ভিডিও

মাগফিরাতের শ্রেষ্ঠ রজনি পবিত্র শব-ই-বরাত

মোহাম্মদ মোস্তাকিম হোসাইন

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৪, ১১:১১ রাত
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৪, ০১:৫৫ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

১৪ই শাবান রবিবার, দিবারত রাত পবিত্র শবে বরাত যার অর্থ ভাগ্যের রজনি বা সফলতা লাভের রজনি। একটি বছর ঘুরে ৩৫৪ দিন পর আবারো আমাদের মাঝে হাজির হয়েছে সৌভাগ্য ও মাগফিরাতের শ্রেষ্ঠ রজনি পবিত্র শব-ই বরাত। বিশ্ব জগতের একমাত্র অধিপতি মহান আল্লাহ বনি আদমের মধ্য হতে তার প্রিয় বান্দাদেরকে বিভিন্ন অছিলা বা মাধ্যমে নাজাত প্রদান করবেন।

কেহ কেহ গুনাহ মাফের রজনি বলে অভিহিত করেছেন। তাই শবে বরাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য ব্যাপক ও সুদূর প্রসারী, এ প্রসঙ্গে আল্লাহ মুহাম্মদ মাদানী রচিত হাদিসে কুদসী গ্রন্থের অনুবাদক মোমতাজ উদ্দিন আহম্মদ ১২ নং অধ্যায়ের ভূমিকার মধ্যে উল্লেখ করেছেন “শাবান মাসের ফযিলাতের দুটি বিশেষ কারণ রহিয়াছে, প্রথমত: ইহা নিজেই ফজিলতের মাস। ইহার মধ্যভাগে যে তিনটি রোজা রাখার বিধান রয়েছে উহা নফল হলেও উহার নেকী অপরিসীম। দ্বিতীয় শাবান মাস পবিত্র রমজানের অগ্রদূত।

লাইলাতুল বরাতে রয়েছে অন্তর্নিহিত ফজিলত ও কল্যাণ। এ প্রসঙ্গে আল্লামা মুহাম্মদ মাদানী সংকলিত হাদিসে কুদসি গ্রন্থের ১৩৭ নং হাদিসে ইবনে মাজা হযরত আলী (রা) এর সূত্র ধরে বলেছেন “যখন শাবান মাসের অর্ধেক (অর্থাৎ পনর তারিখ) রাত্রি আসে তখন তোমরা সেই রাত্রিতে কিয়াম কর (ইবাদত কর) এবং দিনে রোজা রাখ। কারণ আল্লাহ ইহাতে সূর্যাস্তের পর পরই দুনিয়ার নিকটতম আকাশে নামিয়ে আসেন এবং বলেন “কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী কি নাই যে, আমি তাহাকে ক্ষমা করিতে পারি? কোন রিযিক অনুসন্ধানকারী নাই, যে, আমি তাহাকে রিযিক দিতে পারি?

কোন পীড়িত ব্যক্তি নাই যাহাকে আমি সুস্থতা দান করিতে পারি? কোন যাঞ্ছাকারী নাই যে, আমি তাহাকে পার্থীব বস্তু দিতে পারি? এরূপ নাই কি? এরূপ নাইকি বলা হইতে থাকে যে পর্যন্ত না ফজরের উদয় হয়। (হাদিসে কুদসী পৃ: ১৩২ ইফা প্র:)।

আল্লাহ ইবনে হাজার আসকালানী বলেন নবী (স:) বলেছেন, যে মুসলমান এ মাসে তিনটি রোজা রাখবে এবং ইফতারের সময় তিনবার দরূদ পড়বে তার গুনাহ ক্ষমা করা হবে, তার রিযিকে বরকত হবে। কিয়ামতের দিবসে উষ্ট্রীর উপর আহরন করে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। হাদিসে আরও বর্ণিত আছে, রাসুল (স:) রমজানুল মোবারক ছাড়া অন্য মাসে এতো অধিক রোজা রাখতেন না যতখানি শাবান মাসে রাখতেন। (বোখারী মুসলিম)।

