পঁচিশ ধরনের আঙুর চাষ করে তাক লাগিয়ে দিলেন মাসুদ তালুকদার

পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি : বাঁশ ও প্যারাসুট সুতা দিয়ে বিশেষ পদ্ধতির মাচায় ঝুলে আছে থোকা থোকা মিষ্টি আঙুর। সবুজ পাতার মাঝে উঁকি দিচ্ছে কোথাও লম্বা, কোথাও গোলাকার, আবার কোথাও হালকা বাদামি হলুদ-সবুজ রঙের মিশ্রণের আঙুর। আর মাস খানেক পরেই মে মাসের শেষে অথবা জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে এসব আঙুর খেতে কোনটা মিষ্টি আবার কোনটা হালকা টক-মিষ্টি হবে। এসব আঙুর দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও বেশ মজার।
সড়কের পাশে আঙুরের এই বাগান দেখলে যে কারোরই দৃষ্টি আটকে যায় বাগানের দিকে। আগে মানুষের ধারণা ছিল, আঙুর একটি বিদেশি ফল, এ দেশে চাষ করলে হয় টক। কিন্তু সেই ধারণা পাল্টে দিয়ে মিষ্টি আঙুর চাষ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন পীরগঞ্জে’র রামনাথপুর ইউপি’র খেজমতপুর তালুকদার পাড়ার তাজিম উদ্দিনের ছেলে তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মাসুদ তালুকদার।
বছর দুইয়েক আগে নিজের বাগান বাড়িতে ২৭ শতক জমিতে বাণিজ্যিকভাবে রাশিয়ান বাইকুনুর, এ্যাকোলো, ইতালির ব্লাক মেজিক, ভারতের ভিএসসি, কৃষ্ণাসহ ৩৫টি জাতের আঙুর চাষ করেন তিনি। তার বাগানে গেলেই দেখা মিলবে মাচায় ঝুলে আছে থোকা থোকা আঙুর। প্রতিদিন অনেকেই তার বাগান দেখতে আসেন। গতবছর প্রথমবারের মতো ফল আসে, সেই ফল প্রতিবেশী ও দর্শনার্থীদের মাঝে বিতরণ করে তাক লাগিয়ে দেন। এ বছর পর্যাপ্ত ফল ধরেছে। ফল বিক্রি করে ভাল মুনাফা অর্জনের সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী ও উন্নতমানের এ জাতের আঙুর চাষে কোনো কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না। কেবলমাত্র গোবর বা জৈব সার ও পোকামাকড় মারার জন্য ভারমিটেক ব্যবহার করেই এ ফল চাষ করা যায়। তাই ফসলে জৈব-বালাইনাশক ব্যবহারের জন্য কৃষি উদ্যোক্তাদের আগ্রহ সৃষ্টি করানো হচ্ছে। পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে আঙুর চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুনমাসুদ তালুকদার জানান, গেল দুই বছর আগে ৩৫ জাতের আঙুরের চারা সংগ্রহ করে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু করেন। প্রথম বছরেই আঙুর চাষে সফলতা পেয়েছেন। এ বছর বাগানে ২৫ জাতের গাছ রয়েছে। এর মধ্যে বাইকুনুর, এ্যাকোলো, ব্লাক মেজিক, কৃষ্ণা, গ্রিণ লং, অস্ট্রেলিয়ান ১২ মাসি, চয়ন, সুপার সোনাকা, ছমছমসহ ১০/১২টি জাতের আঙুরের ফলন ভালো। এর মধ্যে রাশিয়ান বাইকুনুর জাতটি সবচেয়ে ভালো এবং ভালো ফলন হয়েছে। এ জাতটি দেশের আবহাওয়া ও চাষের পরিবেশ উপযোগী বলে তিনি দাবি করেন।
তিনি বলেন, ২৭ শতাংশ জমিতে আঙুর চাষ করতে গিয়ে গাছের চারা, মাচা, পরিচর্যাসহ সব মিলিয়ে খরচ পড়েছে এক লাখ ১০ হাজার টাকা। আঙুর বাগানে যে পরিমাণ ফল এসেছে এবং বর্তমান যা বাজার মূল্য, তাতে আনুমানিক ২ থেকে আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাদেকুজ্জামান জানান, আঙুর একটি উচ্চমূল্যের বাণিজ্যিক আমদানি নির্ভর ফসল, উদ্যোগি কৃষক মাসুদ তালুকদারের আঙুর ফল চাষ এই এলাকার অন্যান্য কৃষকদের নতুন নতুন ফল চাষাবাদে উৎসাহিত করবে।
মন্তব্য করুন