ভিডিও রবিবার, ০৪ মে ২০২৫

বিএসসি নার্সিংয়ের শিক্ষক ডিপ্লোমা নার্স, সব নার্সিং কলেজে শাটডাউন

বিএসসি নার্সিংয়ের শিক্ষক ডিপ্লোমা নার্স, সব নার্সিং কলেজে শাটডাউন

নার্সিং কলেজগুলোতে যোগ্যতার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগসহ চার দফা দাবিতে পাঁচ দিন ধরে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন নার্সিং শিক্ষার্থীরা।

আজ শনিবার (৩ মে) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অনুরোধও জানিয়ে চার দফা দাবিও তুলে ধরেছন তারা।

শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীদের পক্ষে ঢাকা নার্সিং কলেজের স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের সভাপতি মহিব উল্লাহ স্বাক্ষরিত এক স্মারকলিপিতে এ দাবি জানানো হয়।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ২০০৬ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশের স্বাস্থ্যখাতে উন্নত সেবা প্রদান ও বিদেশে দক্ষ নার্স রপ্তানির লক্ষ্যে বহিঃর্বিশ্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ফিলিপাইন, কানাডা, জাপান ও সুইডেনের মতো দেশের সহযোগিতায় উন্নত কারিকুলাম প্রণয়নপূর্বক দেশের বিভাগীয় মেডিকেল কলেজগুলোতে অবস্থিত নার্সিং কলেজগুলোতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধীনে চার বছর মেয়াদি বিএসসি ইন নার্সিং কোর্স চালু করে। সে সময় বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় এসএসসি উত্তীর্ণ নার্সিংয়ে ডিপ্লোমা করা নার্সদের দেশে-বিদেশে বিভিন্ন ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে চার বছর মেয়াদি বিএসসি ইন নার্সিং কোর্সের শিক্ষক হিসেবে সংযুক্তির আদেশের মাধ্যমে নিয়োগ দিয়ে কোর্স পরিচালনা করে।

‘কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, তারই সুযোগ নিয়ে গত ১৭ বছর এই কোর্সের উপর এই শিক্ষক-শিক্ষিকারা একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে যাচ্ছে।’—যোগ করা হয় স্মারকলিপিতে। বলা হয়, এই কলেজগুলোতে প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদ থাকা স্বত্ত্বেও আইন অনুসারে যোগ্যদের সেখানে আসতে দেওয়া হয়নি। ফলে নার্সিং শিক্ষার মান চরমভাবে বিঘ্ন হচ্ছে। একই সাথে যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষকের অভাবে গবেষণা, গুণগত চিকিৎসাসেবা, প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি অনুশীলন, সিমুলেশন, বেডসাইড ক্লিনিক্যাল প্র্যাক্টিস এবং ল্যাব অনুশীলন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে দেশে-বিদেশে দক্ষ নার্স রপ্তানিতে সরকারের মূল লক্ষ্য অর্জন ব্যাহত হচ্ছে।

ডিপ্লোমা নার্সদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে স্মারকলিপিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলমান চার বছর মেয়াদি বিএসসি ইন নার্সিং কোর্সের জন্য স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও জনবল নিয়োগের জন্য সুস্পষ্ট নীতিমালা রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নার্সিং শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে নীতিমালা রয়েছে, ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতি রয়েছে, নার্সিংয়ে সুস্পষ্ট নিয়োগবিধি রয়েছে, যার কোনোটিই এই ডিপ্লোমা শিক্ষকরা তোয়াক্কা করছেন না। উল্টো তারা মূল পদের বিপরীতে হাসপাতাল থেকে অতিরিক্ত দায়িত্ব, সংযুক্তি ও চলতি দায়িত্বের মাধ্যমে হাসপাতালে রোগীর সেবা বাদ দিয়ে নার্সিংয়ের শিক্ষকতায় প্রবেশ করেন। এই নার্সরা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট না থাকায় ভালোভাবে রিডিংও পড়তে পারেন না। অনেকে ই-মেইলও করতে জানেন না। আমরা সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় জিপিএ-৫সহ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ভালো ফলাফল অর্জন করে লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রীদের সাথে প্রতিযোগিতা করে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় সর্বোচ্চ পেয়ে ভর্তি হই। পরবর্তীতে নার্সিংয়ের ক্লাসরুমে এসে ইন্টারনেট থেকে কপি-পেস্ট নামক এ ধরনের মানহীন স্লাইড লেকচার আকারে পড়তে দেখে হীনমন্যতায় ভুগছি।

