জয়পুরহাটে ট্রান্সফরমার চোরেরা বেপরোয়া, দিশেহারা কৃষক

জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি : জয়পুরহাটে বিদ্যুৎ চালিত সেচযন্ত্রের মিটার ও ট্রান্সফরমার চোরেরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ফসলের মাঠ থেকে প্রায় প্রতি রাতেই মূল্যবান ট্রান্সফরমার ও মিটার চুরি করছে চোরের দল। কখনও চিঠি দিয়ে চাঁদা দাবি, কখনও ড্রেনম্যান ও পাহারাদারের হাত-পা বেঁধে মারধর করে চুরি করছে এসব যন্ত্র। চাঁদা চেয়ে বিকাশ নম্বরও দেওয়া হচ্ছে সেচ মালিকদের। এ অবস্থায় সেচযন্ত্রের নিরাপত্তা নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মালিকরা।
জয়পুরহাট পল্লীবিদ্যুত সমিতি সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ মাসে জেলার ৫টি উপজেলায় গভীর ও অগভীর নলকূপ থেকে ১৬১টি ট্রান্সফরমার ও ৭১টি মিটার চুরি হয়েছে। যার মধ্যে জয়পুরহাট সদরে ১৪টি, পাঁচবিবিতে ৩৬টি, আক্কেলপুরে ২১টি, কালাই উপজেলায় ৭৬টি এবং ক্ষেতলাল থেকে ১৪টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। আর মিটার চুরি হয়েছে জয়পুরহাট সদরে ৩টি, পাঁচবিবিতে ১০টি,আক্কেলপুরে ২৯টি, কালাইয়ে ১৫টি এবং ক্ষেতলালে ১৪টি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্ষেতলাল উপজেলার দক্ষিণ বস্তা গ্রামের শওকত আলীর বিদ্যুত চালিত গভীর নলকূপ থেকে গত ৩ এপ্রিল রাতে মুখোশধারী একদল দুর্বৃত্ত ধারালো অস্ত্র ধরে ড্রেনম্যান এর হাত-পা বেঁধে ১০ কেভির ৩টি ট্রান্সফরমার, খুঁটি থেকে বিদ্যুতের তার এবং ব্যারেল খুলে নিয়ে গেছে। সেই থেকে প্রায় ১০দিন সেচ কার্যক্রম বন্ধ থাকে ওই গভীর নলকূপে।
এ ঘটনার ১৫ দিন আগে ওই সেচযন্ত্র থেকে বৈদ্যুতিক মিটারও চুরি হয়। একইভাবে ক্ষেতলালের মামুদপুর ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি গভীর নলকূপ মালিকের কাছে ২০ হাজার টাকা করে চাঁদা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চাঁদা না দিলে সেচ কাজ বন্ধ থাকবে বলে মোবাইলে হুমকিও দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার পর ভয়ে অনেক সেচ মালিক চোরদের দেওয়া বিকাশ নম্বরে টাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে ভুক্তভোগী সেচ মালিকরা অভিযোগ করেছেন।
তারা জানান, মিটার চুরির পর চোরদের টাকা দিয়ে মিটার ফেরত পেলেও পল্লীবিদ্যুত কর্তৃপক্ষ সেই মিটার আর গ্রহণ করছেন না। ফলে একদিকে চোরদের টাকা দিতে হচ্ছে, অন্যদিকে নতুন মিটার কিনতেও খরচ হচ্ছে। আর চুরির পর ১০ কেভির তিনটি ট্রান্সফরমার কিনতে খরচ পড়ছে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। অসময়ে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে সেচ কার্যক্রম চালাতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
আরও পড়ুনমিনিগাড়ি গ্রামের গভীর নলকূপ মালিক সুলতান মাহমুদ বলেন, মীর্জাপুর মৌজার তার গভীর নলকূপ থেকে চোরের দল ঈদের পর মিটার চুরি করলে সেচ বন্ধ থাকে। পরে যোগাযোগ করে বিকাশ নম্বরে (০১৭৭১-২৮৬৫৭৬) ২০ হাজার টাকা দিলে তারা মিটার যথাস্থানে দিয়ে যায়। তিনি বলেন, শুধু আমি নয় এ অঞ্চলের বিভিন্ন মাঠে আমাদের গ্রামেরই ১০টি গভীর নলকূপ আছে। যাদের প্রত্যেকেই চোরদের বিকাশে টাকা দিয়ে সেচযন্ত্র সচল রেখেছেন।
জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুত সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আবু উমাম মো: মাহবুবুল হক বলেন, বিগত ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেলায় ৪৯৬টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। যার দাম ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৮৬ হাজার ৮৮৭ টাকা। এ ছাড়া মিটার চুরিতো আছেই। জেলায় মোট ৬ হাজার ৯৫২টি ট্রান্সফরমারের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম চলছে।
এতগুলো সেচযন্ত্রে নিরাপত্তা দেওয়া পল্লীবিদ্যুত সমিতির পক্ষে সম্ভব নয়।জেলা প্রশাসক ও জেলা সেচ কমিটির সভাপতি আফরোজা আকতার চৌধুরী বলেন, সেচযন্ত্রের মিটার ও ট্রান্সফরমার চুরি বন্ধে পুলিশী তৎপরতার পাশাপাশি প্রশাসনও সহযোগিতা করছে। আশা করছি খুব শীঘ্রই এ পরিস্থিতির অবসান ঘটবে।
মন্তব্য করুন