ভিডিও রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

বগুড়ায় ডিবির পরিচয়ে প্রতারণা দুই ভুয়া অফিসার গ্রেফতার

বগুড়ায় ডিবির পরিচয়ে প্রতারণা দুই ভুয়া অফিসার গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার: জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবি বগুড়ার অভিযানে পুলিশের ওয়াকিটকি সাদৃশ্য মোবাইল ফোন, ইলেক্ট্রনিক শক মেশিনসহ ডিবি পুলিশের দুই ভুয়া অফিসার পরিচয়ধারী প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়েছে।

আজ রোববার ৬ জুলাই ও গতকাল শনিবার ৫ জুলাই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা দীর্ঘদিন ধরে ডিবির অফিসার পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছিল। ডিবি সূত্র জানায়, বগুড়া শহরতলীর গোদারপাড়া বাজারে মোঃ জুবায়ের আহমেদ এর বিকাশের দোকানে মারুফ ইসলাম নামে এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে লেনদেন করে আসছিলেন।

লেনদেনের এক পর্যায়ে উক্ত দোকানদার তার কাছে ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা পাওনা ছিলো। এ অবস্থায় গত ২১ জুন সকাল দশটার দিকে একটি মোবাইল নম্বর হতে মারুফ ইসলামকে বগুড়া ডিবি পুলিশের প্রধান শামীম পরিচয়ে ফোন করে শহরতলীর চারমাথা ফিলিং স্টেশনের সামনে আসতে বলে। এরপর তিনি সরল বিশ্বাসে উল্লেখিত স্থানে উপস্থিত হন।

এ সময় শামীম মারুফ ইসলামকে বলে যে জুবায়েরের বিকাশের দোকানের বাকি টাকা এখনই পরিশোধ করে দিতে হবে। এ সময় তিনি দুইদিন পরে কিছু টাকা পরিশোধ করবেন বললে শামীম তার নিকট হতে মোটরসাইকেলে এক হাজার টাকার তেল উঠিয়ে নিয়ে চলে যায়।

পরবর্তীতে গত ২৩ জুন বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে মারুফ ইসলাম চারমাথাস্থ মেঘসিটি কমপ্লেক্স ভবন এর নিচতলায় তার অফিসে অবস্থান করছিলেন। এ সময় বগুড়া ডিবি প্রধান পরিচয়ধারী প্রতারক শামীম মারুফকে ফোন করে তাকে চারমাথা ফিলিং স্টেশন এর সামনে যেতে বলে।

এরপর মারুফ ইসলাম সেখানে গেলে শামীম তার নিকট হতে বিকাশের দোকানের পাওনা ৭৭ হাজার টাকা দাবি করে। এ সময় মারুফ উক্ত টাকা তাকে না দিয়ে বিকাশের দোকান দারকে দেওয়ার কথা বললে প্রতারক শামীম তার নিকটে থাকা ওয়াকিটকি দেখিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগালি এবং প্রাণ নাশের হুমকিসহ মিথ্যা মামলার ভয় দেখায় এবং জোড়পূর্বক মারুফের পকেটে থাকা ৪৫ হাজার টাকা নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।

এ সংক্রান্ত সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। উক্ত মামলার প্রেক্ষিতে অফিসার ইনচার্জ, জেলা গোয়েন্দা শাখা, বগুড়া এর দিক নির্দেশনায় এসআই মোঃ আব্দুল কুদ্দুস এর নেতৃত্বে বগুড়া ডিবির একটি চৌকস দল নিখুঁত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ৫ জুলাই সকালে চারমাথা গোদারপাড়া এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে ভূয়া ডিবি অফিসার পরিচয়ে প্রতারনাকারী আসামি মোঃ শামীম আহম্মেদ (৪৬)কে গ্রেপ্তার করা হয়।

ধৃত শামীম দুপচাঁচিয়া উপজেলার চৌধুরী পাড়ার মৃত সাইফুল ইসলামের ছেলে। , গ্রেফতারকালে ধৃত আসামীর হেফাজত হতে ১টি ওয়াকিটকি সাদৃশ্য মোবাইল ফোন, ১টি বক্সিং রিং, ১টি বৈদুতিক হ্যান্ডশক মেশিন, ১টি ড্রাইভিং লাইসেন্স, ১টি অস্থায়ী সোর্স নিয়োগের আবেদনপত্র ও ১টি ডাঃ মোঃ শামীম আহম্মেদ লেখা ভিজিটিং কার্ড উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়।

আরও পড়ুন

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামি শামীম জানায় যে, সে দীর্ঘদিন যাবৎ নিজেকে ডিবির ভুয়া অফিসার পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জনের নিকট হতে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আদায় করে আসছিলো। কিন্তু এরপর ওই প্রতারক চক্রের সদস্যরা থেমে থাকেনি। তারা প্রতারণা করে যাচ্ছিল । এই ধারাবাহিকতায় মেহেদী হাসান শাওন নামে আরেকজন প্রতারক চক্রের কবলে পড়ে।

তিনি আজ ৬ জুলাই বগুড়া ডিবি অফিসে মোখিক অভিযোগ করেন যে তিনি প্রতারক চক্রের কবলে পড়েছেন।, গত ৫ জুলাই দুপুর বারোটার দিকে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি মোবাইল নম্বর হতে তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর এ ফোন করে নিজেকে বগুড়া ডিবির অফিসার রেজা পরিচয় দেয় এবং বলে যে তার নামে ৭/৮ টি মামলা আছে। সে তাকে গ্রেফতার করা জন্য খুঁজছে। সে যদি তার সাথে দেখা করে পঞ্চাশ হাজার টাকা চাঁদা না দেয় তাহলে সে তাকে গ্রেফতার করবে।

এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে মোবাইল নম্বর থেকে শাওনকে ফোন করে টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। উক্ত টাকা না দিলে তাকে বিভিন্ন মিথ্যা মামলাসহ প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও প্রদান করে। একপর্যায়ে শাওন ভয় পেয়ে টাকা প্রদান করতে রাজি হলে শাওনকে প্রতারক রেজা ও তার সহযোগীরা সঠিক বিকাশ/নগদ একাউন্ট সম্বলিত মোবাইল নম্বর (পারসোনাল) প্রদান করে। এরপর শাওন বিকাশ একাউন্টে টাকা প্রদান না করে সরাসরি টাকা দিতে চায়।

এরপর প্রতারক তাকে টাকা নিয়ে শহরের সুলতানগঞ্জপাড়া, উটের মোড় সংলগ্ন ঈদগাহ্ মাঠের সামনে পাকা রাস্তার উপর যেতে বলে। এ সময় শাওন তাৎক্ষণিক বিষয়টি ডিবি বগুড়া’র অফিসার ইনচার্জের নিকট মৌখিক ভাবে জানায়।

এরপর তাৎক্ষণিক ডিবি বগুড়া’র অফিসার ইনচার্জের নির্দেশে ডিউটিতে টহলরত ডিবির একটি টিমের সহযোগিতায় শাওন আজ ৬ জুলাই ভোর চারটার দিকে টাকা নিয়ে উক্ত স্থানে গেলে ১নং আসামি মোঃ তাফসির শাওনের নিকট হতে টাকা নিতে আসলে তাকে আটক করা হয়। এছাড়া সেখান থেকে ৪/৫ জন কৌশলে দৌড়াইয়া পালাইয়া যায়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামী জানায় যে, সে এবং পলাতক আসামীগণ পরস্পর যোগসাজসে দীর্ঘদিন যাবত নিজেদের পরিচয় গোপন করে বগুড়া ডিবির অফিসার পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জনকে মিথ্যা মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে আসছিল।

ধৃত প্রতারক তাফসীর (২৮) শহরের সুলতানগঞ্জ পাড়ার হাবিবের ছেলে। এ ব্যাপারে বগুড়া ডিবির ওসি মোঃ ইকবাল বাহার জানান, ডিবির পরিচয় দিয়ে একটি চক্র প্রতারণা করতে মাঠে নেমেছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। ইতোমধ্যে ওই দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রতারক চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে ডিবির অভিযান চলমান থাকবে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৩১৭

বিএনপিকে ‘সংস্কারবিরোধী’ বলে পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে: মির্জা ফখরুল

ইসলামিক এনজিওগুলোকে সামাজিক ব্যবসায় এগিয়ে আসার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

কোনো দেশে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারিত থাকার নজির নেই: সালাহউদ্দিন

হারুন-বিল্পবের বিরুদ্ধে মামলা করেছি তাদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তার করুন

জামায়াতসহ কিছু দল নির্বাচন নিয়ে ডাবল স্ট্যান্ডবাজি করছে: রিজভী