যারা চার বছর মেয়াদি বিএসসি ইন নার্সিং কোর্স সুনামের সাথে শেষ করে দেশে-বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন, ডিপ্লোমা নার্সরা তাদেরও শিক্ষক হিসেবে আসতে বাধা প্রদান করে আসছেন উল্লেখ করে স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, ২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত নার্সিংয়ে স্নাতক সম্মান ডিগ্রিধারী এবং কোর্সে অধ্যয়নরত  ছাত্রছাত্রীদের জন্য কোনো রকম পেশাগত অগ্রগতির পথ কিংবা কর্মক্ষেত্র বা দায়িত্বের সীমা ও সুযোগ তৈরি করা হয়নি, যেখানে প্রতি বছর প্রায় ১৫ হাজার ছাত্রছাত্রী এই কোর্স সম্পূর্ণ করে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি অর্জন করেন; যা নার্সিংয়ে স্নাতক সম্মান ডিগ্রিধারী নার্সদের জন্য চরম হতাশার কারণ।

নার্সিং শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীদের পক্ষে স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের সভাপতি মহিব উল্লাহ আরও লিখেছেন, ‘এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরে গত জুলাই পরবর্তী ২১ আগস্ট থেকে লিখিত ও মৌখিকভাবে জানিয়ে আসছি, এমনকি রাজপথেও আন্দোলন করেছি। আমাদের দাবিগুলো স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, সেবা ও শিক্ষা শাখার অতিরিক্ত সচিব, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও পরিচালকরা কয়েকবার মিটিংয়ের পর আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের জন্য লিখিত আশ্বাস দিয়েছেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলেছেন। কিন্তু প্রায় আট মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও ডিপ্লোমা শিক্ষকদের বাধায় কোনো বাস্তবায়নের মুখ দেখিনি, যার অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন নার্সিং কলেজগুলোতে যোগ্যতার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে গত ২৯ এপ্রিল থেকে কলেজগুলোতে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি চলছে, যতদিন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসির নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ না দেওয়া হবে, ততদিন এই কর্মসূচি চলমান থাকবে।’

আরও পড়ুন

‘সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি’ বলেও উল্লেখ করা হয় এতে।

বিএসসি ইন নার্সিং শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীদের চার দফা দাবি—

১. এসএসসি পাস করা ডিপ্লোমা নার্সদের তাদের নিজস্ব কর্মস্থল ফিরিয়ে নিয়ে হাসপাতালে রোগদের সেবায় নিয়োজিত করাসহ নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউজিসির নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করতে হবে।

২. অন্যান্য পেশাজীবী ডিপ্লোমা গ্রাজুয়েটদের ন্যায় চার বছর মেয়াদি বিএসসি ইন নার্সিং ডিগ্রিধারী নার্সদের জন্য স্বতন্ত্র ক্যারিয়ার পাথ ও অর্গানোগ্রাম তৈরি করে দেশ ও দেশের বাইরে দক্ষ ও উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে।

৩. নার্সিংয়ে স্নাতক সম্মান ডিগ্রিধারী নার্সদের জন্য নবম গ্রেডে পদ সৃজন ও সরাসরি নিয়োগ দিতে হবে।

৪. ২০১৬ সালের নার্সিং নিয়োগবিধি ও জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ বাস্তবায়ন করতে হবে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পল্টনে সাব্বির টাওয়ারের আগুন নিয়ন্ত্রণে

একদিন পেছালো খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা

দিনাজপুরের বিরলে ২২৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার

বগুড়ার ধুনটে জমিতে বিষ দিয়ে ফসল নষ্টের অভিযোগ

বগুড়ার শেরপুরে জমে উঠেছে ধান কাটা শ্রমিকের হাট

নেটপ্রো মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, বগুড়ায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি