ছ’মাস ধরে বিকল বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের রেডিওথেরাপি মেশিন
শাওন রহমান : বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসায় রেডিওথেরাপির লিনিয়ার এক্সিলারেটর যন্ত্রটি বিকল হয়ে পড়ে আছে প্রায় ছ’মাস। দীর্ঘ দিনেও বিকল যন্ত্রটি মেরামত না হওয়ায় ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের রেডিওথেরাপি সেবা বন্ধ রয়েছে। এতে দূরদূরান্ত থেকে আসা ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের সেবা না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে।
শজিমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এই হাসপাতালে বিভিন্ন জেলা থেকে প্রচুর ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। রোগীর চাপ সামাল দিতে গিয়েই লিনিয়ার এক্সিলারেটর যন্ত্রটি বিকল হয়ে যায়। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে যারা বেসরকারি হাসপাতালে যাচ্ছেন, তাদের ব্যয় করতে হচ্ছে কয়েক গুণ বেশি টাকা।
এখনও বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যান্সার বিভাগে ২০ শয্যাবিশিষ্ট কেমোথেরাপি ডে-কেয়ার ব্যবস্থায় চিকিৎসাসেবা চালু রয়েছে। যেখানে প্রতিদিন গড়ে ২৫ জন রোগী কেমোথেরাপি সেবা পান। সেবাটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ও কেমোথেরাপি (ওষুধ সরবরাহ থাকা সাপেক্ষে) বিনামূল্যে পেয়ে থাকেন। গত বছর এই হাসপাতালের ক্যান্সার বিভাগ থেকে মোট ৬ হাজার ৭২৪ জন রোগী কেমোথেরাপি সেবা পেয়েছেন।
আর ২০২২ সালে এই সেবা পেয়েছেন ৫ হাজার ৮৪১ জন। এছাড়াও গত বছরের আগস্ট মাসের আগ পর্যন্ত রেডিওথেরাপি সেবা পেয়েছেন ৮ হাজার ১৬৩ জন। আর ২০২২ সালে ১২ হাজার ২৪৬ জন রেডিওথেরাপি চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন।
জানতে চাইলে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. মোবাশ্বের-উর-রহমান বলেন, এই বিভাগে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির লিনিয়ার এক্সিলারেটর মেশিনটি বিশ্বমানের যা অত্র এলাকার ক্যান্সার রোগীদের সরকারিভাবে চিকিৎসার একমাত্র অবলম্বন।
আরও পড়ুনমেশিনটি ২০১০ সাল থেকে ক্যান্সার রোগীদের বিকিরণ চিকিৎসাসেবা প্রদান করে আসছে। কিন্তু গত বছরের আগস্টে মেশিনটি বিকল হয়ে যায়। এতে অসহায় ক্যান্সার রোগীদের বিকিরণ চিকিৎসা চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের ব্রাকিথেরাপি চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য হাসপাতালে কোবাল্ট ৬০ ব্রাকিথেরাপি মেশিন স্থাপনের কাজ দ্রত গতিতে এগিয়ে চলছে।
জরায়ুমুখ ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্রাকিথেরাপি একটি অত্যাবশ্যকীয় অংশ। আগে রোগীদের এই চিকিৎসার জন্য ঢাকাসহ অন্যান্য হাসপাতালে রেফার করার প্রয়োজন হতো। মেশিনটি চালু হলে এই অঞ্চলের রোগীদের জরায়ুমুখ ক্যান্সার চিকিৎসা সম্পূর্ণভাবে সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে।
এ ব্যাপারে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, এই বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয় অনুমতি প্রদান করলে মেশিনটির যান্ত্রিক ত্রুটি ঠিক করে পুনরায় স্বল্পমূল্যে চিকিৎসাসেবা চালু করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, লিনিয়ার এক্সিলারেটর মেশিনটির ৮০ লাখ টাকা মূল্যের একটি যন্ত্রাংশ (আয়ন চেম্বার) নষ্ট হয়ে গেছে। যন্ত্র কেনা ও সরবরাহকৃত কোম্পানিকে অবহিত করে তা সংযোজন করতে মন্ত্রাণালয়ের যে অনুমোদনের ব্যাপার তা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে খুব দ্রুত সময়ে মেশিনটি চালু করে ক্যান্সার রোগীদের রেডিওথেরাপি দেওয়া সম্ভব হবে।
মন্তব্য করুন