সাবেক এমপি তানভীর ইমামের বাড়ি সন্দেহে ছাত্র-জনতার তল্লাশি

রাজধানীর গুলশানের একটি বাড়িতে মধ্যরাতে দরজা ভেঙে ঢুকে পড়ে একদল ছাত্র-জনতা। তারা দাবি করেন, এটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা প্রয়াত এইচ টি ইমামের ছেলে সাবেক এমপি তানভীর ইমামের বাড়ি।
তাদের দাবি, বাড়িটিতে অবৈধ অস্ত্র ও ছাত্র-জনতাকে হত্যাকারীরা লুকিয়ে আছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে তারা সেখানে তল্লাশি চালাতে ঢুকেছেন।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) রাত ১২টার দিকে গুলশান ২-এর ৮১ নম্বর সড়কের এইট-আই নম্বর বাড়িতে এ অভিযান ও তল্লাশি চালানো হয়। ছাত্র-জনতার এই অভিযানে শুরুতে কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে দেখা যায়নি। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। কেউ কেউ ঘটনাটি সরাসরি সম্প্রচার করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত সাড়ে ১১টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে ঘোষণা দেওয়া হয়, ছাত্র-জনতা কর্তৃক তানভীর ইমামের বাসায় অভিযান চালানো হবে। এরপর গুলশান ২-এর বিচারপতি সাহাবুদ্দিন পার্কের সামনে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ জড়ো হন। রাত ১২টার দিকে ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে তানভীর ইমামের বাসায় প্রবেশের চেষ্টা করেন।
এসময় বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড তাদের বাধা দিলে কিছু শিক্ষার্থী গেট টপকে ভেতরে প্রবেশ করেন। পরে গেট খুলে দিলে শতাধিক ছাত্র-জনতা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে তল্লাশি চালায়। তারা ফ্ল্যাটের প্রতিটি কক্ষে খুঁজে দেখেন, বিভিন্ন লাগেজ, ড্রয়ার ও সিন্দুক তল্লাশি করেন। বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক ও গাড়িচালক মো. আব্দুল মান্নান জানান, রাতে লোকজন হঠাৎ করে ঢুকে পড়ে। প্রথমে তারা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু লোকজন দরজার ছিটকিনি ভেঙে ঢুকে পড়ে। তারা পুরো বাড়ি তছনছ করে ফেলেছে।
তত্ত্বাবধায়ক বলেন, “এটি এইচ টি ইমামের বাড়ি নয় এটা রহমান সাহেবের বাড়ি। রহমান সাহেবের মেয়ের সঙ্গে তানভীর ইমামের বিয়ে হয়েছিল অনেক আগে। ২০০১ সালের দিকে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। রহমান সাহেব ও তার স্ত্রী মারা গেছেন। তার মেয়ে এই বাড়িতে থাকেন।”
ছাত্র-জনতার তল্লাশির প্রায় আধঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে গুলশান থানা পুলিশ উপস্থিত হন। এছাড়াও বাড়ির সামনে রাত দেড়টার পরে বিপুলসংখ্যক সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও দেখা যায়।
আরও পড়ুনপরে রাত ২টার দিকে গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেছুর রহমান অনলাইন সংবাদমাধ্যমে বলেন, “এটি তানভীর ইমামের সাবেক স্ত্রীর বাড়ি। যার সঙ্গে ২০-২৫ বছর আগেই তানভীর ইমামের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় বলে শুনেছি। বাড়িতে টাকা ও অস্ত্র আছে অভিযোগ করে আজকে ছাত্র পরিচয়ে কিছু মানুষ মিছিল করে ঢুকে পড়ে। আমরা ধারণা করছি এর সঙ্গে কিছু অছাত্রও ছিল।”
তিনি বলেন, “পরে আমরা খবর পেয়ে ১২টা সাড়ে ১২টার দিকে যখন বাড়িটিতে আসি তখন তারা মিছিল করতে করতে নেমে যায়। বাড়িটির সবকিছু তছনছ করে ফেলা হয়েছে। আমরা আসতে আসতেই তারা তছনছ করে ফেলেছে। এখন বাড়িটির কিছু খোয়া গেছে কি না বা কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেটি মালিকের সঙ্গে কথাবার্তা বলে নিশ্চিত হতে পারব। আমরা এখনও ঘটনাস্থলে আছি।”
গুলশান জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. আল আমিন হোসাইন বলেন, “বাসায় আওয়ামী লীগের দোসর লুকিয়ে আছে এবং টাকা ও অস্ত্র মজুদ আছে এমন অভিযোগ তুলে কিছু লোকজন বাসাটির দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। খবর পেয়ে আমরা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারাও নেমে যায়, সেনাবাহিনীর টিমও আসে।”
তিনি আরো বলেন, “বাসায় তেমন কিছুই পাওয়া যায়নি। ঘটনার সময় কেয়ারটেকারসহ তিনজন ছিলেন বাসাটিতে। বাসার মালিক ছিলেন না। তাদের কাউকে মারধর করা হয়নি।” তবে এ ঘটনায় ছাত্র-জনতার মধ্যে কাউকেই আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি বলেও জানান তিনি।
তানভীর ইমাম শেখ হাসিনার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা প্রয়াত এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ ৪ (উল্লাপাড়া) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে দশম ও একাদশ সংসদে তিনি এমপি হয়েছিলেন। তবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি দলের মনোনয়ন পাননি। তানভীর আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ছিলেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তানভীর ইমাম এবং তার পরিবারের দুর্নীতি অনুসন্ধানে নামে দুদক। গত বছরের ৮ অক্টোবর দুদকের আবেদনে তানভীর ও তার স্ত্রী মাহিনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত।এরপর এ বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি এই দম্পতি এবং তাদের মেয়ের ৬৯টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেয় আদালত। এছাড়া তাদের নামে থাকা স্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশও দিয়েছে আদালত।
মন্তব্য করুন