সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে
স্টাফ রিপোর্টার : সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় আজ বুধবার (২২ জানুয়ারি) বগুড়ায় তীব্র শীত অনুভূত হয়েছে। অন্যরকম কনকনে শীত আর উত্তরের হিমেল হাওয়ায় কাহিল জনজীবন। সারাদিন সূর্যের দেখা মেলেনি। একেবারে জুবুথুবু অবস্থা।
সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতি হিমালয় সংলগ্ন জেলা ও উপজেলাগুলোতে। শহরাঞ্চলের চেয়ে শীতের তীব্রতা গ্রামাঞ্চলে দিগন্তজুড়ে খোলা জায়গা, শস্যক্ষেত আর গাছপালার কারণে শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। এমন আবহাওয়ায় ছোট ছোট শিশু, বৃদ্ধ ও খেটে খাওয়া মানুষজন পড়েছেন বিপাকে।
আজ বুধবার (২২ জানুয়ারি) দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে তেঁতুলিয়া ও শ্রীমঙ্গলে ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বগুড়ার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৭ দশমিক ৫ ডিগ্রী এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আবহাওয়া অফিস বলছে, এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবে।
আজ বুধবার (২২ জানুয়ারি) শীতের রানী মাঘ মাসের ছিল ৮ তারিখ। মাঘের শুরুতে শীতের দাপট না থাকলেও আজ বুধবার (২২ জানুয়ারি) সর্বনিম্ন এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ব্যবধান কমে যাওয়ায় সারাদিন শীতে জবুথবু হয়ে দিন কাটিয়েছে বগুড়াসহ গোটা উত্তরাঞ্চলের মানুষ ও প্রাণিকূল।
কুয়াশা, কনকনে শীত আর হিমেল হাওয়ায় কারণে বেশি নাজুক অবস্থায় পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষেরা। স্কুল কলেজ, অফিস-আদালত ও খেটে খাওয়া মানুষ ছাড়া বিনা কারণে কেউ বাড়ি থেকে বের হয়নি। আর যারা বের হয়েছেন তারা আপাদমস্তক ঢেকে বের হয়েছেন।
শহরে অন্যান্য দিনের তুলনায় লোকসংখ্যা কম ছিল। মার্কেটের অন্যান্য দোকানে ক্রেতাদের ভিড় কম থাকলেও শীতার্ত মধ্যবিত্ত্ব, নিম্নমধ্যবিত্ত্ব ও কেটে খাওয়া মানুষের একমাত্র ভরসাস্থল বগুড়া হকার্স মার্কেট ও সাতমাথার ভ্যানের ওপরে ভ্রাম্যমাণ দোকানে অন্যান্য দিনের চেয়ে ভিড় বেশি ছিল।
মার্কেটের শীতের কাপড়ের দোকানী ও ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা এবছর শীত কম থাকায় ব্যবসা করতে পারছিলেন না। অনেকের পুঁজি হারানোর আশংকা তৈরি হয়েছিল সেইসব বিক্রেতাদের মুখে আজ বুধবার (২২ জানুয়ারি) হাসি ফুটে উঠেছে। অন্তত: শেষ মুহুর্তে এসে কাপড়ের ওপর যে টাকা খাটিয়েছেন তা উঠে আসবে। এমনই একজন মৌসুমী বিক্রেতা মো. মইনুল হোসেন। বললেন, শীতের সময় তিনি ভ্যানে করে শীতের কাপড় বিক্রি করেন।বাকি সময় অন্যকাজ করেন।
এবছর প্রায় দুই লাখ টাকার শীতের কাপড় কিনেছিলেন বিক্রি করার জন্য। সেখানে এখনও ৫০ হাজার টাকা কাপড়ের প্যাকেটই খোলা হয়নি। শেষ পর্যন্ত টাকা উঠে আসবে কিনা সন্দেহ। এদিকে শীতের শীতের সবজির দাম কমতে কমতে একেবারে কৃষক নাজেহাল হয়ে পড়েছেন।
আজ বুধবার (২২ জানুয়ারি) সবজির দোকানে আরও ধ্বস নামে। প্রায় প্রতিটি সবজি বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে। কৃষক শংকিত হলেও সাধারণ মানুষ খুব আনন্দ নিয়ে কমদামে শীতের সবজি কিনেছেন দোকানেসহ পাড়া মহল্লাগুলোতে।
এদিকে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট :
কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি : মাঘের শীতে আবারও স্থবির হয়ে পড়েছে জয়পুরহাটের কালাইয়ের জনজীবন। আজ বুধবার (২২ জানুয়ারি) মঙ্গলবার সকাল থেকে বাতাসের সঙ্গে হাড়কাপানো শীত জেলার সর্বত্র জেঁকে বসেছে। মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে চলাচল করছে।
তবুও জীবিকার প্রয়োজনে বের হচ্ছেন শ্রমজীবী মানুষ। গত মঙ্গলবার সকাল থেকে আজ বুধবার (২২ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১০টা পর্যন্ত দেখা মেলেনি সূর্যের। এতে বস্তিবাসী ও ছিন্নমূল মানুষেরা চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, আজ বুধবার জয়পুরহাটসহ পাশ্ববর্তী নওগাঁর বদলগাছীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
জয়পুরহাট ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রাশেদ মোবারক জুয়েল বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে শিশু ও বৃদ্ধরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। শীত বাড়ায় শিশু ও বয়স্কদের ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
রংপুর জেলা প্রতিনিধি : রংপুর অঞ্চলে মাঘের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতেই হাড়কাঁপানো শীত আর হিমেল হাওয়ার তীব্রতায় কাঁপছে এ জনপদের মানুষ। বিশেষ করে গত তিন দিন ধরে শীতের তীব্রতার সঙ্গে মৃদু শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এমন শীতে বাড়ছে রোগ সঙ্গে আগুন পোহাতে গিয়ে ঘটছে দগ্ধ হওয়ার ঘটনাও। এদিকে মাঘের মাঝামাঝি শীতের তীব্রতা আরও বাড়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত এ অঞ্চলের শীতার্ত অসহায় ও দরিদ্র মানুষজন।
বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষগুলোর পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় দুর্ভোগও বেড়েছে কয়েকগুণ। শীতের পাশাপাশি কুয়াশা বেশি হওয়ায় সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে গাড়ি। এতে দূরপাল্লার পরিবহন চলছে ধীরগতিতে। শীতের কারণে লোকসানে পড়েছে কৃষক ও কৃষি নির্ভর পরিবারগুলো। এতে সার, বীজ ও সেচের সঙ্গে কৃষি শ্রমিকের মজুরিতে হচ্ছে বাড়তি খরচ। রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, শীতের কারণে বেড়েছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগের প্রকোপ।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসক মাহফুজার রহমান বলেন, শীতজনিত রোগবালাই বিশেষ করে নিউমোনিয়া, কোল্ড ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্তদের বেশিরভাগই শিশু ও বয়স্ক মানুষ। তবে এতে আতঙ্কের কিছু নেই।
রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল জানান, শীতের শুরু থেকেই কম্বল বিতরণের কাজ চলছে। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। উপজেলাগুলোতেও নির্বাহী অফিসারদের শীতবস্ত্র বিতরণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি : পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় মাঘ মাসে ১ম সপ্তাহে পর পর দু’দিন মৃদ্যু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। তাপমাত্রা ৭-১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে উঠা নামা করেছে। আজ বুধবার (২২ জানুয়ারি) সারাদিন সূর্য্যরে মুখ দেয়া যায়নি। ঘন কুয়াশা আর উত্তরের হিমেল বাতাস ও কনকনে শীতে সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকা থমকে গেছে। শীতের কারণে কয়েক হাজার পাথর শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে।
একান্ত প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাহিরে বের হয়নি। শীতের তীব্রতা বাড়ায় শিশু কিশোর ও বৃদ্ধরা সর্দি-কাশি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। সকালে পুরাতন কমদামী গরম কাপড়ের দোকানে জনসাধারণের ভিড় বেড়েছে। এদিকে শীতের তীব্রতা বাড়লেও এখনো সরকারি বা বেসরকারিভাবে গরীব দুখী মানুষের মাঝে পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়নি। তেঁতুলিয়া ১ম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার এর পর্যবেক্ষনাগারের উপ-সহকারী জিতেন্দ্রনাথ রায় বলেন, দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়া ও শ্রীমঙ্গলে ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
বিরল (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : দিনাজপুরের বিরলে আবারো মাঘের শীত চেপে বসেছে। ঘন কুয়াশা এবং হিমেল হাওয়ায় কাবু হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। সারাদিন সূর্য্যরে দেখা পায়নি কেউ। দিনাজপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানাগেছে, দিনাজপুর জেলায় বুধবার সর্বশেষ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আদ্রতা ৯২ শতাংশ।
নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : নাগেশ্বরীতে গত দুইদিন ধরে চলছে শৈত্যপ্রবাহ। ঘন কুয়াশা আর দিনব্যাপী বয়ে চলা হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে সবাই। কষ্টে পড়েছেন অস্বচ্ছল, নিম্ন আয়ের, খেটে খাওয়া চরাঞ্চলের মানুষ। স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন।
কুড়িগ্রাম আবহাওয়া ও কৃষি পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র জানিয়েছেন বুধবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আগামী কয়েকদিন এ তাপমাত্রা আরো কমতে পারে।
ঠান্ডার কষ্ট সয়ে দিন রাত পার করছেন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। আরও বিপদে।
বিপদে পড়েছেন বয়স্করা। খড়কুটো জ্বালিয়ে উত্তাপ নেওয়ার চেষ্টা করলেও তা পর্যাপ্ত নয় তাদের জন্য। ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। শিশুদেরও একই অবস্থা। উপজেলা ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা. জাহেদুর রশিদ পলাশ জানান, প্রতিদিন ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছেন। গত দুইদিন ধরে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত ৪০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এরমধ্যে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত শিশু ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত বৃদ্ধের সংখ্যাই বেশি। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোফাখ্খারুল ইসলাম জানান, এবারে এ পর্যন্ত ১ পৌরসভা ও ১৪ ইউনিয়নে শীতার্তদের মাঝে সরকারীভাবে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আরো পাওয়া গেলে তা বিতরণ করা হবে।
মন্তব্য করুন