বাণিজ্যিকভাবে বিশ্বের ৭০টি দেশে রপ্তানি
জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে কচুরিপানার তৈরিকৃত পণ্য বিক্রি করে শিক্ষিত বেকার নারী ও গৃহবধূরা স্বাবলম্বী

নজরুল ইসলাম আকন্দ, ক্ষেতলাল (জয়পুরহাট) থেকে ঃ সংসার গুছিয়ে সবকিছু সামলিয়ে বাসা-বাড়িতে অবসর সময়ে বসে কচুরিপানার শুকনো ডাটা দিয়ে বাস্কেট, ঝুড়ি ও লন্ড্রিবক্সসহ বিভিন্ন সৌখিন তৈজসপত্র সামগ্রী তৈরি করছেন জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার গ্রাম-গঞ্জে শিক্ষিত বেকার নারী ও গৃহবধূরা। এ সব সৌখিন সামগ্রী বিক্রি করে তাদের সংসারের বাড়তি আয়সহ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন তারা। বর্তমান এ সব তৈজসপত্র এশিয়া মহাদেশসহ বিশ্বের ৭০টি দেশে বাণিজ্যিকভাবে রপ্তানি হচ্ছে। এসব পণ্য বাজারজাত ও বিদেশে রপ্তানির বিষয়ে সহযোগিতা করছেন জয়পুরহাটের স্থানীয় এক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, এ উপজেলার প্রায় ২ হাজার শিক্ষিত বেকার নারী ও গৃহবধূরা তাদের সংসারের অন্যান্য কাজের ফাঁকে কচুরিপানার শুকনো ডাটা দিয়ে সৌখিন ঝুড়ি, বাস্কেট, লন্ড্রিবক্সসহ বিভিন্ন তৈজসপত্র তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এসব কাজ করে তাদের সংসারের বাড়তি আয় উপার্জনে ঝুঁকে পড়ছেন তারা। ঘরের গৃহবধূর পাশাপাশি শিক্ষিত বেকার নারীরাও এ সব কাজে এগিয়ে এসেছে।
শিক্ষিত তবে বেকার রোকসানা বলেন, কচুরিপানার শুকনো ডাটা দিয়ে সৌখিন তৈজসপত্র তৈরি করা যায়। এ সব তৈরিকৃত পণ্য বিভিন্ন দামে বিক্রি করে ঘরে বসে মাসে সর্বনিম্ন ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। নিজেদের হাত খরচের জন্য পরিবারের কাছ থেকে টাকা নিতে হয় না। কিছুটা হলেও আমার বেকারত্বের সমাধান হচ্ছে।
ক্ষেতলাল পৌর এলাকার হেরাকুলা মহল্লার খালেদা, পাঠবাড়ী মহল্লার বাসন্তী রানী, ঠাকুরবাড়ী মহল্লার টপি রানী, সূর্যবান মহল্লার মর্জিনাসহ অনেকে বলেন, আমরা দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এ সব তৈজসপত্র তৈরি করে বিক্রি করে থাকি। এতে আমাদের অনেক টাকা আয় হয়। এ সব কাজের জন্য জয়পুরহাটের একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আমাদেরকে সহযোগিতা করে এবং তাদের মাধ্যমে এ সব পণ্য বিক্রি করে থাকি।
মা হ্যান্ডি ক্রাফ্টসের প্রশিক্ষক রমানা রায়হান বলেন, এলাকার গৃহবধু ও শিক্ষিত বেকার নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিদেশে রপ্তানিযোগ্য এবং গুণগত মান সম্পন্ন তৈজসপত্র তৈরি করতে নারীদেরকে একত্রিত করে হাতে কলমে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ সব কাজের জন্য কচুরীপানার শুকনো ডাটা ও অন্যান্য মালামাল তাদেরকে সরবরাহ করা হয়। এতে নিজেরা এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান লাভবান হচ্ছে।
আরও পড়ুনওই প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মাহফুজ আলম সবুজ বলেন, জয়পুরহাট জেলাতে কচুরিপানার শুকনো ডাটা দিয়ে নারীরা সৌখিন তৈজসপত্র তৈরি করছে। এসব পণ্য বিশ্বের ৭০টি দেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে আমি ক্ষেতলাল পৌর এলাকার পাঠবাড়ী নামক স্থান থেকে তাদের তৈরিকৃত তৈজসপত্র বিভিন্ন দামে ক্রয় করে বিদেশে রপ্তানি করে থাকি। এতে আমরা উভয়েই লাভবান হই। তবে এ সব পণ্য তৈরির জন্য কচুরিপানার শুকনো ডাটা দেশের বিভিন্ন নদী, বিল এলাকা থেকে সংগ্রহ করে এনে তাদের মাঝে সরবরাহ করতে হয়।
উপজেলার মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা লায়লা নাসরিন জাহান বলেন, ইতিপূর্বে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে প্রকল্পর মাধ্যমে নারীদেরকে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্লক বাটিক, নকশিকাঁথা, সৌখিন তৈজসপত্র সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। নারীরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তাদের বাস্তব কাজে লাগানো ইতিবাচক সাফল্য আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
মন্তব্য করুন