ভিডিও সোমবার, ০২ জুন ২০২৫

বাংলাদেশের মুক্তির মহানায়কঃ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান

 বাংলাদেশের জনপ্রিয়তম রাষ্ট্র নায়ক, রণাঙ্গণের বীরযোদ্ধা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্য ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি, বগুড়া জেলার বাগবাড়ী গ্রামে, এক সদ্ধান্ত মুসলিম পরিবারে। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় মেধাবী ছিলেন। ১৯৫২ সালে করাচি একাডেমি স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন কৃতিত্বের সঙ্গে। এরপর ১৯৫৩ সালে করাচির ডি. জে. কলেজে ভর্তি হন, কিন্তু ওই একই বছর সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে কাকুল মিলিটারি একাডেমিতে চলে যান। ১৯৫০ সালে তিনি পাক সেনাবাহিনীতে কমিশন পান। দুই বছর করাচিতে চাকরি করার পর ১৯৫৭ সালে তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে বদলি হয়ে আসেন পূর্ব পাকিস্তানে। এরপর ১১৯৫৯ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান সেনাবাতিনীর গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করেন। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে খেমকারান সেক্টরে তাঁর সাহসিকতা ছিল নজরকাড়া। সে কারণে তিনি বীরত্বসূচক পুরস্কারও পান। ১৯৬৬ সালে তিনি পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে নিযুক্ত হন, আর একই বছর কোয়েটার স্টাফ কলেজে কমান্ড কোর্সে অংশ নেন। এরপর ১৯৬৯ সালে মেজর পদে পদোন্ততি পেয়ে পূর্ব পাকিস্থানের জয়দেবপুরে সেকেন্ড ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে সেকেন্ড-ইন-কমাক্সসেবে দায়িত্ব নেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের সেই ভয়াবহ ঘটনার পর, যখন পাকিস্তানি বাহিনী বর্বর হামলা চালায়, তখন জিয়াউর রহমান দখলদারদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়ে ‘উই রিভোল্ট’ বলে সরাসরি বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। মৃত্যু অনিবার্য জেনেও তিনি পিছু হটেননি। 

পরিবারের জীবনের ঝুঁকি থাকলেও দেশের ডাকে সাড়া দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনি অমর হয়ে আছেন মুক্তিযুদ্ধের মহান ঘোষক হিসেবে। তারপর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি গঠন করেন নিজের নামে ‘জেড ফোর্স’, আর এক নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার হিসেবেও যুদ্ধের ময়দানে রাখেন অসাধারণ বীরত্বের স্বাধীনতার পর তিনি সেনাবাহিনীতে ফিয়ে যান এবং ১৯৭২ সাদে ডেপুটি চিফ হিসেবে পদেস্থতি পান। ১৯৭৩ সালের শেষ দিকে তিনি মেজর জেনাবেল হন। মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা এবং যুদ্ধে বীরোচিত অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে ১০ম অরাজকতা প্রাস করেছিল বাংলাদেশকে। দেশের রাজনীতির চরম অস্থিরতা অতিক্রম করে আসে ৭ নভেম্বরের মহান সিপাহী-জনতার বিপ্লব। এই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহামান গৃহবন্দি অবস্থা থেকে মুক্ত হন এবং ধীরে ধীরে দেশের নেতৃত্বে চলে আসেন। তাঁর সেনাবাহিনীর মধ্যে ছিল অগাধ জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা, যার ফলেই তিনি রাষ্ট্রের শীর্ষ ক্ষমতায় উঠে আসেন। ১৯৭৭ মাসের ২১ এপ্রিলে তিনি দেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরে ১৯৭৮ সালের ২৩ জুন দেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্বাচনে জিয়া আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানিকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে সরাসরি জনগণের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। জিয়াউর রহমান ছিলেন শুধু একজন রাষ্ট্রপ্রধানই নয়, চিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা, সংগঠক, সাহসী সৈনিক এবং একজন কর্মঠ ও দূরদর্শী নোভা।

