বগুড়ার নন্দীগ্রামে ফাতেমা হত্যাকান্ড, স্ত্রী হত্যার দায়ে কারাবন্দি স্বামী নানীকেই মা ডাকে শিশু আলহাজ

নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়ার নন্দীগ্রামে ২০২০ সালে কৈগাড়ী এলাকায় স্বামীর হাতে খুন হন গৃহবধূ ফাতেমা খাতুন। স্ত্রী হত্যার দায়ে কারাবন্দি আছেন ঘাতক স্বামী আল আমিন। এতিম হয়েছে একমাত্র ছেলে সন্তান আলহাজ হোসেন। সে এখন নানীকেই মা বলে জানে। পারিবারিক কলহে বাবা-মার আদর-স্নেহ হারিয়েছে পাঁচ বছর বয়সী শিশু।
আজ সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) পৌর সদরের বাসস্ট্যান্ডের আরব আলী হোটেলের রান্নাঘরে বসে ছিল শিশু আলহাজ। কেউ কাছে গেলেই নিরব তাকিয়ে থাকে। ওই হোটেলে বাসন পরিচ্ছন্নতার কাজ করে তার নানী চম্পা বেগম। তাকেই মা বলে ডাকে শিশু আলহাজ। সামর্থ্য দিয়ে নাতির আবদার পূরণের চেষ্টা করছেন নানী।
বাবা-মায়ের কথা জানতে চাইলে নানীকে দেখিয়ে শিশু আলহাজ অস্পষ্ট ভাষায় বলে ওঠে, ‘ওই দে হামার মা। হামার বাপ নাই কো। স্কুলেত পড়মু, মা (নানী) ভত্তি করে দিবি।’ শিশু আলহাজের নানী চম্পা বেগম জানান, তিনি উপজেলার বুড়ইল ইউনিয়নের কৈগাড়ী গ্রামের মসজিদ পাড়ায় অন্যের জায়গায় ঘর তুলে বসবাস করেন। স্বামী পরিত্যক্তা এই নারী হোটেলে থালাবাসন ধোঁয়ার কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
২০২০ সালের ৬ মে কৈগাড়ী গ্রামে ফাতেমা খাতুনকে হত্যা করে বাড়ির পাশের ডোবায় ফেলে রাখে পাষন্ড স্বামী আল আমিন হোসেন। ঘটনার দিনই ঘাতককে গ্রেফতার করে থানা পুলিশ। স্ত্রী হত্যার দায়ে কারাবন্দি হয় স্বামী।
আরও পড়ুনচম্পা জানান, ১৮ বছর বয়সী ফাতেমার সঙ্গে দুপচাঁচিয়া উপজেলার মাটিহাস ফকিরপাড়ার আল আমিনের বিয়ে হয়। কৈগাড়ী গ্রামে শাশুড়ির বাড়িতে ঘর জামাই থেকে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতো। তাদের কোলজুড়ে জন্ম নেয় একমাত্র ছেলে আলহাজ। সন্তানের বয়স যখন ১০ মাস, তখন থেকেই শুরু হয় পারিবারিক কলহ। একদিন রাতে হঠাৎই নিখোঁজ হয় ফাতেমা। তার মা চম্পা হোটেলে কাজ করে রাতে বাড়ি ফিরে ফাতেমা কোথায় জানতে চাইলে সদুত্তর দেয় না আল আমিন। রাতভর খোঁজাখুঁজির পর সকালে আল আমিন জানায়, ফাতেমা আত্মহত্যা করেছে। ডোবার মধ্যে তার লাশ।
চম্পা বলেন, আমার মেয়েটাকে খুন করে নাটকের চেষ্টা করে আল আমিন। একদিকে মেয়ের লাশ, অন্যদিকে নাতির কান্নায় দিশেহারা হয়ে যাই। আমি বাদি হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেছি। হোটেলে থালাবাসন ধোঁয়ার উপার্জনের টাকায় সংসার এবং মামলা চালায়। খুনির ফাঁসি হলেই আমার শান্তি।
মামলার বাদি পক্ষের আইনজীবী বগুড়া জজ কোর্টের এড. শ্রীদাম ঘোষ বলেন, মামলায় শুধুমাত্র জবানবন্দি গ্রহণকারী ম্যাজিস্ট্রেটের সাক্ষি বাকি আছে। কার্যক্রম শেষ হলেই রায় দেবেন আদালত। আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে তিনি আশা করছেন।
মন্তব্য করুন