ভিডিও মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট ২০২৫

কেন পড়ি দৈনিক করতোয়া ?

তরুণ বয়সে নিজ অফিসে কর্মব্যস্ত দৈনিক করতোয়া সম্পাদক মোজাম্মেল হক, ছবি: দৈনিক করতোয়া ।

মো: আশেকুল ইসলাম:  দৈনিক করতোয়া। ৫০ বছরে পা দিল। আমার যা বয়স, এই পত্রিকাটির বয়স তার চাইতে একটুখানি কম। সেই ছোটবেলা হতেই, বাবার কর্মসূত্রে বগুড়া শহরে আসবার পর হতেই, দৈনিক করতোয়ার সাথে নিত্যদিন দেখা-সাক্ষাত। আঞ্চলিক পত্রিকা তখন, বগুড়া জেলাসহ আশেপাশের উত্তরাঞ্চলের অনেক খবর সেখানে পাওয়া যায়। তখন অবশ্য বগুড়া হতে আরো পত্রিকা বের হতো। সে পত্রিকাগুলোও পড়া হতো দৈনিক বাংলাদেশ, দৈনিক উত্তরবার্তা, দৈনিক উত্তরাঞ্চল।

বাংলাদেশ, উত্তরবার্তায় লেখালেখির হাতেখড়ি হয়েছে বেশ খানিকটা কিশোর বয়সে নিজের নাম ছাপার অক্ষরে দেখার আনন্দই অন্য রকম। আসলে সেই ছোটবেলা থেকেই বিস্ময় লাগতো কীভাবে এত এত খবর সাংবাদিকরা সংগ্রহ করেন, এক দিনের মধ্যে লিখেন, ছাপাখানার কাজ কীভাবে চলে, কীভাবে এত মানুষের হাতে হাতে হকাররা ঝড়-বৃষ্টি-খরারমধ্যেও সাত সকালে পত্রিকা নিয়ে হাজির হন। করতোয়া পত্রিকার বিস্তৃতি এখন সারা দেশে তো বটেই, সেই সাথে বিদেশে বাংলা ভাষাভাষী যারাই আছেন, তাদের অনেকেরই প্রিয়। এই বয়সে যখন ঢাকায় বসে করতোয়া পড়ি, তখন মনে হয় অনেকের সাথে আমিও এই পত্রিকাটি পড়ছি। এ পত্রিকায় যেমন পাই বগুড়ার খবর, তেমনি পাই আশেপাশের খবর, উত্তরাঞ্চলের খবর। আর অনেকদিন হলে তো সারাদেশের খবর পাই। সেই সাথে আন্তর্জাতিক সংবাদ, খেলার সংবাদেও ভরপুর থাকে এই কাগজটি। আসলে দৈনিক করতোয়া পত্রিকা পড়লে মানুষের সফলতার কাহিনী যেমন জানতে পারি, তেমনি নানা বিষয়ে সচেতন হতে পারি। মানুষ কত বিচিত্র উপায়ে প্রতারিত হচ্ছে সেসব বিষয়ে যেমন জানতে পারি, তেমনি বাইক দুর্ঘটনা, হয়তো অটো রিক্সার সাথে ওড়না পেঁচিয়ে কেউ মারা গিয়েছেন সে খবরটি, সাপের কামড়ে মারা যাওয়ার খবর, পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার খবর এগুলো জানতে পারি, তাদের জন্য প্রার্থনা করতে পারি, সমব্যথী হতে পারি।

দৈনিক করতোয়া একটি জাতীয় পর্যায়ের পত্রিকা হয়েও বগুড়াকে ধারণ করে, উত্তরাঞ্চলকে ধারণ করে। সেই সাথে দেশের কোন অঞ্চলকেই কম গুরুত্ব দিয়ে দেখে না। হয়তো একটি খবর পড়ছি যেটি বগুড়ার বা বগুড়া জেলার আশেপাশে তার পাশেই একটি খবর আছে মাদারীপুরের, সাতক্ষীরার, বরিশালের বা মৌলভীবাজারের। আমার কাছে মনে হয়েছে দৈনিক করতোয়া চেষ্টা করে যত বেশি খবর ছাপানো যায়। ইদানিং আবার খেয়াল করছি, এই পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতায় লেখালেখি করছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাঁরা তাঁদের ফোন নাম্বার, ইমেইল ঠিকানা দিচ্ছেন পত্রিকা সেসব যত্ন করে ছাপাচ্ছে। যতদূর জানি, এই লেখকরা পাঠকদের কাছ থেকে ফোন পান, ইমেইল পান। দৈনিক করতোয়া হয়ে উঠেছে এভাবেই নবীন-প্রবীণলেখকদের একটি ভালো প্ল্যাটফর্ম। আসলে এই নবীনরাই একসময় এই জাতিকে নেতৃত্ব দেবেন। ছোটবেলা হতেই তারা যদি লেখালেখি করে আনন্দ পান, তাদের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারেন এর 
চেয়ে চমৎকার একটি প্ল্যাটফর্ম, একটি ব্যাপার আর কি হতে পারে? 

দৈনিক করতোয়া সেই কাজটি সহজ করে দিয়েছে। এই পত্রিকাকে আজকের দিনে নিয়ে আসার ব্যাপারে যার অবদান অতুলনীয়, অপ্রতিদ্বন্দ্বী, অনন্য সেই প্রকাশক সম্পাদক মোজাম্মেল হক লালু ভাইয়ের পরিশ্রমের কথা জেনেছি তাঁরই সুযোগ্য কন্যা করতোয়ার নির্বাহী সম্পাদক তাসলিমা হক রাকা’র নেওয়া সম্পাদক ও সম্পাদকের স্ত্রীর সাক্ষাতকারে। সারা রাত পত্রিকার কাজ করে এসে ভোরে আজানের সময় বাসায় এসে ভাত খাওয়া, খুলনা হতে কাগজ আনতে গিয়ে কাগজের ট্রাকের উপর ঘুমানো, হ্যান্ড কম্পোজের যুগে সারা দিন-সারারাত কাজ করবার পর ভোরে বিসিক এলাকা হতে ছাপানো কাগজ নিয়ে শহরের দিকে আসবার পথে ভ্যান সহ সম্পাদকের উল্টে পড়া, তখন কাগজ ভিজে যাওয়াতে চোখ দিয়ে টপটপ করে অশ্রু গড়িয়ে পড়া এসবই তরুণ প্রজন্মের জন্য উদ্দীপনামূলক কাহিনী হয়ে থাকবে সব সময়। এই মোজাম্মেল হক লালু ভাই যেন করতোয়া নামক জাহাজের একজন ক্যাপ্টেন। এই ক্যাপ্টেনকে সহযোগিতা করছেন একঝাঁক সংবাদকর্মী। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই দৈনিক করতোয়া পরিবার হয়ে উঠেছে আজ পাঠকের প্রিয়, আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। দৈনিক করতোয়া সকালে, যখনই পাঠক পান তখনই তার খবরের তৃষ্ণা মিটতে থাকে। সকালের চায়ের কাপের চুমুকের সাথে পড়তে একটু চোখ বুলিয়ে নিলে অনেকেরই মন তরতাজা হয়ে যায়। এটা ঠিক যে অনেক দুঃসংবাদ, দুর্ঘটনার খবর পড়লে মনটাও খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু তারপরেও আসলে নিজেকে হালনাগাদ রাখবার প্রয়োজন পড়ে। আশেপাশে কী হচ্ছে, আমি যেন প্রতারিত না হই, আমি যেন সাবধান থাকি, আমি যেন পিছিয়ে না পড়ে যাই এইজন্যই দৈনিক করতোয়ার মত একটি পত্রিকা আমাদের সঙ্গী হতে পারে। সংবাদপত্র এভাবেই আমাদেরকে সাবধান করে দেয় এভাবে চলো, ওভাবে নয়। দৈনিক করতোয়া ক্রমেই হয়ে উঠেছে উত্তরাঞ্চলের, দেশের মানুষের সুখ-দুঃখ, আশা-ভরসার প্রকাশের একটি মাধ্যম। দেশের সংবাদপত্র যত শক্তিশালী হবে, যতই এটি সরকারের সাথে,  রাষ্ট্রের সাথে, জনগণের সংযোগ স্থাপন করতে পারবে ততই সেই দেশ এগিয়ে যাবে। আমরা চাই আমাদের প্রিয় এই দৈনিক বেঁচে থাকুক যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী। এগিয়ে যাক আমাদের করতোয়া যেমন এগিয়ে চলেছে করতোয়া নদী, প্রবাহমান করতোয়া নদী, তেমনি প্রবাহমান থাকুক দৈনিক করতোয়া। 

দৈনিক করতোয়া গবেষণা করুক মানুষ কী পড়তে চান। দৈনিক করতোয়া গবেষণা করুক পাঠক কী ধরনের লেখা এখন পছন্দ করছেন, কী ধরনের কন্টেন্ট পছন্দ করছেন। যত বেশি গবেষণার মধ্য দিয়ে থাকবে, যত বেশি জনগণের সাথে সংযুক্ত থাকবে পত্রিকাটি ততই সমৃদ্ধ হতে থাকবে। এবং একসময় দেখা যাবে পৃথিবীর মধ্যেই একটি উদাহরণ হয়ে খাচ্ছে দৈনিক করতোয়া, যা শুরু হয়েছে উত্তরবঙ্গের প্রাণকেন্দ্র বগুড়া হতে সেটি হয়ে যাবে একসময় অনেক মানুষের আশা-ভরসাপ্রকাশের একটি শক্তিশালী মাধ্যম। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দৈনিক করতোয়া পরিবারের প্রত্যেকের জন্য

আরও পড়ুন

পাঠকদের পক্ষ হতে শুভ কামনা।

লেখক: আইইএলটিএস ও স্পোকেন ইংলিশ প্রশিক্ষক, গবেষক

 

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অবশেষে ৯ বছর পর জর্জিনাকে বিয়ের প্রস্তাব রোনালদোর

পাকিস্তান সেনাপ্রধানের বক্তব্যের জবাবে যা বলল ভারত 

বিক্রি হচ্ছে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পদ

হার্টের রিংয়ের নতুন দাম ১ অক্টোবর থেকে কার্যকর

এনসিপি নেতা সারজিসের বিরুদ্ধে মামলা

হাসপাতাল ছাড়লেন জামায়াত আমির