জয়পুরহাটে ১শ’ শয্যার জনবলে চলছে ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল

জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি : জনবল সঙ্কটে জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কাগজে-কলমে ১৫০ শয্যার জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালকে ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে উন্নীত করা হলেও এর জনবল কাঠামো রয়েছে ১শ’ শয্যার। সেখানেও ৯জন চিকিৎসকসহ মোট ৪৩টি পদ শূন্য আছে।
ফলে প্রতিদিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে নানা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন জয়পুরহাট জেলা ছাড়াও আশপাশের জেলা নওগা, বগুড়া, গাইবান্ধা ও দিনাজপুরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা রোগীরা। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, জনবল সঙ্কট থাকলেও প্রতিদিন এ হাসপাতালে শুধুমাত্র বহির্বিভাগেই চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন প্রায় দেড় হাজার রোগী। আর হাসপাতালের আন্তঃবিভাগের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়ে প্রতিদিন সেবা নিচ্ছেন প্রায় ৫শ’ রোগী।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১শ’ শয্যার জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালটি ১৫০ শয্যার খাবারের অনুমোদন লাভ করে ২০০৬ সালে। আর ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর হাসপাতালটিকে ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল হিসেবে অনুমতি পায়। সেই সাথে অবকাঠামোরও উন্নতি করা হয়। অর্থাৎ পুরাতন হাসপাতালের পাশেই নির্মাণ করা হয় নতুন সাততলা ভবন।
যেখানে অবকাঠামোগত কোন ঘাটতি নেই। কিন্তু এর জনবল কাঠামোর কোন পরিবর্তন নেই। ১শ’ শয্যার জনবল কাঠামো দিয়েই চিকিৎসাসেবা চলছে ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে। যেখানে প্রতিদিন সেবা নিতে আসছেন বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগ মিলে প্রায় দুই হাজার রোগী। ১শ’ শয্যার জনবল কাঠামোতেও ৪৩টি পদ খালি রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে।
যাদের মধ্যে সার্জারির সিনিয়র কনসালটেন্ট, গাইনি ও ইএনটি’র জুনিয়র কনসালটেন্টসহ গুরুত্বপূর্ণ ৯টি পদে কোন চিকিৎসক নেই। তারপরও ৮টি অপারেশন থিয়েটরের মাধ্যমে প্রতিমাসে এ হাসপাতালে বিভিন্ন জটিল রোগের অপারেশন সেবা নিচ্ছেন সহস্রাধিক রোগী।
গত নভেম্বর মাসেই এ হাসপাতালে অপরেশন সেবা নিয়েছে এক হাজার ৩শ’ রোগী। সপ্তাহের প্রতি রোববার ও বুধবার চোখের ফ্যাকো সার্জারির সেবা নিচ্ছেন ১৫-১৬ জন। আবার পাঁচ শয্যার ডায়ালায়সিস ওয়ার্ডে প্রতিদিন পাঁচজন কিডনি রোগি সেবা পাচ্ছেন এ হাসপাতাল থেকে।
আরও পড়ুন২০২২ সালের জানুয়ারিতে প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতালের চার তলায় ১০ শয্যার ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু জনবল সঙ্কটে যা আজও আলোর মুখ দেখেনি। হাসপাতালের মুমূর্ষু রোগীদের আইসিইউ সেবা দিতে ওই ওয়ার্ডে ছয়জন অজ্ঞানবিদ এবং ১০ জন ওয়ার্ড বয় ও আয়া প্রয়োজন।
হাসপাতালে সেবা নিতে আসা নওগাঁর ধামুরহাট সদরের সাহারা খাতুন বলেন, মাথার ব্যথা ও গায়ে জ¦র নিয়ে তিনি দুই দিন আগে বৃহস্পতিবার দুই নম্বর মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন। ডাক্তার দেখার পর হাসপাতাল থেকেই নার্সরা ওষুধ দিয়ে গেছেন। সেবা পেতে কোন সমস্যা হয়নি। আবার ভর্তি হওয়ার দীর্ঘ সময় পার হলেও ডাক্তার না আসার অভিযোগ করেন, একই ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা জেলার কালাই উপজেলার উদয়পুর থেকে আসা রহিমা বেগম।
তিনি বলেন, শরীরের দুর্বলতা ও বমি নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে বৃদ্ধ মাকে ভর্তি করেছি। কিন্তু বিকেল পর্যন্ত কোন ডাক্তারই আসেনি। শুধু নার্সরা এসে খোঁজ নিচ্ছেন। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সরদার রাশেদ মোবারক জুয়েল বলেন, হাসপাতালে রোগীর খুবই চাপ। ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকে পাঁচ শতাধিক।
বহির্বিভাগেও প্রতিদিন দেড় হাজার রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। জয়পুরহাটসহ আশপাশের চারটি জেলা থেকে রোগী আসেন। অথচ জনবল কাঠামো ১০০ শয্যারও কম। এই জনবল দিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, অজ্ঞানবিদ (এনেসথেসিয়া) ডাক্তার অভাবে প্রায় তিন বছর থেকে মুমূর্ষু রোগীদের আইসিইউ সেবা দেওয়া যাচ্ছে না।
মন্তব্য করুন