তাঁর জীবনের গল্পটা যেন এক সংগ্রাম থেকে সাফল্যের পথে এগিয়ে যাওয়ার চিত্র যেখানে দেশপ্রেম ছিল তাঁর পথের প্রেরণা, আর অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে দেওয়া হয় ‘বীর উত্তম’ খেতাব ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ও  ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি, তখনকার সরকার সংবিধানের ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে বাকশাল বা একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালু করেছিল। দেশের সব পত্রিকা বন্ধ করে মাত্র চারটি সরকারি নিয়ন্ত্রিত পত্রিকা চালু রাখা হয়। সেই সময় চারদিকে একপ্রকার একনায়কতন্ত্র চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল, মানুষ কথা বলার স্বাধীনতা হারিয়েছিল, গণমাধ্যমের কন্ঠ রোগ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সাধারণ মানুষ চুপ ছিল না। তারা চাচ্ছিল ফের গণতন্ত্রে ফিরে যেতে। রাজনৈতিক দলগুলোর ভাবিও ছিল সংসদীয় গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়ায়। ঠিক তখনই জিয়াউর রহমান জনগণের মনের ভাষা বুঝে, সাহসিকতার সঙ্গে এম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে বাকশাল বাতিল করে দেশে আদেলীয় প্রগতয় পুনঃপ্রবর্তন করেন। তিনি সকল কালাকানুন স্কুলে দিয়ে যুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যমের পথ খুলে দেন। সেই সময় যখন একটি রাজনৈতিক মল আজীবন গণতন্ত্রের তথা বলে একদলীয় শাসন কায়েম করেছিল, তখন জিয়াউর রহমান, একজন সাবেক সেনা অফিসার ও মুক্তিযোদ্ধা, জাতির প্রয়োজনে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়ে প্রমাণ করেন তিনি আসলে একজন গণমানুষের নেতা। এখানেই ভার সঙ্গে অন্যদের পার্থক্য।

গণতন্ত্রের ভিত্তি মজবুত করার পরে, ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর, তিনি গঠন করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তি ছিল ১৯ দফা কর্মসূচি, যার মধ্য দিয়ে তিনি দেশকে উন্নয়নের নতুন খারায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। যদিও তাঁর শুরুটা ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন জুনিয়র অফিসার হিসেবে, কিন্তু নিজের মেধা, সততা আর ন্যায়নিষ্ঠা দিয়ে তিনি নিজের জায়গা তৈরি করে নিয়েছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশ গঠনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তাঁর অবদান ছিল অবিস্মরণীয়। কৃতজ্ঞ জাতি আজও তাঁর আত্মত্যাগ, দেশপ্রেম ও সততার কথা রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। সততার মাপকাঠিতে জিয়া আজও বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনন্য, অদ্বিতীয়। তিনি রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেই দেশের তখনকার ভেঙে পড়া আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ঠিক করতে হাতে নেন কঠোর পদক্ষেপ। দুর্নীতি, চুরি, ডাকাতির বিরুদ্ধে কঠিন অবস্থান নিয়ে অল্প কিছুদিনেই দেশে স্বস্তির বাতাস বইয়ে দেন। এরপর তিনি নজর দেন গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা করার দিকে। ১৯৭৫ সালের শেষের দিকে যশোরের উলশী গ্রাম থেকে শুরু করেন স্বনির্ভরতা আন্দোলন উদ্দেশ্য ছিল, দেশের ১৮ হাজার গ্রামকে একেকটা স্বনির্ভর ইউনিট হিসেবে গড়ে তোলা। এই উদ্যোগের সঙ্গে তিনি কৃষি, সেচ, গৃহনির্মাণ, বিদ্যুতায়ন, পরিবার পরিকল্পনা, স্বাস্থ্যসেবা এবং আইন শৃঙ্খলাকে একত্রিত করেন। খাদে। স্বনির্ভরতা ছিল তাঁর অন্যতম লক্ষ্য। তিনি চাচ্ছিলেন, দেশ যেন নিজের খাদ্য নিয়েই উৎপাদন করতে পারে। এজন্য খাল খনন করে শুষ্ক মৌসুমেও সেচের সুবিধা নিশ্চিত করেন। পতিত জমি চাষে বাবহার, এক জমিতে একাধিক ফসল চাষের মত উদ্যোগ নেন। তাঁর সময় প্রায় ৯০০ মাইল খাল খনন করা হয়, যা কৃষিতে একটা বিপ্লব ঘটায়। শুধু খাদ্য নয়, শিক্ষা নিয়েও তিনি ভাবতেন। দেশের স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে তিনি চালু করেন গণসাক্ষরতা কর্মসূচি। ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করে ১৯৮০ সালের ধং ফেরুল্যারি এই কর্মসূচি শুরু করেন। উদ্দেশ্য ছিল অল্প সময়ে যত বেশি সম্ভব মানুষকে অক্ষরজ্ঞান শেখানো। এই উদ্যোগে প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষকে সাক্ষরতা প্রদান করা সম্ভব হয়। তাঁর লক্ষ্য ছিল, ১৯৮৫ সালের মধ্যে দেশের সাক্ষরতার হার ৮০%-এপৌছানো। সব মিলিয়ে, জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন বাস্তববাদী নেতা যিনি দেশের প্রয়োজনে সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে জানতেন, আর সেটা কাজে লালিয়ে একটা বিচার, উন্নয়ন ও গণতন্ত্রভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। 

তাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে ছিল দেশপ্রেম, কর্তরানিয়া আর জনগণের প্রতি অগাদ শ্রদ্ধা। এই কারণেই তিনি আজর মানুষের হৃদয়ে জীবন্ত একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই গভীরভাবে ভাবতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, দেশের উন্নয়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা জনসংখ্যা বৃদ্ধি। মাই তিনি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণকে জাতির এক নম্বর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। তাঁর নেতৃত্বে চালু হয় “এক ছেলে, এক মেয়ে’ ধারণা, যা তখনকার দিনে ছিল একেবারে নতুন ও সাহসী সিদ্ধান্ত। এই নীতিকে সফল করতে তিনি ১৯৭৬ মালে দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলের গ্রাম ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ৩৮ হাজার পরিবার পরিকল্পনা কর্মী নিয়োগ করেন, যাতে পরিবার পরিকল্পনার বার্তা ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়। 

জিয়াউর রহমান কেবল ঢাকার চৌহদ্দির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি। তিনি অমতার বিকেন্দ্রীকরণ করে তা গ্রাম পর্যন্ত নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। তাই ১৯৮০ সালের ৩০ মে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রাম সরকার ব্যবস্থা চালু করেন। এরপর ২১ জুন গ্রাম সরকার বিল সহামদে উত্থাপন ও পাশ হয়। এর ফলে ছোটখাটো সমস্যাগুলো আর খানায়, কোর্টে নিতে হয় না, গ্রামেই সমাধান হয়ে যেত। মামলা মোকদ্দমার পরিমাণও অনেক কমে আসে। দেশের যুব সমাজকে সামনে রেখে তিনি নেন অনেক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। ১৯৭৮ সালের  জরিপ বলছে, কখন দেশের প্রায় ২২% মানুষই যুবক। কিন্তু তখন বেকারত্ব, মাদকাসক্তি আর হতাশা ছিল খুব সাধারণ ব্যাপার। এসব থেকে যুবকদের রক্ষা করে জাতি গঠনের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে ১৯৭৭ সালের ১৮-১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকার শেরে বাংলা নগরে দু’দিনব্যাপী জাতীয় যুব সম্মেলন করেন। সেই সম্মেলনে তিনি যুব সমাজকে আহবান জানান, ‘চলো, দেশ গড়ি, নিজেরাই নিজেদের প্রবিষ্যৎ তৈরি করি’। যুবকদের উন্নয়নের জন্য তিনি ১৯৭৮ সালে প্রথমবারের মতো “খুব মন্ত্রণালয় চালু করেন। এরপর প্রতিটি জেলায় যুব কমপ্লেক্স তৈরি করেন, যেখানে যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলা হতো যাতে তারা নিজেরাই কর্মসংস্থানের মাধ্যমে আত্মনির্ভর হতে পারে। 

