শিশুকে ভালো স্পর্শ ও খারাপ স্পর্শের পার্থক্য যেভাবে শেখাবেন
যৌন নির্যাতন থেকে মুক্ত নয় শিশুরাও। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮১৮টি শিশু ধর্ষণের খবর প্রকাশিত হয়েছে। ২০২০ সালের তুলনায় যা ৩১ শতাংশ বেশি। যার বেশির ভাগ শিশু ধর্ষণ পারিবারিক পরিবেশে পরিচিতদের মাধ্যমেই হয়েছে।
সামাজিক নানা অসঙ্গতির কারণে সবক্ষেত্রে মেলে না সঠিক বিচার। ফলে অপরাধীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে দিনদিন। যৌন নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচাতে শিশুকেও প্রথম থেকেই শিক্ষিত করে তোলা প্রয়োজন। ছোট থেকেই ভালো স্পর্শ- খারাপ স্পর্শের পার্থক্য শিশুকে বুঝিয়ে দিন। শিক্ষাটা শুরু হোক বাড়ি থেকেই।
ভালো স্পর্শ, খারাপ স্পর্শ
মা-বাবা, ভাই-বোন, দাদি-নানি—সবাই শিশুকে আদর করেন। বাড়িতে অন্য কেউ বেড়াতে এলেও শিশুকে কাছে ডাকেন, আদর করতে চান। তবে শিশুকে আপনি শিখিয়ে রাখুন, পরিবারের নিকটতম সদস্যের আদর তার যেমন ভালো লাগছে, অন্য কারও আদরে তেমনটা না-ও হতে পারে। যে স্পর্শ শিশুর একান্ত ব্যক্তিগত সীমাকে অতিক্রম করে না, যে স্পর্শে শিশু স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করে, সেটাই ভালো স্পর্শ। এর উল্টোটাই হলো খারাপ স্পর্শ।
শিশুর যখন পরিবারের বাইরেও নিজস্ব একটা জগৎ গড়ে উঠতে থাকে, সেই সময়ও কিছু বিষয় শিখিয়ে দিন। বন্ধুর হাত ধরা, শিক্ষকের স্পর্শ, অভিভাবকের উপস্থিতিতে চিকিৎসকের স্পর্শ এগুলোকে ভালো বা খারাপ স্পর্শের সংজ্ঞায় ফেলা যায় না। এগুলো হলো ‘ইটস ওকে টাচ’। অর্থাৎ ভালোও নয়, মন্দও নয়। তবে শিক্ষক বা বন্ধুও যদি ‘একান্ত’ অংশে স্পর্শ করতে চায়, সেটিরও প্রতিবাদ করতে হবে। শিশুকে এই সাহসটুকু পরিবার থেকেই দিতে হবে।
শিশুকে যেভাবে সচেতন করে তুলবেন
শিশুকে শিখিয়ে দিন, কারও আদরে অস্বস্তি হলে সে যাতে সঙ্গে সঙ্গে তার কাছ থেকে সরে যায়। কেউ যদি জবরদস্তি আদর করতে চায় কিংবা তার শরীরের কোনো ‘একান্ত’ অংশে স্পর্শ করতে উদ্যত হয়, সে যাতে তখনই চিৎকার করে ওঠে। ‘তুমি আমাকে এভাবে ধরতে পারবে না,’ এমন কিছু বলে ওই জায়গা থেকে সরে অন্য কোথাও চলে যায়, যেখানে পরিচিত অনেক মানুষ আছে।
আরও পড়ুনঅন্য ব্যক্তিও যদি তাঁর শরীরের কোনো ‘একান্ত’ অংশ দেখাতে চায় বা শিশুকে এসব অংশ স্পর্শ করতে বলে তাহলেও একইভাবে চিৎকার করে সে যেন সরে যায়।
এ ধরনের যেকোনো কিছু ঘটলে সে যেন মা-বাবাকে নির্দ্বিধায় জানায়। এমনকি যদি সেই মানুষটা শিশুর আপন চাচা, মামা, খালা বা ফুপুও হয়ে থাকে।
শিশুকে বুঝিয়ে বলুন, ‘একান্ত’ অংশে এমন স্পর্শ বা স্পর্শের চেষ্টা কখনোই এমন কোনো ‘সিক্রেট’ নয়, যা সে আপনার কাছ থেকে গোপন করবে।
কেউ যদি বলে, ‘দেখি তো, কাপড় খুললে তোমাকে কেমন সুন্দর লাগে?’ কিংবা কাপড় সরিয়ে ছবি তুলতে বলে, তাতেও যাতে সম্মত না হয় সে।
বন্ধুরা যদি এমন কোনো ছবি দেখায়, যাতে অন্য কারও ‘একান্ত’ অংশ দেখা যাচ্ছে, সেখান থেকেও সে যাতে সরে আসে।
অন্যের শিশুকে আদর করতে অনেকে অতিরিক্ত উৎসাহ দেখান। অধিকাংশ মানুষেরই তেমন খারাপ কোনো উদ্দেশ্যই থাকে না। কিন্তু শিশুটি এমনিতেই এমন আদর, চুমু বা স্পর্শ অপছন্দ করতে পারে। মা-বাবা অনেক সময় শিশুকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে কারও কাছে যেতে বলেন। এটা করা যাবে না। যে কারওই উচিত যেকোনো শিশুকে স্পর্শ করার আগে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা। এরপর সে স্বস্তিবোধ করলে তখন তিনি তাকে কিছুটা আদর করতে পারেন। তবে সেটিও এমনভাবে করা উচিত, যাতে তার শরীরের ‘একান্ত’ অংশে স্পর্শ না হয়।
মন্তব্য করুন