ভিডিও রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হোক রাজনীতিমুক্ত

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হোক রাজনীতিমুক্ত, ছবি : দৈনিক করতোয়া

বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড-ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের অনুকরণে বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতির সূচনা হয়। তখন ছাত্ররাজনীতির উদ্দেশ্য ছিল ছাত্র-ছাত্রীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, পাঠ্যসূচিবহির্ভূত কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ও স্বাধীন মতামত প্রকাশের সহায়ক ভূমিকা পালন করা।

সময়ের পরিক্রমায় আজ সারাদেশে তা এক অসহনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। সর্বশেষ কোটা আন্দোলন-২০২৪ এ সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের বিরুদ্ধে ছাত্ররাজনীতির বিরূপ প্রভাব পরিলক্ষিত। এ আন্দোলনে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের বিরুদ্ধে স্বৈরাচার সরকারের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে ছাত্রনেতা-কর্মীরা। এসব চাটুকারদের সামাল দিতে বহু ছাত্র-ছাত্রী, সাধারণ মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে রাজপথে।

আজকের ছাত্রসমাজ আগামীর ভবিষ্যৎ। জাতির কর্ণধারও বটে। বাংলাদেশে ছাত্র-সমাজে অতীতের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও ঐতিহাসিক অর্জন রয়েছে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম, ১৯৯০ সালের স্বৈরাচারী এরশাদবিরোধী আন্দোলন ও সর্বশেষ ২০২৪ এ কোটা আন্দোলনের মাধ্যমে স্বেরাচারী সরকারের পতনে ছাত্রসমাজের সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ ও ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য।

ছাত্র রাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল অতীত থাকার পরও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, সচেতন ব্যক্তি ও অভিভাবকমহল ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি তোলেন। এর প্রধান কারণ হলো- ১৯৯০ সালের পর ছাত্র রাজনীতিতে পচন শুরু হয়েছে। শিক্ষাঙ্গণে ছাত্র নামধারী এক ধরনের সন্ত্রাসীর অনুপ্রবেশ ঘটেছে। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য আজ ছাত্র রাজনীতির সোনালি অতীত বিলীন হতে যাচ্ছে। কিছু সন্ত্রাসীদের কাছে আমাদের দেশের হাজার হাজার মেধাবী শিক্ষার্থী জিম্মি হয়ে আছে। শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে।

একটি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হলো বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের সেরা মেধাবীদের স্থান হয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। আজ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হিংসাত্মক ছাত্র রাজনীতি দেখলে বোঝা যায় না এরা কি ছাত্র নাকি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সন্ত্রাসী। ছাত্র নামের সন্ত্রাসীদের কারণে বাব-মা ছেলেমেয়েকে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে সবসময় আতঙ্কের মধ্যে থাকে।

কারণ অনেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে লাশ হয়ে মায়ের কোলে ফিরছে। বাংলার আকাশ-বাতাসে কম্পিত হচ্ছে সন্তানহারা মায়ের কান্না, ভাই হারা বোনের আহাজারি, ছেলে হারা বাবার আর্তনাদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত একজন ছাত্রের দ্বারা বিশ্বমানের গবেষণা প্রকাশ হবে এটাই দেশ ও জাতি প্রত্যাশা করে।

কিন্তু আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। আজ বিশ্ববিদ্যালয় অস্ত্রকারখানা, আবাসিক হলগুলো অস্ত্রাগারে পরিণত হয়েছে। ফলস্বরূপ দেশের শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ বিনষ্ট হয়ে গেছে। যার প্রমাণ বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত বিভিন্ন তালিকায় বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান থেকেই অনুধাবন করা যায়।

একটা সময় বাংলাদেশে সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীরা ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হতো। তখনকার সময়ের ছাত্র নেতারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কথা বলত। তাদের কাছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা খুঁজে পেত নিজেদের আস্থা ও বিশ্বাস।

যখন থেকে ছাত্রদের হাতে খাতা-কলমের পরিবর্তে রিভলবার, পিস্তল, বন্দুক, ককটেল, রামদা, হকিস্টিক, চাইনিজ কুড়াল প্রভৃতি মারণাস্ত্র আসা শুরু হয়েছে, তখন থেকেই মেধাবীরা ছাত্র রাজনীতি থেকে দূরে সরে আসতে থাকে। কারণ এসব অস্ত্র দিয়ে এক ছাত্র কেড়ে নিচ্ছে অন্য ছাত্রের জীবন অথবা তাকে চিরদিনের জন্য পঙ্গু করে দিচ্ছে, যা সম্পূর্ণ অমানবিক।

আরও পড়ুন

আমাদের দেশে কিছু অসাধু, দুর্নীতিবাজ, ভন্ড রাজনীতিবিদ আছে, যারা আমাদের দেশে কালো ছায়ার মতো কাজ করছে। ব্যক্তিস্বার্থে ছাত্র সমাজকে নানা অপরাধমূলক ও সমাজবিরোধী কাজে পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করছে। তারা নিজেদের আধিপত্যও প্রভাব বিস্তারের জন্য ছাত্রদের হাতে মারণাস্ত্র তুলে দিতে দ্বিধা করছে না।

পৃথিবীর এমন কোনো দেশ নেই ছাত্র রাজনীতির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে কিংবা পরীক্ষা পেছানো হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে কয়দিন পরপর ছাত্র রাজনীতির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। জাতির শিক্ষাব্যবস্থায় এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে আমরা পৃথিবীর বুকে কখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব না।

যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে ত্রিশ লাখ মানুষ আমাদের পবিত্র মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে জীবন দিয়েছে তাও বাস্তবায়ন হবে না। তাই চলমান রাজনীতিতে একটি গঠনমূলক পরিবর্তন আনতে হবে। প্রতিহিংসামূলক রাজনৈতিক মনোভাব পরিত্যাগ করতে হবে। ছাত্রদের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য হবে বিদ্যার্জন করা। তবে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে রাজনৈতিকভাবেও সচেতন হতে হবে।

সর্বোপরি দলের স্বার্থকে উর্ধ্বে রেখে দেশ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের বৃহত্তর স্বার্থে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, লেজুড়বৃত্তির ছাত্ররাজনীতি কখনো দেশের উন্নতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে না। ছাত্রদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ গঠন করতে হবে। বাংলাদেশের শিক্ষার মানোন্নয়নে দেশে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেজুড়বৃত্তির ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা একান্ত প্রয়োজন।

একই সাথে শিক্ষক রাজনীতিও বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মানের অবনতির পিছনে অনেকাংশে দায়ী। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও কোনো রাজনৈতিক দলের অনুগামী হওয়া কাম্য নয়। ছাত্রছাত্রীদের মাঝে আদর্শ, মূল্যবোধ, স্বশিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হোক রাজনীতি মুক্ত এটাই প্রত্যাশা করে জাতি।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ,  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

syfulmia888@gmail.com

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সিরিজে সমতা আনলো বাংলাদেশ

রাতেই জিরো পয়েন্টে ছাত্র-জনতা

জবি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ ডিবেটিং ক্লাবের নেতৃত্বে মোস্তাফিজ - জহির

জবি ইসলামিক ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ওয়াহীদ-সৈকত-আকাশ

বগুড়ায় জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধন রোববার

জয়পুরহাটে বীজের গুদামে আগুন