বগুড়ার আলুর বাজার থেকে এবার মধ্যস্বত্বভোগীরা ৮শ কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে
রাহাত রিটু : কৃষক এবং ভোক্তাদের পিঠে চাবুক কষিয়ে এ বছর মধ্যস্বত্বভোগীরা বগুড়ার আলুর বাজার থেকে ৮শ কোটি টাকার বেশি লাভ তুলে নিয়েছে। প্রতি বছরের মত এ বছরও মৌসুমের শুরু থেকেই মধ্যস্বত্বভোগীরা অতি মুনাফার আশায় সিন্ডিকেট ব্যবসা শুরু করে।
চলতি মৌসুমে মাঝামাঝি হাসিনা সরকারের বিদায়ের পর অন্তর্বর্তী সরকার এলেও সিন্ডিকেট ভাঙ্গা যায়নি। এখনো আলুর কব্জায় রেখেছে মধ্যে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। উত্তরাঞ্চলের যে সব জেলায় আলুর উৎপাদন হয় তার মধ্যে বগুড়া অন্যতম।
বগুড়ার বেলে দো‘আঁশ মাটিতে আলুর উৎপাদন হয় বেশি। এ কারণে অন্যান্য ফসলের চেয়ে বগুড়ার কৃষক আলু চাষের দিকে ঝোঁক বেশি। চলতি মৌসুমে বগুড়ায় প্রায় ৫৮ হাজার ৬শ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছিলো। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন ধরা হলেও মাঠপর্যায় থেকে জানানো হয়েছে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেব মত আলু উৎপাদন হয়নি।
বিশেষ করে আগের মৌসুমে আলুর দাম অতিরিক্ত বেশি হওয়ার কারণে আগাম আলু চাষের দিকে ঝুকে পড়েছিলো কৃষক। আর আগাম চাষ করা আলু থেকে কাঙ্খিত ফলন হয়নি। কৃষি ম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রতি বিঘায় যে পরিমাণ আলু উৎপাদনের কথা বলা হয়, আগাম আলু সে পরিমাণ হয়নি। এমনকি তার অর্ধেকও হয়নি। এ কারণে মৌসুম শেষে হিসেব মিলে না।
চলতি মৌসুমে বগুড়ার চালু ৪২টি কোল্ডস্টোরের ধারণ ক্ষমতা ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৬২০ মেট্রিকটন হলেও আলু মজুদ করা হয়েছে ৩ লাখ ২২ হাজার ৫৪৩ মেট্রিকটন। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে ৭১ হাজার ৭৭ মেট্রিকটন আলু কম মজুদ হয়েছে।
আলু কম মজুদ হওয়ায় শুরু থেকেই আলুর বাজার চড়া করে রেখেছে মধ্যসত্বভোগীরা। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে ব্যবসায়ীরা। চলতি বছরের জুন মাস থেকে আলু কোল্ডস্টোরেজ থেকে বের করা শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুনজুন মাসে কোল্ড স্টোরেজ থেকে আলু বের হয়েছে ৬০ হাজার ২৩৯ মেট্রিকটন, জুলাইমাসে ৩১ হাজার ১৮৮ মেট্রিকটন, আগস্ট মাসে ২৫ হাজার মেট্রিকটন, সেপ্টেম্বর মাসে১৭ হাজার ৩২২ মেট্রিকটন, এবং অক্টোবর মাসেখাবার আলু ২৭ হাজার ১৭৮ মেট্রিকটন এবং বীজ আলু ৬৫ হাজার ৫৬ মেট্রিকটন আলু বাজারে এসেছে। গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বগুড়ার ৪২ টি কোল্ড স্টোরেজ থেকে খাবার আলু ১ লাখ ৬১ হাজার ৪৩৩ মেট্রিকটন এবং বীজ আলু খালাস হয়েছে ৬৫ হাজার ৫৬ মেট্রিকটন।
এখনো স্টোরে খাবার আলু মজুদ আছে ৩৩ হাজার ৩৩০ ৬৫ হাজার ৫৬ মেট্রিকটন এবং বীজ আলু ৬৩ হাজার ৬৪ ৬৫ হাজার ৫৬ মেট্রিকটন। আগামী ১৫ নভেম্বর বগুড়ার প্রতিটি কোল্ড স্টোরেজে শীতলীকরণ যন্ত্র বন্ধকরে দেওয়া হবে। এর পর আলু ব্যবসাযীরা আরও সপ্তাহ খানেক আলু সেখানে রাখতে পারবেন।
এ কারণেই ব্যবসায়ীদের আলু বের করার কোন তাড়া নেই। ধীরে ধীরে বের করবেন দাম বেশি পাওয়ার আশায়। এদিকে একজন কোল্ড স্টোরেজের মালিক জানান, আজ শুক্রবার (৮ নভেম্বর) স্টোরেজ গেটে আলু বিক্রি হয়েছে ৫৬ টাকা কেজি দরে।
প্রতিকেজি আলুতে এ বছর গড়ে লাভ হয়েছে ২৫ টাকা। প্রতিকেজি আলু কোল্ডস্টোরেজ পর্যন্ত যেতে খরচ হয়েছে স্থান ভেদে ৩০ থেকে ৩২ টাকা। আর আলু স্টোরেজ গেটে বিক্রি হয়েছে গড়ে প্রতিকেজি ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা কেজিতে। ফলে মধ্যস্বত্বভোগীরা প্রতিকেজিতে লাভ করেছে ১৪ থেকে ২৫ টাকা। এ হিসেবে স্টোরে রাখা ৩ লাখ ২২ হাজার ৫৪৩ মেট্রিকটন আলু থেকে মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভ করেছে ৮শ কোটি টাকার বেশি।
মন্তব্য করুন