ভিডিও

কোরআন সুন্নাহর আলোকে মাতৃভাষার গুরুত্ব

মোহাম্মদ মোস্তাকিম হোসাইন

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৪, ০৬:১০ বিকাল
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৪, ০৬:১০ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

ভাষা আল্লাহপাকের অন্যতম নিয়ামত। মানুষই একমাত্র বিভিন্ন ভাষায় কথা বলতে পারে। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বর্ণের বিভিন্ন গোত্রের মানুষ বিভিন্ন ভাষায় কথা বলে কিন্তু  প্রাণীগুলো সব একই ভাষায় কথা বলে গরু ছাগল যে দেশেই থাক না কেন তাদের ভাষা একই শুধুমাত্র মানুষের বেলায় ব্যতিক্রম ।পবিত্র কোরআনুল কারিমে বর্ণিত হয়েছে, ‘আর তার নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য।’ (সুরা রুম, আয়াত : ২২, পারা ২১)।

মা, মাতৃভাষা ও মাতৃভূমি- এ তিনটি শব্দ পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের কাছে পরম আবেগের। মাতৃভাষা মানে মায়ের ভাষা। মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষ। তিনি তাকে শিখিয়েছেন ভাব প্রকাশ করতে।’ (সুরা আর রহমান, আয়াত : ০৩-০৪, পারা : ২৭)।

মানুষের মুক্তির পয়গাম নিয়ে পরিপূর্ণ জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে সব ধরনের সমস্যার কঠিন ও নির্ভুল সমাধানের নিমিত্তে যুগে যুগে মহান আল্লাহতায়ালা যত নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন, সবাইকে স্বজাতীয় ভাষায় কিতাব প্রেরণ করেছেন এবং সব আসমানি কিতাবকে তাদের নিজ নিজ মাতৃভাষায় অবতীর্ণ করেছেন।

যেমন : মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি প্রত্যেক রাসুলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি তাদের কাছে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন এবং তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ৪, পারা : ১৪)।

আল্লাহ তাআলা  কোরআনুল কারিম মাতৃভাষায় অবতীর্ণ যদি না করতেন তাহলে আরবের মূর্খ পন্ডিতরা কী করত এ প্রসঙ্গে মহান প্রভু বলেন, ‘আমি যদি আজমি ভাষায় কোরআন অবতীর্ণ করতাম, তবে তারা অবশ্যই বলত এর আয়াতগুলো বিশদভাবে বিবৃত হয়নি কেন? কী আশ্চর্য যে, কোরআন আজমি অথচ রাসুল আরবি।’ (সুরা হা-মিম সেজদা, আয়াত : ৪৪, পারা : ২৪)।

এ ছাড়া সুন্দর ও বিশুদ্ধ ভাষায় কথা বলা উন্নত ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক। ধর্ম প্রচারে শুদ্ধ ভাষা ও সুন্দর বর্ণনার প্রভাব অতুলনীয়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আনা আফসাহুল আরব, অর্থাৎ- আমি আরবের শ্রেষ্ঠ বিশুদ্ধভাষী।’ (মিশকাত শরিফ)। এ কারণেই বহু ভাষাবিদ পন্ডিত ডক্টর মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন আমাদের মা তিনটি "একটি গর্ভধারিনী মা একটি মাতৃভাষা মা এবং মাতৃভূমি মা"।

যারা এই তিন মাকে ভালবাসবে শ্রদ্ধা করবে তারাই হবে দুনিয়া এবং আখেরাতে কামিয়াবী তাই বিশুদ্ধভাবে মাতৃভাষায় কথা বলা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত। মাতৃভাষাপ্রীতি সঞ্চারিত হয় ইসলামে মাতৃভাষার ওপর অত্যধিক গুরুত্বারোপের কারণে। সুতরাং নিজ মাতৃভাষা বাংলা ভাষার স্বকীয়তা রক্ষা করা আমাদের ওপর অপরিহার্য।

নবী (সা.)-এর কাজের দায়িত্ব যেহেতু আমাদের ওপর অর্পিত হয়েছে, তাই নিজ মাতৃভাষায় অভিজ্ঞতা অর্জন করে মানুষের সামনে ইসলামের সঠিক মর্মবাণী বিশুদ্ধভাবে সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় লেখা ও বলার মাধ্যমে উপস্থাপন করা আমাদের ওপর অবশ্যই কর্তব্য। আমরা যদি আমাদের দায়িত্বে অবহেলা করি, তাহলে দেশবাসীর প্রতি অবিচার করা হবে এবং মহান প্রভুর কাছে পরকালে পাকড়াও হতে হবে।

সাহিত্যিক সৈয়দ আবুল হাসান আলী নদভী (রহ.) বাংলাদেশ সফরে এসে বলেন, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের নেতৃত্ব নিজেদের হাতে নিতে হবে এবং অপশক্তির হাত থেকে নেতৃত্ব ছিনিয়ে আনতে হবে। এব্যাপারে  অনেকের প্রশ্ন, আমাদের এই মাতৃভাষা তো আমাদের মুসলমানদের ভাষা নয়। এজন্যই অনেকে বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষা হিসেবে গুরুত্ব দেয় না। অথচ বাস্তব বিষয়টি অনেকেরই অজানা। কোনো কোনো ভাই মনে করেন, এই ভাষায় পান্ডিত্য অর্জন করলে মানুষ নাস্তিক হয়।

এই ভাষায় কোনো নুর নেই। উত্তরে বলতে হয়, আরবি ভাষা তো ছিল আবু জাহেল, উতবা ও শায়বাদের। ফারসি ভাষা ছিল অগ্নিপূজকদের। তাই বলে কি সে দেশের মুসলমানরা তাদের মাতৃভাষা আরবি-ফারসি বর্জন করেছেন? না, করেননি। বরং তারা ইসলামি জ্ঞান দ্বারা সে ভাষার সাহিত্য আরো সমৃদ্ধ করেছেন। আমাদের মাতৃভাষাকে ইসলামের নুর দ্বারা নুরান্বিত করে আরো সমৃদ্ধ করতে হবে। বর্তমানে নবীন ইসলামি লেখক বেড়েছে। অধিকাংশ পত্রিকায় স্থান পেয়েছে ‘ইসলামি পাতা’।

মাতৃভাষায় লেখালেখি হচ্ছে সাহিত্য নিয়ে চর্চা হচ্ছে। আশা করা যায় এভাবে চলতে থাকলে মাতৃভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার প্রতি সবার আবেগণ্ডভালোবাসা আরো কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে।  আমাদের মাতৃভাষা বাংলা, এই ভাষায় লেখালেখি ও সাহিত্যচর্চার ধারা অব্যাহত থাকুক- এটাই প্রত্যাশা।

বাংলা ভাষায় সাবলীন বক্তা লেখক, গবেষক, ইসলামী কলামিস্ট দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে যা বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য ইসলামকে জানা ও উপলব্ধি করা এবং আমল করা সহজ হচ্ছে বলে আমরা মনে করি। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা এই ভাষাতেই আমরা আমাদের গবেষণা আমাদের চিন্তা চেতনার উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবো ইনশাআল্লাহ মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

লেখক : ইসলামি কথা সাহিত্যিক গবেষক ও কলামিস্ট, 
প্রভাষক পুলিশ লাইনস স্কুল এন্ড কলেজ বগুড়া

mostakimbogra@gmail.com

01712-777058



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS