খোয়া গেছে গাইবান্ধার সেই প্রকৌশলীর জব্দকৃত ৩৭ লাখ টাকা
নাটোর আদালতের মালখানার তালা ভেঙে বিপুল পরিমাণ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার চুরি

নাটোর প্রতিনিধি : নাটোরে আদালতের মালখানার তালা ভেঙে নগদ প্রায় ৮৯ লাখ টাকা, ১৬ ভরি স্বর্ণ ও ১৯ ভরি রুপা চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় চোরেরা কোর্ট পুলিশের রুমের জানালার গ্রিল ভেঙে ফেলে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র চুরির তথ্য পাওয়া যায়নি। চুরি যাওয়া টাকার মধ্যে সম্প্রতি নাটোরের সিংড়ায় গাইবান্ধার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ছাবিউল ইসলামের প্রাইভেটকার থেকে জব্দকৃত ৩৬ লাখ ৯৪ হাজার ৩০০ টাকা রয়েছে বলে জানা গেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে চুরির ঘটনা ঘটলেও আজ শুক্রবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে ঘটনাটি জানাজানি হয়। পরে বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। এ ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে। এছাড়া এই ঘটনায় ৪ জনকে আটক করে পুলিশ হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে কোর্ট চত্বরে এ ধরনের চুরির ঘটনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও উঠেছে নানা প্রশ্ন। এনিয়ে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন উদ্বিগ্ন।
নাটোর কোর্ট ইন্সপেক্টর (পরিদর্শক) মোঃ মোস্তফা কামাল জানান, বৃহস্পতিবার দিনগত রাতের কোন এক সময় সংঘবদ্ধ একটি চোর চক্র কোর্ট পুলিশ দপ্তরের জানালার গ্রিল কেটে ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর তারা মালখানার তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে আলামত হিসেবে সংরক্ষণ করা বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার চুরি করে নিয়ে পালিয়ে যায়।
তবে তার আগে চুরির ঘটনা এড়াতে চোরের দলটি ভিডিও রেকর্ডার এবং এর সংযোগসহ সিসিটিভি সিস্টেম সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। আজ শুক্রবার (১১ এপ্রিল) দুপুরের দিকে কোর্ট পুলিশের সদস্য ও কর্মকর্তারা দপ্তরে গিয়ে ঘটনা দেখে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করেন। খবর পেয়ে নাটোরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রে মোঃ আল আমিন, জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আমজাদ হোসেনসহ পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ ঘটনায় ৪ জনকে আটক করে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না।
প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, চুরি যাওয়া তালিকায় (বিকেলে ৫ টা পর্যন্ত) নগদ ৮৯ লাখ টাকা ও প্রায় ২৪ লাখ টাকা মূল্যের স্বর্ণালঙ্কার এবং ৩৮ হাজার টাকা মূল্যের রুপা রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ খোয়া গেছে। তবে গতকাল এখবর লেখা পর্যন্ত কোনো গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র চুরির তথ্য পাওয়া যায়নি। খোয়া যাওয়া টাকার পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। কেননা এখনও গণনা শেষ হয়নি।
আরও পড়ুননাটোরের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন জানান, কারা, কখন, কীভাবে এঘটনা ঘটিয়েছে তা তদন্তে সিআইডি ও পিবিআই সদস্যরা কাজ করছেন। পুলিশ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখছে। পাশাপাশি এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতিও চলছে। আশা করা যাচ্ছে খুব শিগগিরই এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন হবে।
এদিকে আদালতের একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে, গত ১৩ মার্চ (বৃহস্পতিবার) দিনগত রাত ২টার দিকে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের চলনবিল গেট এলাকায় পুলিশের নিয়মিত চেকপোস্টে তল্লাশির সময় একটি প্রাইভেটকারে তল্লাশি চালিয়ে গাইবান্ধার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী পরিচয়দানকারী মো. সাবিউল ইসলামের কাছ থেকে ৩৬ লাখ ৯৪ হাজার ৩০০ টাকা জব্দ করে পুলিশ।
গত ১৬ মার্চ (রোববার) বিকেলে জেলার সিংড়া আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার জাহানের আদালতে জব্দ করা ওই টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করেন সিংড়া থানায় ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া সাধারণ ডায়েরির (জিডি) তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাজু আহমেদ। কিন্তু আদালতের কোন নির্দেশনা না পেয়ে পুলিশ টাকাগুলো আদালতের মালখানায় আলামত হিে বে জমা রাখে। এ বিষয়ে মতামত জানতে সিংড়া আমলি আদালতে যোগাযোগ করা হলেও শুক্রবার অফিস বন্ধ থাকায় কাউকে পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য করুন