ভোটাররা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিত্বে নতুন মুখ চাইলেও, জাতীয় প্রতিনিধিত্বে চান না
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সরকার পেয়েছে ১২টি। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার টানা চতুর্থ মেয়াদে চলতি বছরে শপথ নিয়ে সরকার পরিচালনা করছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগে বেগম খালেদা জিয়াও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন চারবার। দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশে^র দরবারে স্বাধীন মর্যাদা পাওয়ার আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি রেখে অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন সৈয়দ তাজউদ্দিন আহমেদ। ১৯৭৩ সালে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন শেখ মজিবুর রহমান।
১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করেন খালেদা জিয়া। ১৯৯৬ সালে নির্বাচিত হয়ে আবারও সরকার গঠন করে বিরোধীদের আন্দোলনের তোপে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি। পরবর্তীতে ২০০১ সালে জোট সরকার গঠন করে আবারও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে সরকার গঠন করেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাঝে ২০০১ সালে পরাজয়ের পর দেশ শাসনে আবারও আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে ২০০৮ সালে। ২০১৪, ২০১৮ এবং সর্বশেষ চলতি বছর ২০২৪’র ১০ জানুয়ারি সরকার হিসেবে চতুর্থবার এবং তিনি পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। মোটকথা বাংলাদেশ জন্মলগ্নের পরই ‘প্রধানমন্ত্রী’ বা জাতীয় নেতৃত্ব কেবলমাত্র নতুন মুখ পেয়েছিল দুইবার স্বল্প মেয়াদে। এরপর বারবার একই মুখ বা নেতৃত্ব ঘুরেফিরে বাংলাদেশের ‘প্রধানমন্ত্রী’ পেয়েছে ।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিত্বে সাম্প্রতিককালে ষষ্ঠধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদের মধ্যে তিনশ’র বেশি উপজেলার মানুষ নির্বাচিত করেছেন নতুন মুখ। নির্বাচন ব্যবস্থা, নির্বাচনি পরিবেশ, সরকারের প্রভাব নানা বিষয় নিয়ে জোড় বিতর্ক থাকলেও বাস্তবতা এমনই। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চার ধাপে ৪৪২ উপজেলার মধ্যে তিনশ’র বেশি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে নতুন মুখ নির্বাচিত হয়েছেন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে হলফনামা ও চূড়ান্ত ফলাফল বিশ্লেষণ করে জানাচ্ছে যে, স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে তিনটি পদের ভোটে ১ হাজার ২১০ জন নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে ৯৩০ জনই নতুন মুখ। তাদের মধ্যে ২৭৯ জন জনপ্রতিনিধি রয়েছেন যারা ৫ম উপজেলা পরিষদে ছিলেন।
টিআইবি বলছে, দেশে উপজেলার সংখ্যা ৪৯৫টি। এবার চারধাপে উপজেলা পরিষদ ভোটের ঘোষণা দিয়েছিল কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন। তবে ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে কমিশন তা আর করতে পারেনি। চারধাপে ৪৪২ উপজেলায় ভোট শেষ করে কমিশন।
১৯ উপজেলায় স্থগিত নির্বাচনের ভোট হয়েছে ৯ জুন। সবমিলিয়ে ৪৬১ উপজেলায় ভোট শেষ হয়েছে। আইনি জটিলতা ও মেয়াদ শেষ না হওয়ায় বাকি ৩৪ উপজেলায় ভোট হবে পরে। ভাইস চেয়ারম্যান পদে নবনির্বাচিত মুখ ৩১৭ জন। বিগত ৫ম উপজেলা পরিষদে ছিলেন ৬৫ জন। নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩১০ জন নতুন মুখ। ৮৪ জন নারী ভাইস চেয়ারম্যান রয়েছে যারা গত উপজেলায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। টিআইবি’র তথ্য অনুযায়ী, ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনে তিন পদে মোট প্রার্থী ৫ হাজার ৪৭২ জন। চেয়ারম্যান পদে ১ হাজার ৮৬৪ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ হাজার ৯৫ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে অংশগ্রহণ করেছেন ১ হাজার ৫১৩ জন।
আরও পড়ুনবাংলাদেশের ভোটাররা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিত্বে বারবার পরিবর্তন পছন্দ করলেও জাতীয় প্রতিনিধিত্বে কী আসলে পরিবর্তন করছেন না? অথবা, নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ বা বিরাট অংশ বিমুখতা দেখাচ্ছেন যাতে করে দেশ নতুন কোন সরকারপ্রধান পাচ্ছে না। বাংলাদেশের নতুন কোন, একদম নতুন মুখ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ কারা রুদ্ধ করে রেখেছেন জনগণ নাকি রাজনীতিবিদরা? জনগণ যদি পথরোধ করেন তাহলে কী তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? রাজনীতিবিদরা তাদের নিজেদের অবস্থান ধরে রাখার মাধ্যমে অথবা ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে পরিবারতন্ত্রের মাধ্যমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিত্ব রাখছেন নিজেদের নিয়ন্ত্রণে। বাংলাদেশে ভবিষ্যৎ শাসনতন্ত্র আরও উন্নত করতে রাজনীতিবিদদের সাথে সাথে দায়িত্ব নিতে হবে জনগণকেও।
এই লেখকের আরোও লেখা পড়ুন: জলবায়ুর দ্রুত ক্ষতি পরিবর্তন রোধে প্রয়োজন জনসচেতনতা
গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় গঠনমূলক সরকার ব্যবস্থা প্রকৃত অর্থে বাস্তবায়ন করতে জনগণ-শাসক-বিরোধীসহ সকল পক্ষকে সম্মিলিতভাবে জবাবদিহিতামূলক নির্বাচন কাঠামোর বাস্তবায়ন করতে হবে। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থায় নতুন মুখ আসবে কেবলমাত্র রাজনীতিবিদদের স্বদিচ্ছা ও জনগণের প্রবল ইচ্ছায়।
হাসান মো:শাব্বির
সাব-এডিটর, দৈনিক করতোয়া (অনলাইন)
মন্তব্য করুন