‘সেভেন’ জাতে বাজিমাত
আলুতেই কৃষকের ঘরে ৮ শ’ কোটি টাকা

কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধি : ভাগ্য বদলের ফসল বলা হয় আলুকে। আলু চাষাবাদে এলাকার অনেকের ভাগ্য বদল হওয়াসহ কৃষকর হয়েছে স্বাবলম্বী। আগাম আলু চাষের আতুঁড়ঘর খ্যাত নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার কৃষকরা এ বছর স্থানীয় ‘সেভেন’ জাত আলু চাষে করেছে বাজিমাত।
ফলন ও দামে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। দুই মাস ব্যবধানে বিঘায় ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা লাভ করে কৃষকরা কাড়ি কাড়ি টাকা ঢুকাচ্ছে বাড়িতে। ফলে এ বছর আলু বিক্রি করে ৮শ’ কোটি টাকা কৃষকদের ঘরে ঢোকার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এতে শুধুমাত্র আলুতেই কৃষকদের আয় হবে সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ কোটি টাকা।
এ বছর ২০ নভেম্বর কৃষকরা আলু উত্তোলন শুরু করেছে। দাম পেয়েছে ৯০ টাকা কেজি দরে। অন্যদিকে গত শনিবার (৭ ডিসেম্বর) প্রায় ১ মাস পরও আলু তুলে ফসলের মাঠেই বিক্রি করছে ৭২ থেকে ৭৩ টাকা কেজি দরে। ফলে বিঘায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৩ হাজার টাকা। যা আগে কোন বছরই কৃষকরা এরকম লাভের মুখ দেখেনি। তাই এখানকার কৃষকরা “সেভেন” জাত আলুতে বাজিমাতের যে স্বপ্ন দেখছিল, তা পূরণ হয়ে কৃষকরা করেছে বাজিমাত।
এ বছর কৃষি বিভাগ উপজেলায় ৬ হাজার ৭৮০ হেক্টর আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। যা ৫৫ হাজার ৮২২ বিঘা। এতে গড় ৬০ হাজার টাকা করে বিঘায় লাভ করলে এ এলাকার কৃষকরা শুধুমাত্র আলু থেকে এ বছর আয়ের টাকা ঘরে ঢুকাবে ৩৩৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে এ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন আলু। ফলে উৎপাদন খরচ ও আয়সহ এ উপজেলার কৃষকদের ৮শ’ কোটি টাকার আলু বিক্রির অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, গত বছর উপজেলায় ৬ হাজার ৬শ’ হেক্টর জমিতে আগাম আলু চাষ হয়েছিল। ফলে এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৭৮০ হেক্টর। যা গত বছরের তুলনায় ১৮০ হেক্টর জমি বেশি। গতবছর আগাম আলু চাষ করে কৃষকরা বিঘা প্রতি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা লাভের মুখ দেখায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রা বেশি হয়েছে।
এছাড়া কিশোরগঞ্জ উপজেলার কৃষকরা স্থানীয় সেভেন জাতের আগাম আলু চাষ করেছে। যা বপণের ৫৫ থেকে ৬০ দিন বয়সে উত্তোলন করা যায়। ৫৫ থেকে ৬০ দিনে এ ফসলে কৃষকরা যা লাভ করেন অন্য কোন ফসলে তা লাভ হয় না। এ বছরও ৫৫ দিনে আলু উত্তোলন শুরু হয়েছে। প্রথমের দিকে ৯০ টাকা দরে কেজি বিক্রি করলেও ফলন কম ছিল। বর্তমানে ফলনও বেশি বেশ দামও পাচ্ছে কৃষকরা। ফলে আরও বেশি লাভ হচ্ছে কৃষকরা। ফলন ও দাম বেশি পাওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে।
আরও পড়ুনএকই এলাকার আলু চাষি নিলু বিডিআর জানান, আমি ৮ বিঘা জমিতে সেভেন জাতের আলু রোপণ করেছি। উত্তোলন শুরু করে ফসলের মাঠেই বিক্রি করে বিঘা প্রতি ৬৩ হাজার টাকা লাভ করেছি। যা গত বছরের চেয়েও বেশি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম বলেন, দেশের প্রথম আলু উত্তোলন করে এ এলাকার কৃষকরা। এ এলাকার আলু বাজারে প্রথম আসায় কৃষকরা বেশ দাম পায়। ফলে এখানকার কৃষকদের ভাগ্য বদলের ফসলে পরিণত হয়েছে আলু। এ বছর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ৬ হাজার ৭৮০শ’ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
নভেম্বর মাসের ২০ তারিখ থেকে নতুন আলু উত্তোলন শুরু হয়েছে। যা ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে প্রায় ১ মাস পর ফসলের মাঠেই ৭২ টাকা দরে কেজি বিক্রি করে কৃষকরা বেশ লাভের মুখ দেখছে। ফসলের মাঠগুলো আলু উত্তোলনের উৎসবের মাঠে পরিণত হয়েছে।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর ১ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন আলু উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। যা বাজার দর অনুযায়ী কৃষকরা ৮শ’ কোটি টাকার আলু বিক্রি করবে। তার অর্ধেকেই কৃষকরা লাভবান হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আলু এ এলাকার কৃষকদের ভাগ্য বদল ও স্বাবলম্বী ফসলে রুপ নিয়েছে।
মন্তব্য করুন