ভিডিও রবিবার, ১১ মে ২০২৫

প্রকৃতির সাথে লড়াই করে বেঁচে আছে সিরাজগঞ্জের যমুনার চরাঞ্চলের মানুষ

প্রকৃতির সাথে লড়াই করে বেঁচে আছে সিরাজগঞ্জের যমুনার চরাঞ্চলের মানুষ

হেলাল আহমেদ, সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জ জেলার যমুনা চরের পাঁচলক্ষাধিক মানুষের জীবন কাটে নিদারুণ কষ্টে। জেলার কাজিপুর, চৌহালী, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের পাঁচলক্ষাধিক মানুষ প্রকৃতির সাথে লড়াই করে বেঁচে আছে।

প্রতি বছর যমুনার প্রবল ভাঙন, ভূমিক্ষয়, বন্যা, ঝড়, ক্ষুধা, বঞ্চনা আর দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত এসব মানুষের জীবন কাটে অর্ধাহারে অনাহারে। যমুনার করাল গ্রাস থেকে বাঁচার জন্য তারা ছুটে যায় এক চর থেকে অন্য চরে। প্রতি বছর বাড়ি পরিবর্তন এদের নিত্যসঙ্গী।

সিরাজগঞ্জ জেলার ৫টি উপজেলার চরগিরিশ, নিশ্চিন্তপুর, তেকানী, খাসরাজবাড়ি, মনসুরনগর, নাটুয়াপাড়া, চৌহালী উপজেলার ঘোড়জান, স্থল, সাদিয়াচাঁদপুর, খাসকাউলিয়া, ওমারপুর, শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী, জালালপুর, রুপবাটি, সোনাতনী, পোরজনা, বেলকুচি উপজেলার বরধুল এবং সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার মেছড়া, কাওখোলা ও কালিয়াহরিপুর ই্উনিয়নের দেড়শতাধিক চরাঞ্চলের অধিবাসী নদী ভাঙন, বন্যা, ঝড়সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে বেঁচে আছে। সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ই্উনিয়নের আব্দুর রাজ্জাক জানান, তার ৬৫ বছরের জীবনে চারবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। আজ সব হারিয়ে তাদের পরিবার পথে বসার উপক্রম হয়েছে।

তিনি দুঃখ করে বলেন, বাপ-দাদার প্রায় ৪০ বিঘা জমি ছিল। বাড়িতে ৪/৫জন বছর হিসেবে কামলা থাকত। কিন্তু যমুনা তাদের সব কেড়ে নিয়েছে। আজ তারা নিঃস্ব। অধিকাংশ চরেই তেমন সুযোগ-সুবিধা না থাকায় শিক্ষার হার অনেক কম। কোনো কোনো চরে প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা থাকলেও উচ্চ শিক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। চিকিৎ্সা ক্ষেত্রেও চরবাসী অবহেলিত।

আরও পড়ুন

প্রতিটি চরে চিকিৎসা কেন্দ্র না থাকায় তারা আধুনিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। এছাড়া চরাঞ্চলে বাল্যবিয়ের সংখ্যাও বেশি। এখানে ১২/১৪ বছরের ছেলে-মেয়েদের বিয়ের প্রবণতা বেশি হওয়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। চরবাসীরা জানায়, সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীরা  মাঝে মাঝে এলেও তা চাহিদার তুলনায় কম।

তবে এত কিছুর পরও প্রতি বছর বন্যায় জমিতে পলি পড়ায় জমিগুলো উর্বর শক্তি বেড়ে যাওয়ায় এখানে কম পরিশ্রম ও কম খরচে প্রচুর পরিমাণে বাদাম, তিল, তিসি, কাউন, পাট, সরিষা, ধানসহ নানা ধরনের শাক-সবজি জন্মে। যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে চরবাসী তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর লাভবান হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা।

এই বিষয়ে কাজিপুরের অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক বকুল বলেন, চরের মানুষের কষ্টের শেষ নেই । বন্যা, খরা  ও  নদী ভাঙন চরবাসীদের যেন জীবন সঙ্গী। কষ্ট যেন এদের জীবন সঙ্গী। বর্ষায় নৌকায় এবং শুষ্ক মৌসুমে তপ্ত বালির পথ পায়ে হেঁটে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। চরে উৎপাদিত কৃষি পণ্যও অনেক সময় পরিবহনের অভাবে ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। তারপরও আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করায় চরের পলি মাটিতে ব্যাপক ফসলের উৎপাদন হয়। যার ফলে চরের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় দস্যুতা ও প্রতারণা মামলার আসামিসহ গ্রেফতার চার

বগুড়ার গাবতলীর পদ্মপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন দেশ সেরা

বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় ছাত্রলীগ সমর্থক সজিবের বিরুদ্ধে নাশকতা মামলা, জুলাই গেজেটে নাম প্রকাশ

অবশেষে নিষিদ্ধ হলো আওয়ামী লীগ

বগুড়ার শেরপুরে কৃষকের ভুট্টা লুটের অভিযোগ

সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১.৭ ডিগ্রি সূর্য দহনে পুড়ছে রাজশাহী