ভিডিও রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪

বাড়ছে আত্মহত্যা

প্রতীকী ছবি

দেশে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় আত্মহত্যার ঘটনা আশংকাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এর তথ্য বলছে, প্রতি বছর দেশে আত্মহত্যায় মারা যাচ্ছে ১৩ হাজার মানুষ।

এ হিসাবে গড়ে দৈনিক মারা যায় ৩৫ জন মানুষ। বিভিন্ন গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে, যারা আত্মহত্যা করছে তারা বয়সে কিশোর ও তরুণ এবং এদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই শিক্ষার্থী। এই তালিকায় আরও আছে বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ।

আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, পারিবারিক কলহ, অভিমান, ঋণগ্রস্ত মানুষ, বেকার যুবক, প্রেমঘটিত কারণ, যৌন নির্যাতন এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে মানুষ আত্মহত্যা করছে। আত্মহত্যার হিড়িক এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সাম্প্রতিক সময় লাইভে এসেও বেশ কজন মানুষের আত্মহত্যার ঘটনা ভাইরাল হয়ে যায়।

এতে মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। তারা বলছেন, করোনা পরবর্তী পৃথিবীতে শিশু থেকে বয়স্ক এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আগের চেয়ে বেশি মানসিক রোগে আক্রান্ত। এদের কেউ চিকিৎসা নিচ্ছে তো কেউ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। ফলে মানসিক বিষাদগ্রস্ত হয়ে এই রোগীরা এক পর্যায়ে আত্মহত্যায় প্ররোচিত হচ্ছে।

সম্প্রতি পাবনা মানসিক হাসপাতালের উদ্ধৃতি দিয়ে পত্র-পত্রিকায় বলা হয়েছে মধ্যবয়সীরা এখন বিভিন্ন ধরনের মানসিক রোগের ধরন নিয়ে সেখানে বেশি ভর্তি হচ্ছেন। এদের বয়স ৩০ থেকে ৫০ বছর। বিশেষজ্ঞরা আত্মহত্যার অন্যতম কারণ হিসেবে  বিষন্নতাকে চিহ্নিত করছেন।

আত্মহত্যা নিয়ে দেশে যে গবেষণাগুলো প্রকাশিত হয়েছে দেখা যায় এর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পারিবারিক চাপে একজন আত্মহত্যা করছে। ক্ষোভের বা লজ্জার প্রকাশ হিসেবে অনেক মেয়ে শিক্ষার্থীও আত্মহত্যা করছে। সম্প্রতি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা গেল, গত বছর দেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৫১৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।

তাদের মধ্যে ৬০ দশমিক ২ শতাংশ রয়েছেন নারী। শিক্ষার স্তর বিবেচনায় ৪৪ দশমিক ২ শতাংশ রয়েছে স্কুলগামী শিক্ষার্থী। ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ২০২৩ সালের আত্মহত্যার চিত্র তুলে ধরেন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের এক সমীক্ষায়।

আরও পড়ুন

সম্প্রতি এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ২০২৩ সালের আত্মহত্যার চিত্র তুলে ধরেন সংগঠনটির রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ইউনিটের টিম লিডার।

জানানো হয় ২০২৩ সালে ২২৭ জন স্কুল শিক্ষার্থী (৪৪.২০%) আত্মহত্যা করেন। কলেজ শিক্ষার্থী রয়েছেন ১৪০ জন (২৭.২%), বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ৯৮ জন (১৯.১%) এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ৪৮ জন (৯.৫%)। প্রসঙ্গত, এর আগে এটাও জানা গিয়েছিল দেশে আত্মহত্যাজনিত অনাকাঙ্খিত মৃত্যু বাড়ছে। আত্মহত্যা যে জীবনের কোনো সমাধান নয়, এমন বিষয়কে সামনে রেখে প্রচার-প্রচারণা ও সচেতনতা বাড়াতে হবে।

মনো চিকিৎসকরা বলছেন, বেশির ভাগ আত্মহত্যার সঙ্গে মানসিক রোগের সম্পর্ক রয়েছে। পারিবারিক জটিলতা, সম্পর্কের অবনতি, পড়াশোনা নিয়ে হতাশা, বেকারত্ব ও আর্থিক সংকটের ফলে আত্মহত্যার ঘটনা বাড়ছে বলেও এর আগে আলোচনায় এসেছে।

ইদানিং পুরুষের চেয়ে  নারীদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে গেছে। আত্মহত্যার ৯৭০টি ঘটনা তারা বলেছে, বাংলাদেশে নারীদের ওপর শারীরিক, যৌন ও মানসিক নির্যাতন এবং ইভটিজিংয়ের ঘটনা বাড়ায় অনেকে পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে আত্মহত্যা করছেন।

অবিবাহিত নারীদের ক্ষেত্রে বিয়ের আগে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য হওয়া অথবা স্বেচ্ছায় যৌন সম্পর্ক স্থাপনের পর গর্ভধারনের কারণে অনেকে আত্মহত্যা করেন। তবে দেশে আবেগতাড়িত আত্মহত্যার পরিমাণ বেশি, এটি একটি মানসিক সমস্যা।

জীবন মূল্যবান, তা আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে যাবে এমনটি কাম্য হতে পারে না। নিজের জীবনকে ভালোবেসে বেঁচে থেকেই জীবনের সমাধান খুঁজতে হবে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে ব্যবস্থা : ডিএমপি

বগুড়ায় জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধন

আ’লীগ নিষিদ্ধের ব্যাপারে যা জানালেন চিফ প্রসিকিউটর

আ’লীগ কার্যালয়ের সামনে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ

সাতক্ষীরায় মা‌হিন্দ্রা-বাস সংঘ‌র্ষে ব্যবসায়ী নিহত,আহত ৬

বিমানবন্দরে বন্ধুকে বিদায় দিয়ে বাড়ি ফেরার প্রাণ গেল তিন বন্ধুর