“হযরত আয়শা (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, এক রাত্রে আমি নবীজীকে তার স্থানে না পেয়ে তাকে খুঁজতে বের হলাম। খুঁজতে খুঁজতে নবী (স:) কে জান্নাতুল বাকী নামক স্থানে গিয়ে দেখি, তিনি আকাশ পানে মাথা উত্তোলন করে দুআ করছেন। রসুল তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়শা আমার নিকট হযরত জিব্রাইল (আ:) এসেছিলেন, তিনি আমাকে বললেন আজ অর্ধ শাবানের (শবে বরাত) রজনি।

এ রাতে মহান আল্লাহর এত অধিক পরিমাণ লোকদের কে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন যে কালব গোত্রের বকরীগুলোর যত পশম রয়েছে তার সমপরিমাণ। কিন্তু তা সত্ত্বেও এমন কিছু দুর্ভাগ্য ব্যক্তি বা লোক রয়েছে যারা এই পবিত্র রজনিতেও ক্ষমা লাভে বঞ্চিত হবে।

আর তারা হলো- (১) আল্লাহর সাথে শরিক স্থাপনকারী (২) হিংসা-বিদ্বেষী পোষণকারী  (৩) অন্যায় ভাবে ট্যাক্স (চাঁদা) আদায়কারী (৪) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান (৫) অহংকারী (৬) জাদুকর ও গণক (মিশকাত ১: ১১৫); অন্যত্র মদ, জুয়া ব্যাভিচারী ও খুনীদের কথাও বলা হয়েছে। এদেরকে কোন অবস্থায় ক্ষমা করা হবে না। তাছাড়া অন্যান্য অপরাধীদেরকে ক্ষমার কথা বলা হয়েছে।

তবে এ কথা সত্য যে মানুষ যত বড়ই অপরাধ করুন না কেন সে যদি পাপের জন্য অনুশোচনা করে এবং অতীতের সকল ভুলের জন্য একাগ্রচিত্তে খালেস নিয়তে এই রজনিতে তওবা করে তবে অবশ্যই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করতে পারেন। কারণ আল্লাহ বলেন, তোমরা আমার রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অন্যত্র তিনি বলেছেন, আল্লাহ অসীম ক্ষমাশীল ও দয়াবান।

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, আজকের রজনিতে ইবাদত করতে হবে একাগ্রচিত্তে এবং খালেস নিয়তে। আর ওই সমস্ত পাপের কাজ থেকে সরে আসতে হবে চিরদিনের জন্য। এই গুনাহ মাফের রজনীতে একজন মুমিন হয়ে উঠবে খাঁটি সোনার মত প্রকৃত মুত্তাকি। নাজাতের আশায় কবরে কবরে জ্বালিয়ে দেয়া হয় ধুপবাতী যা আদৌ ইসলামী শরিয়ত সম্মত কি-না তা ভেবে দেখার জন্য জ্ঞানী পাঠক সমাজের নিকট প্রশ্ন রাখছি।

তবে এদিনে ইবাদতের পাশাপাশি ফকির মিসকিনকে খাওয়ানো এবং প্রতিবেশী, বাবা-মা, আত্মীয়দেরকে ভাল মন্দ খাবার পরিবেশন করা দোষেই কিছু নেই। অথচ আজকের রাতে জীবনের সমস্ত গুনাহ মাফের আশা নিয়ে একাগ্রচিত্তে কেঁদে কেঁদে বুক ভিজানোর কথা। প্রার্থনা করার কথা যাবতীয় সমস্যা সমাধানের জন্য।

তাই আসুন আমরা আর বিদআত নয়, হাসি তামাশা নয়, বরং শবেবরাত পালিত হবে যথাযথ মর্যাদা ও গুরুত্বের সাথে; আসুন দিনে রোজা এবং রাতে কেঁদে কেঁদে দুচোঁখ উজাড় করে একাগ্রচিত্তে ফরিয়াদ করি মহান মাবুদের দরবারে। তিনি বিশ্বের মুসলমানদেরকে রক্ষা করুন-সকল পরাশক্তির হাত থেকে। মহান আল্লাহ সকলের প্রতি রহমত করুন। আমিন।


লেখক : ইসলামী গবেষক, কলামিষ্ট ও কলেজ প্রভাষক

mostakiambogra@gmail.com


০১৭২২-৭৭৭০৫৮



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS