গরমে দাঁত ভালো রাখতে করণীয়

লাইফস্টাইল ডেস্ক : চলছে গ্রীষ্মকাল। প্রতিনিয়ত বাড়ছে গরম। এ সময় সবাই একটু স্বস্তি চান। কিন্তু গরমের কারণে দাঁত ও মাড়ির নানা ক্ষতি হতে পারে। এই ক্ষতি থেকে রেহাই পেতে আমাদের কিছু সহজ পদ্ধতি মেনে চলা প্রয়োজন।
গরমের সময় বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে যায়। ডিহাইড্রেশনের কারণে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। এতে মুখে লালা নিঃসরণ কম হয়। লালা বা স্যালাইভার কাজ হলো দাঁতকে পরিষ্কার রাখা, ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে রক্ষা করা, কথা বলতে সহায়তা করা। স্যালাইভা নিঃসরণ কম হলে দাঁত ক্ষয়, মাড়ির রোগ হতে পারে।
গরমে মুখে লালা স্বল্পতার কারণে মুখে কিছু সমস্যা তৈরি হতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হলো মুখের শুষ্কতা। মুখগহ্বর শুকনো থাকার কারণে মুখে বাজে গন্ধ হতে পারে। দাঁতের মধ্যে লেগে থাকা খাবারের অংশ পরিষ্কার করতে লালা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই পানির পিপাসা পাওয়ার আগেই পানি পান করলে উপকার পাওয়া যেতে পারে। হাতের কাছে পানি না থাকলে সুগার ফ্রি চুইং গাম খেতে পারেন।
গরমকালে মদ্যপান করা উচিত নয়। অত্যধিক মদ্যপান থেকে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। গরমের সময় বেশি করে বিশুদ্ধ পানি, ডাবের পানি বা ফলের রস পান করা যেতে পারে।
গরমকালে আরামের জন্য মিষ্টি এবং কার্বোনেটেড পানীয় বেশি খাওয়া হয়। কিন্তু এই ধরনের পানীয় বেশি মাত্রায় পান করলে দাঁতের ক্ষতি হতে পারে। একান্তই এই ধরনের কিছু পান করতে হলে, স্ট্র ব্যবহার করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে দাঁত এবং মাড়ি কম পানীয়ের সংস্পর্শে আসবে।
গরমের দিনে অনেক সময় পরিশ্রমের পর পানীয়ের সঙ্গে বরফ খাওয়া বেশি হয়। মনের ভুলে বরফ চিবিয়ে ফেললে দাঁতের ক্ষতি হতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দাঁতে ফাঁটলও দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে বরফের পরিবর্তে ঠান্ডা পানি পান করা যেতে পারে।
ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি দাঁত ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই যেসব খাবারে ক্যালসিয়াম (দুগ্ধজাত খাবার, পালং শাক) এবং ভিটামিন ডি (মাছ, ডিম) বেশি থাকে, গরমের সময় তা খাওয়া প্রয়োজন।
এছাড়া দাঁত ভালো রাখতে করণীয় ঃ
১. একটি নরম ব্রিস্টেলের টুথব্রাশ এবং ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট দিয়ে দিনে দুবার দাঁত ব্রাশ করতে হবে।
২. দিনে অন্তত একবার আপনার দাঁত ফ্লস করুন, যাতে আপনার দুই দাঁতের মাঝে জমে থাকা খাবার পরিষ্কার হয়।
আরও পড়ুন৩. সংক্রমণের কারণ প্লাক এবং ব্যাকটেরিয়া কমাতে অ্যান্টিসেপ্টিক মাউথওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
৪. চিনিযুক্ত এবং স্টার্চযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন, যে কারণে দাঁতের ক্ষয় এবং সংক্রমণ হতে পারে।
৫. দাঁতের সংক্রমণ শুরু হওয়ার আগে নিয়মিত চেকআপ এবং দাঁত পরিষ্কারের জন্য দন্ত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
৬. যদি আপনার দাঁতে বিদ্যমান কোনো দাঁতের সমস্যা থাকে, যেমন গহ্বর বা মাড়ির রোগ, তাহলে সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য দ্রুত দন্ত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
৭. ধূমপান বা অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার এড়িয়ে চলুন, যা মুখে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
৮. খেলাধুলা করার সময় একটি মাউথগার্ড পরিধান করুন, যা মুখকে আঘাত থেকে রক্ষা করতে পারে।
৯. সর্বোত্তম মৌখিক স্বাস্থ্য এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য সুবিধার জন্য খাদ্যতালিকায় প্রচুর ফল এবং শাকসবজি অন্তর্ভুক্ত করুন।
১০. দাঁতের সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করার জন্য নিয়মিত দন্ত বিশেষজ্ঞের পরামর্শে ব্রাশ, ফ্লসিং, ওরাল হাইজিনের অভ্যাস করুন।
লেখক: ডেন্টাল সার্জন, সিকদার ডেন্টাল কেয়ার
মন্তব্য করুন