাহানি আজতক থামেনি। ভারতে উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠী ক্ষমতায় আসীন। তাদের চাওয়া এ হানাহানি আরো বাড়ুক। ভারতে জাতীয় নির্বাচনের আগে বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ কার্যকরের বিরুদ্ধে আসাম, তামিলনাড়ুসহ বিভিন্ন রাজ্যে বিক্ষোভ হয়েছে।
এ আইনের বিরোধিতায় সরব হয়েছেন বিরোধী দলগুলোর নেতারা। তাদের আশংকা, সিএ এ কার্যকর হলে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে শরণার্থীর ঢল নামতে পারে। প্রকট হতে পারে সংরক্ষিত জনজাতির ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত সংকট। তামিলনাড়ুর রাজধানী চেন্নাইতে মোমবাতি জ্বালিয়ে শত শত মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেয়।
এ পরিস্থিতিতে রাজধানী নয়াদিল্লিতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নতুন এ নাগরিকত্ব আইন নিয়ে নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বললেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার হাবড়ার প্রশাসনিক সভায় এ আইনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মমতা বলেন, ভোটের আগে বিজেপি বিভাজনের খেলা খেলতেই এটা করছে।
না হলে চার বছর বসে রইল কেন? তারা আবার বাংলাটাকে ভাগ করতে চায়। বাঙালিকে তাড়াতে চায়। তিনি বলেন, ২০১৯ সালে আসামে এনআরসির নামে ১৯ লাখ মানুষের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। তাদের মধ্যে ১৩ লাখই বাঙালি হিন্দু। এর আগে সোমবার মমতা এ আইন তার রাজ্যে কার্যকর হতে দেবেন না বলে ঘোষণা দেন। সিএএ বিরোধিতার সুর উঠেছে কেরালায়ও।
রাজ্যটির মূখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নও বলেছেন, তারা সিএএ বাস্তবায়িত হতে দেবেন না। একই সুরে কথা বলেছেন তামিলনাড়ুর মূখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিনও। তিনি বলেন বিজেপি সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে যাচ্ছে। রাজ্যে এ কালো আইন কার্যকর করা হবে না। সোমবার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সিএএ কার্যকরের ঘোষণা দেন।
এতে প্রথমবারের মতো ভারতের নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে আবেদনকারীদের ধর্মীয় পরিচয় দিতে হবে। সংশোধিত আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে হিন্দু, বৌদ্ধ, পার্শি, শিখ, জৈন ও খ্রিস্টানরা ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে থেকে ভারতে আশ্রয় নিয়ে থাকলে দেশটির নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আইনটিতে মুসলিমদের কথা উল্লেখ নেই।
আরও পড়ুনআসামের ১৬টি বিরোধী দলের জোট ইউওএফএ হুশিয়ারি দিয়ে বলেছে তারা রাজ্য জুড়ে হরতাল পালন করবে, ঘেরাও করা হবে জনতা ভবন। তারা দিনটিকে আসামের ইতিহাসে কালো দিন বলেও অভিহিত করেছে। সিএএ কার্যকরের প্রতিবাদ জানিয়েছে কংগ্রেস। দলটির নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, লোকসভা নির্বাচনের আগে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকরের ঘোষণা মেরুকরণের চেষ্টা।
দিল্লির মূখ্যমন্ত্রী ও আপ নেতা অরবিন্দ কেজরিয়াল বলেছেন, বিজেপি এমন সময় সিএএ কার্যকর করল, যখন দরিদ্র ও মধ্যবিত্তরা মূল্যস্ফীতির কারণে কাতরাচ্ছে। বেকার যুবকরা কর্মসংস্থানের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছে।
আমরা কয়েক বছর আগে দেখেছি আসামে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনের (এনআরসি) তালিকায় ৪০ লাখেরও বেশি বাসিন্দাকে বাদ দেওয়া হয়েছিল তাদের নাগরিকত্ব প্রমাণে সংশয় থাকার কারণে। বাদ পড়াদের প্রায় সবাই বাংলাভাষী এবং এদের বেশির ভাগ মুসলমান।
তাজ্জব করার মতো ঘটনা হলো, বাদ পড়া তালিকায় আছেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ফখরুদ্দিন আলী আহমেদের পরিবারের সদস্যদের নামও। এনআরসিতে বাদ পড়াদের প্রায় সবাই বাংলাভাষী এবং আসামের কোনো কোনো মহল তাদের প্রকারান্তরে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে অভিহিত করছে।
যে ঘটনার উষ্ণতা বাংলাদেশকেও স্পর্শ এবং উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করে। যদিও ব্যাপারটা ভারতের নিজস্ব ঘরোয়া ব্যাপার। কিন্তু আশঙ্কা থাকে যে এটা আর নিজস্ব ঘরোয়া থাকবে না। সেখানে যে হঠকারিতা চলছে তা দুর্ভাগ্যজনক। আমরা এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবার সুবুদ্ধি ও সুবিবেচনার ওপর আস্থা রাখতে চাই।
মন্তব্য করুন