অফলাইনের পাশাপাশি জমে উঠেছে অনলাইনে কেনাকাটা

নাসিমা সুলতানা ছুটু : তাসনিম আজম বগুড়ার একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন। সকাল ৮টায় বাড়ি থেকে বের হয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে সারা সপ্তাহের জমে থাকা কাজ এবং বাবার বাড়ি, শ্বশুর বাড়ির অতিথি আপ্যায়নেই সময় পার হয়ে যায়। তাই আজকাল ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মার্কেট বা শপিং সেন্টারগুলোতে গিয়ে কেনাকাটা সম্ভব হয় না। কেনাকাটার জন্য তাসনিম সব সময় নির্ভর করেন অনলাইনের ওপর। নির্ভরযোগ্য সাইটগুলো থেকে নিজের পছন্দ অনুযায়ী শাড়ি, থ্রিপিস, ইমিটেশন জুয়েলারি কেনেন। ঈদের কেনাকাটাও তিনি অনলাইনে সেরেছেন বলে জানান।
তাসনিম আজমের মত শহরের উপশহর এলাকার বাসিন্দা রুমা ও সোমা দুই বোন বরাবরের মত এবারও ঈদের কেনাকাটা করেছেন অনলাইনে। গৃহিণী সোমা জানান, এবার অনলাইনে তিনি তার নিজের জন্য দু’টি এবং মেয়ের জন্য একটি থ্রিপিস অনলাইনে কিনেছেন। তার বড় বোন রুমাও অনলাইনেই ঈদের জামা কিনেছেন। সবগুলো থ্রিপিস ডেলিভারি চার্জসহ ১৮শ’ থেকে ২৫শ’ টাকার মধ্যে পড়েছে। সোমা জানান, সাধারণত তিনি যে সাইটগুলো থেকে সারা বছর কেনাকাটা করেন ঈদের পোশাকও সেই সাইটগুলো থেকেই কিনেছেন। ওই সাইটগুলো তার কাছে নির্ভরযোগ্য বলে মনে হয়।
ঈদ মানেই নতুন পোশাক, উপহার এবং সাজসজ্জার কেনাকাটার ধুম। আগে ঈদের বাজার মানেই ছিল দোকানে ভিড়, দরদাম করা, ঘাম ঝরানো এবং দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা। তবে প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে এখন তাসনিম বা সোমা-রুমাই নন, ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতে এবং সময় বাঁচাতে অনেকেই অনলাইনকে বেছে নিয়েছেন। সারা বছরই অনলাইনে কেনাকাটাতো চলেই এছাড়া ঈদের কেনাকাটাও অনেকেই সেরে নিচ্ছেন অনলাইনে। ঘরে বসেই পছন্দের পণ্য কেনার সুবিধা থাকায় এটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা, সময়মতো ডেলিভারি এবং মানসম্পন্ন পণ্য পাওয়া নিশ্চিত করতে কিছু কৌশল জানা জরুরি।
অনলাইনে শাড়ি-থ্রিপিস, ইমিটেশনসহ বিভিন্ন মেটালের জুয়েলারি, কসমেটিকস্ এমনকি গৃহপরিচারিকার কেনাকাটাও সব সময় করেন লুবনা জামান। লুবনা জানান, অনলাইনে কেনাকাটা করতে অবশ্যই নির্ভরযোগ্য সাইটগুলো থেকেই কেনাকাটা করতে হয়, নইলে প্রতারিত হওয়ার শঙ্কা থাকে। তিনি বলেন, অনলাইন কেনাকাটার জন্য নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইট বা প্ল্যাটফর্ম বেছে নিন। বেশকিছু জনপ্রিয় ই-কমার্স সাইট রয়েছে। যেখানে বিশাল কালেকশন ও ডিসকাউন্ট অফার করে।
বিভিন্ন ক্যাটাগরির পণ্য পাওয়া যায়। আবার সব ধরনের সেলারদের কাছ থেকে কেনার সুবিধাও থাকে। এছাড়াও ব্র্যান্ডের নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকেও কেনাকাটা করা যেতে পারে। তাই নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইট থেকে কেনাকাটা করা উচিত। তিনি বলেন, অজানা বা নতুন সাইট থেকে কেনার আগে রিভিউ দেখে নিতে হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্র্যান্ডটির ভেরিফাইড পেজ দেখে নিন।
আরও পড়ুনঅনেক সময় প্রোডাক্টের ছবি দেখে আকৃষ্ট হলেও বাস্তবে তা আশানুরূপ না-ও হতে পারে। তাই কেনার আগে কিছু বিষয় নিশ্চিত হওয়া দরকার। প্রোডাক্ট ডিসক্রিপশন ভালোভাবে পড়ুন। কাপড়ের ক্ষেত্রে মেটেরিয়াল, সাইজ, ওরিজিনাল নাকি কপি তা দেখুন। আগের ক্রেতাদের রেটিং ও রিভিউ দেখে সিদ্ধান্ত নিন। প্রোডাক্টের আসল ছবি চাইতে পারেন। অনেক সাইটে ক্রেতাদের আপলোড করা বাস্তব ছবি থাকে। সেখানে দেখে নিন।
‘বগুড়া ফ্যাশন ওয়াল্ডর্’ নামে বগুড়ার একটি অনলাইন পেজের এডমিন সুমনা রহমান জানান, অনলাইনে কেনাকাটা বাড়লেও অনেকেই অফলাইনে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তাই অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনেও বেচাকেনার জন্য আমাদের একটি শোরুম আছে। তিনি বলেন, অনলাইনে পেজ বুস্ট, ভালোভাবে ভিডিও ধারণসহ সারাক্ষণ পেজে এ্যাকটিভ থাকতে হয়।
তবেই কেনাবেচা ভালো হয়। বগুড়ায় দিনদিন অনলাইনে ক্রেতা যেমন বাড়ছে তেমন বিক্রেতাও বাড়ছে। তবে বগুড়ার অনলাইন ক্রেতারা বেশিরভাগই ঢাকার এবং প্রতিষ্ঠিত পেজের ওপর নির্ভরশীল। তাই আমাদের অনলাইনের চেয়ে অফলাইনেই বেচাকেনা ভালো চলে।
এদিকে ঈদ উপলক্ষ্যে অনেক ই-কমার্স সাইট ডিসকাউন্ট অফার করে। তবে কিছু ক্ষেত্রে মূল্য আগে বেশি দেখিয়ে পরে কম দেখানোর প্রবণতা থাকে। তাই বিভিন্ন সাইটে একই পণ্যের দাম তুলনা করে কিনতে হবে।
মন্তব্য করুন