মোবাইলে ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দিলেন ভাই, গণধোলাই খেলেন প্রধান শিক্ষক

নিউজ ডেস্ক: গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার মান্দ্রা-রাধাগঞ্জ ইউনাইটেড ইনস্টিটিউশনে ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দেওয়ায় অভিযুক্তের ভাই প্রধান শিক্ষককে গণধোলাই দিয়েছে এলাকাবাসী। এ সময় অভিযুক্তসহ প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। উল্লেখ্য অভিযুক্ত একই স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক।
মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) সকালে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসিরউদ্দিনের ভাই বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সাইফুদ্দিন কাজল বিভিন্ন শ্রেণীর ছাত্রীদের কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। বিভিন্ন সময় এসব ঘটনা জানাজানি হলেও প্রধান শিক্ষকের প্রভাবে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি।
গতকাল সোমবার রাতে দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে মোবাইল ফোনে কুপ্রস্তাব দিলে ওই ছাত্রী কৌশলে সাইফুদ্দিন কাজলের কথা রেকর্ড করে অভিভাবকদের জানায়। পরে অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন।
মঙ্গলবার প্রতিদিনের মতো স্কুলের কার্যক্রম শুরু হয়। অ্যাসেম্বলি শেষে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে না গিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক সাইফুদ্দিন কাজলের পদত্যাগ ও বিচারের দাবিতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা মিছিল নিয়ে রাধাগঞ্জ-কুশলা সড়কে অবস্থান নেয়। এসময় প্রধান শিক্ষক নাসিরউদ্দিন বিদ্যালয়ে আসছিলেন। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর রোষানলে পড়ে তিনি গণধোলাইয়ের শিকার হন।
আরও পড়ুনখবর পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাসুম বিল্লাহ এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষক এবং অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে পদত্যাগ এবং বিচারের দাবি জানিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় মো. মাসুম বিল্লাহ দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত করে সাইফুদ্দিন কাজলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে যায়।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা বলেন, ‘‘একজন শিক্ষক হয়ে মেয়ের বয়সী ছাত্রীকে সে কীভাবে কুপ্রস্তাব দেয়? সাইফুদ্দিন কাজল দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মেয়েকে কুস্তাব দিচ্ছে। আমরা একাধিকবার প্রধান শিক্ষককে বিষয়টি জানালেও তিনি তার ভাইয়ের বিচার করেননি।’’
দশম শ্রেণীর অপর শিক্ষার্থী সুরভী অভিযোগ করে বলেন, ‘‘সাইফুদ্দিন কাজল স্যার ক্লাসে ও প্রাইভেট পড়ার সময় প্রায়ই ছাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করত এবং কুপ্রস্তাব দিতো। আমরা প্রতিবাদ করতে চাইলে পরীক্ষায় ফেল করানোর হুমকি দিতো। ভয়ে আমরা চুপ থাকতাম।’’
এ বিষয়ে জানার জন্য বিদ্যালয়ে ও বাড়িতে গিয়ে প্রধান শিক্ষক নাসিরউদ্দিন এবং সাইফুদ্দিন কাজলকে পাওয়া যায়নি। দুজনের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাদের বক্তব্য জানা যায়নি।
এ দিকে কোটালীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘‘বিদ্যালয়টির পরিবেশ বর্তমানে শান্ত রয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
এ ঘটনায় উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার এসএম শাহজাহান সিরাজকে প্রধান করে এক সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে দুই কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
মন্তব্য করুন