শুধু উন্নয়ন না, গ্রামের নিরাপত্তা নিয়েও তিনি চিন্তা করতেন। স্বাধীনতার পর গ্রাম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দিকে তেমন নজর দেওয়া হয়নি। কিন্তু জিয়া বুঝেছিলেন, প্রামীণ শাস্তি ছাড়া দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব না। তাই ১৯৭৬ সালে তিনি গঠন করেন ভিডিপি (VILLAGE DEFENSE PARTY) ও গ্রাম প্রতিরক্ষা দল। আজ এই ভিডিপি দেশের গ্রামাঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আর শিশুদের জন্য তাঁর ভাবনাও ছিনা অনেক দূরদর্শী। তিনি মনে করতেন, আজকের শিশু মানেই আগামীর রাষ্ট্রনায়ক। তাই ১৯৭৭ সালের ১৫ জুলাই তিনি গড়ে তোলেন শিশু একাডেমি, যেখানে শিশুদের মেধা, সৃজনশীলতা ও সংস্কৃতিচার সুযোগ তৈরি হয়। এছাড়া তিনি শিশুদের প্রতিভা বিকাশে টেলিভিশনে চালু করেন জনপ্রিয় অনুষ্ঠান “নতুন কুড়ি”, যা তখনকার সমায় ব্যপক প্রশংসা পায়। জিয়াউর রহমান শুধু সেনাপতি বা  রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন না-তিনি ছিলেন একজন পরিকল্পনাবিস, একজন সমাজসংগঠক, আর একজন প্রকত দেশপ্রেমিক, যিনি শিশু, যুবত নারী, কৃষক সবার কথা ভেবেই দেশ গঠনের রূপরেখা তৈরি করেছিলেন। ভাঁর নেওয়া অনেক উদ্যোগ আজও বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। তাই তিনি শুধু ইতিহাসের পাতায় নন, মানুষের মান একজন জনন্দিত রাষ্ট্রনায়ক হয়ে বেঁচে আছেন। 

আরও পড়ুন

শহীদ জিয়াউর রহমান ছিলেন এমন একজন নেতা, যিনি শুধু দেশের ভেতরের উন্নয়ন নিয়েই ভাবেননি, বরং বহিঃবিশ্বেও বাংলাদেশের জনা সম্ভাবনার নতুন দরজা খুলে নিয়েছিলেন। তিনি দেশের জন্য নতুন রপ্তানি বাজার খুঁজে বের করেন এবং সেখানে গার্মেন্টস শিল্প হিমায়িত খাদ্য, হস্তশিল্প, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের জায়গা তৈরি করেন। আজ সেই পোশাক শিল্প দেশের প্রধান রপ্তানি খাতে পরিণত হয়েছে, সেটার ভিত্তি কিন্তু জিয়ার হাত ধরেই গড়ে ওঠে। একেবারে শিশু অবস্থার সেই শিল্পকে তিনি উৎসাহ, সুবিধা আর পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আজকের জায়গায় নিয়ে আসার পথ তৈরি করে দেন। তিনি বুঝতেন, দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী, আর তাদের কর্মক্ষমতা কাজে না লাগালে দেশের উন্নায়ন অসম্ভব। সেই উপলব্ধি থেকেই তিনি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করেন, যার মাধ্যমে নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করা, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা এবং সমাজে তাদের যথাযথ সম্মান নিশ্চিত করা হয়। নারীর ক্ষমতায়ন জিয়ার সময়ে এক প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। 

শুধু অধিক উন্নয়ন নয়, শহীদ জিয়া বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেণ নেন। তিনি প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় গঠন করে দেখিয়েছেন, ভবিষ্যতের বাংলাদেশ হতে হবে প্রযুক্তিনির্ভর এ আধুনিক চিন্তাশীল জাতির দেশ। ধর্মীয় ও সাধারণ শিক্ষার সমন্বয়। ঘটিয়ে মিয়া প্রতিষ্ঠা করেন ইসলামী বিশ্ববিদদেয়, যা নবীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারি বিশ্ববিদ্যাদায় হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এই প্রতিষ্ঠান ছিল ধর্মীয় মূল্যবোধসম্পন্ত্র, নৈতিকতায় গড়ে ওঠা সুনাগরিক তৈরির দৃষ্টান্তমূলক প্রচেষ্টা। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রেও জিয়া ছিলেন সাহসী ও দূরদর্শী। তিনি একেবারে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করেন। তখনতায় ইন্দো-সোভিয়েত বলয় থেকে বের হয়ে, তিনি চীন ও আমেরিকার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এর মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দেন। তাঁর ভূটনৈতিক দক্ষতায় তিনি মূললিম বিশ্বের আস্থা অর্জন করেন। জিয়াউর রহমানের পররাষ্ট্রনীতি শুধু সম্পর্কেই সীমাবদ্ধ ছিল না তিনি কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েরিলেন। তিনি ছিলেন ইরাক-ইরানযুদ্ধের মধ্যস্থতাকারী, তিনি আল-কুনসকমিটির সদস্য নির্বাচিত হন, ফিলিস্তিন ইস্যুতে দৃঢ় অবস্থান নেন, আর ওআইসি-কে কার্যকর সংগঠনে রূপান্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এই সবকিছু মিলিয়ে আজও মুসলিম বিশ্ব শহীদ জিয়াকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। 


তিনি প্রথম সরকারিভাবে বিদেশে শ্রমবাজার তৈরি করে বংলাদেশ থেকে কর্মী প্রেরণের ব্যবস্থা করেন যার ফলে মধ্যপ্রাতা ও অন্যান্য দেশে আজ লাখো প্রবাসী কর্মী বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ সহযোগিতা ও আঞ্চলিক ঐক্য তৈরির চিন্তা থেকে তিনি সার্ক (SAARC) প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। তাই তাঁকে “সার্কের স্বপ্নদ্রষ্টা” বলা হয়। সব মিলিয়ে বলা যায়, শহীদ জিয়াউর রহমান ছিলেন এমন এক রাষ্ট্রনায়ক, যিনি দেশের ভিভরে শক্ত ভিত গড়ায় পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে পেরেছিলেন। নেতৃত্ব, সততা, কৌশল আর দূরদর্শিতায় এক অপূর্ব মিশেন ছিলেন তিনি। এজন্যই তিনি আজও ইতিহাসে অম্লান, আর মানুষের জলয়ে অমত। 

অধ্যাপক ড. মোহাঃ হাছানাত আলী 

উপাচার্য, নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়। 

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঈদে ফিরছে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নতুন রূপে

বাংলাদেশের কৃষি গবেষণায় সহযোগিতা করবে চীন

সমাবেশে নারীকে লাথি মারা সেই জামায়াতকর্মী গ্রেফতার

হোয়াইট ওয়াশ এড়াতে পাকিস্তানকে ১৯৭ রানের সহজ লক্ষ্য দিল বাংলাদেশ

ইশরাকের শপথ সংক্রান্ত আদেশের কপি পেল ইসি

দুগ্ধজাত খাবার পুষ্টি নিশ্চিতের পাশাপাশি দৈহিক ও মানসিক বিকাশ করে- ডিসি হোসনা আফরোজা