কুড়িগ্রামের উলিপুরে জুতার কারখানা গড়ে তুলে সফলতার মুখ দেখেছেন এক দম্পতি
উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের উলিপুরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে জুতার কারখানা করে সফলতা মুখ দেখেছেন উদ্যোক্তা সোলাইমান হোসেন ও রেগুনা বেগম রিনা দম্পতি। পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে এলাকার শতাধিক তরুণ-তরুণীর।
প্রত্যন্ত অঞ্চলে তৈরিকৃত জুতা এখন উপজেলা, জেলা শহরের গণ্ডি পেরিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকার নামিদামি জুতার শো-রুমে। অন্যের কারখানায় উদ্যোক্তা হিসবে চাকরি করা সোলায়মান এখন কারখানার মালিক। স্ত্রীর অনুপ্রেরণায় এক বছর আগে করা এ কারখানায় তৈরি হচ্ছে বাহারি মডেলের জুতা।
জানা গেছে, সোলাইমান হোসেন ঢাকার লেদার অ্যাক্স নামের এক কারখানায় সাত বছর চাকরি করেন। এক পর্যায় স্বামী স্ত্রী দুজনে মিলে পরিকল্পনা করেন জুতার কারখানা গড়ে তোলার। স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে নিজের জমানো অর্থ দিয়ে কিনেন জুতা তৈরির আধুনিক যন্ত্রপাতি। গড়ে তোলেন উলিপুর উপজেলার জনতার হাট মুসুল্লিপাড়া এলাকার কামদেব গ্রামে বেষ্ট সুজ অ্যান্ড হেন্ডি ক্রাফটস নামের জুতার কারখানা।
সরেজমিন মন্ডলের হাট ও জনতার হাট মুসুল্লিপাড়া এলাকার কামদেব গ্রামে বেষ্ট সুজ এন্ড হেন্ডি ক্রাফটস নামের জুতার কারখানায় গিয়ে দেখা যায়' জুতা তৈরির আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে বাহারি মডেলের চামড়ার সু, স্যান্ডেল, লোফার, চামড়া মোজা, লেডিস জুতা, ব্যাগ, মানিব্যাগ, ওয়ালেটসহ উন্নতমানের চামড়াজাত পণ্য তৈরি করা হচ্ছে। তৈরিকৃত এসব পণ্য ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিন অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আবু বক্কর সিদ্দিক, লিটন, বাইজিদসহ অনেকে জানান, আমাদের এলাকায় জুতার কারখানা গড়ে ওঠায় আমরা ভিষণ খুশি। এই কারখানায় নিজ বাড়ি থেকে খেয়ে পড়ে চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করছে প্রায় শতাধিক নারী-পুরুষ।
কারখানায় কর্মরত স্থানীয় শ্রমিক মাহফুজার রহমান, সাবিনা ইয়াসমিন, সুইটি, জান্নাতুন ফেরদৌসসহ অনেকে জানান, উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে জুতার কারখানায় আমরা কাজ করে আয়ের মাধ্যমে ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার খরচসহ সংসারের যাবতীয় খরচ মেটাতে পারছি। এরকম কারখানা আমাদের এলাকায় গড়ে উঠবে ভাবতেই অবাক হয়ে যাই। তারা আরও বলেন, এ কারখানা না থাকলে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় গিয়ে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে হতো।
আরও পড়ুনকারখানায় জুতা ক্রয় করতে আসা উলিপুর আদর্শ কলেজের প্রভাষক সাখাওয়াত হোসাইন বলেন, কখনো চিন্তা করি নাই নিজ উপজেলায় গুণগতমানের বিভিন্ন কোয়ালিটির এতো সুন্দর জুতা পাওয়া যায়। কারখানার উৎপাদন ব্যবস্থাপক এরশাদ হোসেন জানান, এখন জুতার কারখানার ব্যাপক প্রসারতা হয়েছে। প্রতিদিন প্রায় শতাধিক শ্রমিক এখানে কাজ করেন। গুণগতমান বজায় রেখে বিভিন্ন কোয়ালিটি ও মাপের দুই শতাধিক জুতা উৎপাদন করা হয়।
স্ত্রী রেগুনা বেগম রিনা বলেন, তার স্বামী দীর্ঘদিন জুতার করখানায় কাজ করেছে। সেই সুবাদে আস্তে আস্তে এলাকায় জুতার কারখানা দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। শুরুতে বাঁধার সম্মুখীন হলেও পরবর্তীতে সাফল্যের মুখ দেখেন ওই দম্পতি।
এ ব্যাপারে কারখানার মালিক সোলাইমান হোসেন বলেন, আমি দীর্ঘদিন ঢাকায় একটি কারখানাতে কাজ করেছি তখন থেকে চিন্তা করে এলাকায় একটি কারখানা দিয়ে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করবো। আল্লাহপাক মনের আশা পূরণ করছেন। সকলের নিকট প্রত্যাশা আমাদের পণ্যের গুণগতমান অনেক ভালো আপনারা আমাদের জুতা ক্রয় করে পাশে থাকবেন।
তবে একটি অসুবিধা হলো কারখানায় বিদ্যুৎ থাকে না, জেনারেটর চালিয়ে অধিকাংশ সময় বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে হয়। সরকারি বে-সরকারি সহায়তা পেলে ভবিষ্যতে কারখানার পরিধি বাড়ানোর প্রত্যাশা করেন তিনি।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক শাহ মোহাম্মদ জোনায়েদ বলেন, আমি কারখানার মালিকের সাথে যোগাযোগ করেছি, উনি চাইলে আমাদের বিসিক এলাকায় স্বল্পমূল্যে জায়গা ভাড়াসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করতে পারবো বলে আশা করছি।
মন্তব্য করুন