বগুড়ায় পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার
_original_1742376393.jpg)
স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়ার দুই মোটর শ্রমিক নেতার ওপর হামলার জেরে শহরের স্টেশন সড়কে তিনটি নারিকেলের দোকানে আগুন ও আরও একটি দোকানে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। আজ বুধবার (১৯ মার্চ) বেলা পৌণে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। বিক্ষুব্ধ মোটর শ্রমিকরা ওই দোকানগুলোতে আগুন দেয় ও ভাঙ্চুর করে। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিভিয়ে ফেলে। সেইসাথে শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও আগুনের ঘটনায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে সেনাবাহিনী এসে তা নিয়ন্ত্রণ করে।
দুই শ্রমিক নেতার ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আজ ভোর ৪টা থেকে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় শ্রমিকরা। পরে ৭২ ঘন্টার মধ্যে জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হলে দুপুর ১২টার দিকে পরিবহন ধর্মঘট তুলে নেয়া হয়। এর আগে শহরের স্টেশন রোডে বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল হামিদ মিটুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ কবির আহম্মেদ মিঠু। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বগুড়া জেলা বাস-মিনিবাস-কোচ পরিবহন মালিক সমিতির দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. এরশাদুল বারী এরশাদসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ। সমাবেশে বিপুল সংখ্যক মোটর শ্রমিক উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, বেলা পৌণে ১১টার দিকে শত শত বিক্ষুব্ধ মোটর শ্রমিক বগুড়া স্টেশন সড়কে মিতালি পাম্পের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে বদ্ধভূমির অদূরে ওই নারিকেল দোকানগুলোর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা সেখানে পৌঁছে অভিযুক্ত মানিক ও রতনের ভাড়া নেয়া তিনটি নারিকেলের দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে নারিকেলসহ বিভিন্ন মালামাল পুড়ে যায়। এরপর আগুন ছড়িয়ে পড়তে থাকে। খবর পেয়ে দ্রুত বগুড়া ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে আগুন নিভিয়ে ফেলে। এসময় পাশের মোস্তাফিজার রহমানের ভাড়া নেয়া তানভির মেশিনারি পার্টস এর দোকানেও ভাঙচুর করা হয়।
বগুড়া ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো: শহিদুল ইসলাম বলেন, সেখানে তিনটি দোকানে আগুন নেভানোর কাজে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট কাজ করে। প্রায় ২৫ মিনিট কাজ করার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তিনি আরও জানান, আগুনে আনুমানিক ৪-৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।এসব দোকানে আগুন ও ভাঙ্চুরের খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এরপর সেনাবাহিনীর তৎপরতায় সেখানে উত্তপ্ত পরিস্থিতি শান্ত হয়। এসময় বিক্ষুদ্ধ মোটর শ্রমিকরা সেখান থেকে সরে যায়।
আরও পড়ুনবগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল হামিদ মিটুল ও সাধারণ সম্পাদক কবির আহমেদ মিঠু বলেন, পরে এ বিষয় নিয়ে যৌথ বাহিনী ও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে দুই শ্রমিক নেতার ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। এসময় পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা সকল আসামিদের ৭২ ঘন্টার মধ্যেই গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে দুপুর ১২টার দিকে পরিবহন ধর্মঘট তুলে নেয়া হয়।এ ব্যাপারে বগুড়া সদর থানার ওসি এসএম মঈনুদ্দীন জানান, দুই শ্রমিক নেতার ওপর হামলার ঘটনায় আগেই নারিকেলের দোকানি রতনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযুক্ত মানিকসহ জড়িত অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার বিকেলে বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের দুই নেতা আনোয়ার হোসেন রানা ও হযরত আলীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। নারিকেল ব্যবসায়ীদের সাথে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিরোধ থামাতে গেলে তাদের ওপর এই হামলা করা হয়। এদের মধ্যে রানার মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত এবং হযরতকে বেদম মারধর করা হয়েছে। আহতদের বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। ওই দিন বিকেল ৫টার দিকে শহরের স্টেশন রোডে মিতালি পাম্পের দক্ষিণ-পশ্চিমপাশে বদ্ধভূমির অদূরে এ ঘটনা ঘটে। আহত আনোয়ার হোসেন রানা বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের ১নং সহ-সাধারণ সম্পাদক ও হযরত আলী নির্বাহী কমিটির সদস্য।
মন্তব্য করুন